এশিয়ান ফ্লাশ
কখনো কোনো মুভি বা সিরিজে কোনো চরিত্রের চেহারা মদ খেতে খেতে লাল হয়ে গেছে, এমনটা দেখেছেন কি? Fresh off the boat কমেডি সিরিজটির সাথে পরিচিত থাকলে এই দৃশ্য চোখে পড়ার কথা।
মানুষ চড় খেলে গাল লাল হয়, লজ্জা পেলেও লাল হয়, কিন্তু মদ খেলে আবার চেহারা লাল হয় কিভাবে!
হয় হয়,মদ খেলেও চেহারা লাল হয়। সবার হয় না, মূলত এটি এশিয়ান, বিশেষত চীন,জাপান,কোরিয়ান মানুষদের মধ্যে দেখা যায়।
অ্যালকোহল গ্রহণের পর মুখমণ্ডল টমেটোর মতো লাল হয়ে যাওয়ার ঘটনাকেই বলে এশিয়ান ফ্লাশ। এশিয়ান মানুষদের জিনের সামান্য ত্রুটির ফলশ্রুতিতে এটি ঘটে।
মানুষ যখন অ্যালকোহল বা ইথানল গ্রহণ করে তখন তা আমাদের যকৃতে এসে বিযোজিত হয় এবং এসিটালডিহাইড নামক একটি ক্ষতিকর উপাদান গঠন করে। এসিটালডিহাইড অ্যালকোহল গ্রহণের পর মাথাব্যথা বা 'হ্যাংওভার' এর অন্যতম কারণ। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এসিটালডিহাইড দ্রুত ভেঙে নিরীহ এসিটেট এবং পানি গঠন করে ফেলে। এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখে Aldehyde dehydrogenase 2 (ALDH2) নামক জিন হতে উৎপন্ন এনজাইমটি।
কিন্তু, পূর্ব এশিয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের দেহে এনজাইম উৎপাদনকারী ALDH2 জিনটি রূপান্তরিত বা নিষ্ক্রিয় হয়, যার ফলে প্রয়োজনীয় এনজাইম উৎপাদিত হয় না। ফলে তাদের দেহে ক্ষতিকর এসিটালডিহাইড যকৃতে জমা হয়, যা এই এশিয়ান গ্লো বা ফ্লাশ এর মূল কারিগর।
রক্তে এসিটালডিহাইড এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণও হয়ে যেতে পারে। ফলে ওই ব্যাক্তির পুরো দেহেই রক্ত সংবহন বৃদ্ধি পায়। মুখমণ্ডল এবং শরীরের নানা জায়গায় র্যাশ বা লাল দাগ দেখা যায়, বিশেষত মুখমণ্ডল চিংড়ি বা টমেটোর মতো লাল হয়ে উঠে। এশিয়ান ফ্লাশ মূলত ওই ব্যাক্তিদের শরীরের একটি প্রতিবর্তী প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীর বোঝাতে চায় যে এখন অ্যালকোহল গ্রহণ বন্ধ করা উচিত।
অনেকেই এশিয়ান ফ্লাশের প্রতিষেধক হিসেবে বিভিন্ন এন্টিহিস্টামিন ঔষধ ব্যবহার করে। এতে স্বল্পমেয়াদী সুফল আসলেও দীর্ঘ মেয়াদে অনেক বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে। কারণ এন্টিহিস্টামিন নিলে তাদের দেহের স্বাভাবিক প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাধ্যমে সচেতন করার প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তারা মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করে। তখন এই অতিরিক্ত অ্যালকোহল তাদের জন্য কখনো দীর্ঘ মেয়াদী হ্যাংওভার, আবার কখনো অ্যালকোহলের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে।
বাঙালিদের স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসের অনেক খাবারই কিন্তু বি্যোজিত হয়ে অ্যালকোহল উৎপাদন করে, যেমনঃ ভাত বা শর্করাজাতীয় খাবার। এজন্যই দুপুরে ভাত খাওয়ার পর অনেকেরই ভীষণ ঘুম পায়। এই অ্যালকোহলও যকৃতে গিয়ে বিযোজিত হয়। তবে এর পরিমাণ তুলনামূলক অনেক কম হওয়ায় দেহে তেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না।
ক্রেডিট: মোঃতৌফিক-ই-ইলাহী