আমাদের স্বভাব, আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কি আমাদের জ্বিন দিয়ে সম্পূর্নভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় না-কি এর পেছনে সামাজিক এবং পারিপাশ্বিক অবস্থার একটা প্রভাব রয়েছে? সাধারনভাবে ধারনা করা হয়ে থাকে যে জ্বিন এবং পরিবেশ দু‘টোই আমাদের স্বভাব-চরিত্রের ওপর প্রভাব রাখে।
গত সপ্তাহে মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি গবেষনার ফলাফল বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে মানুষের স্বভাব এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পেছনে তৃতীয় আরেকটি ব্যাপার কাজ করে। জ্বাংক ডিএনএ বলে পরিচিত যেসব ডিএনএ কোনো কাজে লাগে না বলে ধারনা করা হ‘তো, সেই ডিএনএ মানুষের জ্বিনের অনুক্রম বা হিউম্যান জ্বেনোমের মধ্যে প্রবেশ কোরে সেখানে পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যার প্রভাব মানুষের স্বভাব এবং চরিত্রের ওপর পড়তে পারে বলে গবেষকরা ধারনা করছেন।
এই গবেষনায় মূল ভূমিকা রেখেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার সল্ক ইনস্টিটিউটের গবেষক প্রফেসর ফ্রেড গেইজ্ব। বিবিসির বিজ্ঞান বিভাগকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি জানান এই ডিএনএ কিভাবে কাজ করে৻ প্রফেসর গেইজ বলেন আমরা আমাদের পরীক্ষায় দেখতে পেয়েছি যে মানুষের ব্যাক্তিত্ব গঠনে জ্বিন এবং পরিবেশ ছাড়াও তৃতীয় একটি এলিমেন্ট প্রভাব রাখে। এই এলিমেন্টগুলো জ্বিনোমের মধ্যে থাকে, যেখানে ডিএনএ রয়েছে। এগুলো সচল, তারমানে এগুলো আলাদা আলাদা কোষের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে।
প্রফেসর গেইজ্ব এবং তার সহকর্মীদের গবেষনায় দেখা যায় যে জ্বেনেটিক পদার্থ শুরু থেকেই এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে। আর তার ফলে নার্ভাস টিস্যু বা মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব পড়ে। প্রফেসর ফ্রেড গেইজ্ব ব্যাখ্যা করে বলছেন যে এই জ্বিনগত পদার্থ যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরতে থাকে তা-ই না, এগুলো স্থায়ীভাবে জ্বিনোমের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে। আমাদের পরীক্ষায় যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তা থেকে দেখা যায় যে এগুলো আলাদা আলাদা কোষের কাজের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার জ্বিনের মধ্যে এই ডিএনএ প্রবেশ করেছে। তবে আমরা এটাও দেখতে পেয়েছি যে এগুলো কোনো সুনির্দিষ্ট জ্বিনকে টার্গেট করে না। এখানে বাছাইয়ের কোনো ব্যাপার নেই - পুরোটাই কাকতালীয় ভাবে হয়।
আর এই কাকতালীয় ব্যাপারের ফলেই কি তা‘হলে একজনের মস্তিষ্কের সঙ্গে অন্য আরেকজনের মস্তিষ্কের এত পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায়?
প্রফেসর ফ্রেড গেইজ্ব বলছেন যে আমাদের পরীক্ষায় যে ফলাফল আমরা পেয়েছি, তা থেকে মানুষের প্রকৃতি এবং বিভিন্ন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষনের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে আমাদের ফলাফল থেকে আমরা এই আভাস দিতে পারি যে আমাদের জন্মের সময় আমাদের নিওরনে একটা পরিবর্তন ঘটার ব্যবস্থা রয়ে গেছে। তবে একেকজনের ক্ষেত্রে সেই পরিবর্তন একেকরকম হবে। এবং এথেকেই বিভিন্ন মানুষের স্বভাবে পার্থক্য দেখা যেতে পারে।
এবং যে-সব ডিএনএ এই পরিবর্তন ঘটানোর জন্য দায়ী, এগুলোকে এতদিন অপ্রয়োজনীয় বলে ধরা হতো, এগুলোকে জ্বাংক ডিএনএ বলা হতো। অনেকে সেগুলোকে নীরব ডিএনএ বলেও অভিহিত করতেন। কিন্তু এগুলোর ভূমিকা এখন আর খাটো করে দেখা যাচ্ছে না৻
অনেক বিজ্ঞানীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে কিন্তু একটা ধারনা চালু রয়েছে যে এই তথাকথিত নীরব ডিএনএ আসলে নীরব নয়। মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী হয়তো নিজেদের স্বার্থে এগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে। অথবা তারা জ্বাংক ডিএনএ-র কাজের সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
প্রফেসর ফ্রেড গেইজ্ব জানালেন জ্বেনোমের মধ্যে এই ডিএনএর প্রবেশের ফলে মানুষের স্বভাবে কোনো পরিবর্তন হয় কি-না, তা নিশ্চিত কোরে প্রমাণ করার জন্য তাদের আরো অনেক গবেষনা করতে হবে। তিনি বলেন এখন তারা বিশদভাবে দেখার চেষ্টা করবেন মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ কিভাবে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে। তারা আরও দেখার চেষ্টা করবেন অন্য যে দু‘টি কারনে মানুষের স্বভাবে পরিবর্তন হয় বলে ধারনা করা হয়ে থাকে, সেই পরিবেশ এবং জ্বিনের কোনো প্রভাব, ডিএনএ-র যে সচলতা তারা লক্ষ্য করেছেন, তার ওপর রয়েছে কি-না।
সূত্র-- বিবিসি বাংলা