Nishat Tasnim- আমাদের দেহ ও মনের জন্য রাতের বিশ্রাম আর দিনের কাজই প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতি অনিয়ম পছন্দ করেনা। নিয়মের ব্যাঘাত ঘটলে তাই সমস্যা তৈরি হয় বৈকি!
‘সারকাডিয়ান রিদম’ (circadian rhythm) ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ (biological clock) বা বাংলায় ‘দেহ ঘড়ি” ব্যাপারটির কথা অনেকেরই জানা। বিশেষ করে ২০১৭ সালে জেফ্রি হল, মাইকেল রসব্যাশ এবং মাইকেল ইয়ং নামের তিনজন বিজ্ঞানী এই বিষয়টিকে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য ‘ফিজিওলজি ও মেডিসিন’ এই নোবেল পুরস্কার লাভের পরে বিষয়টি জীববিজ্ঞানের বাইরেও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। এই ‘দেহঘড়ি’ একটি শরীরবৃত্তীয় ব্যাপার যা মানুষের জেগে থাকা এবং ঘুমানোর বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করে। অন্ধকারে ঘুম পায়, আবার আলোতে জেগে ওঠে। অনেকটা সুইচ অন-অফ সিস্টেম। এই সুইচ অন-অফ আবার অন্যান্য শরীরবৃত্তীয় বিষয়গুলোর উপর প্রভাব ফেলে। তাই স্বভাবতই দেহ ঘড়িতে কোনও গোলমাল হলে তা আমাদের শরীরবৃত্তীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাবেই। কিন্তু সেটা কতটুকু?
গত কয়েক দশকে ‘সারকাডিয়ান রিদম’ নিয়ে প্রচুর বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে। ‘বায়োমেডিক্যাল সাইন্স’ এর জনপ্রিয় ডেটাবেজ ‘পাবমেড’ (PUBMED) এ খুঁজলে এর উপরে গবেষণা-প্রবন্ধ পাওয়া যায় ৭৫ হাজারেরও বেশি! এই বিপুলসংখ্যক গবেষণা এটাই দেখিয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে ‘সারকাডিয়ান রিদম’ এ ব্যাঘাত ঘটালে বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে পারে। এটা শুধু ‘ইনসোমনিয়া’ তে সীমাবদ্ধ নয়, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, পার্কিন্সন্স, এমনকি ক্যান্সারেও এর প্রভাব ভয়াবহ।
ক্যান্সার-বিজ্ঞানের একজন শিক্ষানবিশ হিসেবে আমি প্রায়ই বিষয়টা নিয়ে ভাবি। আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবন পদ্ধতি, সেটা হতে পারে খাবারদাবার, হতে পারে পরিবেশ দূষণ, হতে পারে দৈনন্দিন জীবনযাপনে অনিয়ম যেমন ‘সারকাডিয়ান রিদম’ কে না মেনে চলা, ইত্যাদি আমাদের অতি দ্রুত ভয়াবহ এক স্বাস্থ্য-সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ’ এর বার্ষিক সম্মলনে (২০১৯) যোগ দিতে গিয়ে মহান সব বিজ্ঞানী কিংবা গবেষকদের কথা শুনছিলাম। অন্যান্য অনেক বিষয়ের মধ্যে ‘সারকাডিয়ান রিদম অ্যান্ড ক্যান্সার’ এর উপরও দারুণ এক আলোচনা শোনার সুযোগ হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা সেখানে আলোচনা করছিলেন কীভাবে ‘সারকাডিয়ান রিদম’ এ ব্যাঘাত ঘটার কারণে একে নিয়ন্ত্রণকারী অন্যতম প্রধান জিন/প্রোটিন ‘ক্লক’ (CLOCK) এর এক্সপ্রেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং তা কিভাবে ক্যান্সার সম্পর্কিত জিন/প্রোটিন সমূহের (উদাহরণ, ‘মিক’ [MYC]) এক্সপ্রেশনের উপর প্রভাব ফেলে ক্যান্সারের পেছনে কাজ করে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা রাতের শিফটে কাজ করেন তাদের মধ্যে স্তন-ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রতি ৫ বছরে ৩-৪ শতাংশ বেড়ে যায়! এটা আসলেই অতি ভয়াবহ পরিসংখ্যান। একই ভাবে অন্যান্য ক্যান্সারেও ‘ক্লক’ বা অন্যসব জিন/প্রোটিনসমূহ যারা ‘সারকাডিয়ান রিদম’ এর সাথে সম্পর্কিত, তাদের অস্বাভাবিক এক্সপ্রেশন ভূমিকা রাখতে পারে।
কার্টেসিঃ Zaima Ferdous Neha