এই প্রশ্নের সবচেয়ে পরিচিত উত্তর হলো প্রতিদিন ৭-৮ গ্লাস পানি পান করা। বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে এটি বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক গঠন এবং পরিবেশ ভেদে সকলের জন্য প্রযোজ্য কিনা? বহুল প্রচলিত এই সার্বজনীন ধারণা আসলেই যথার্থ নাকি গুজব?
এই ৭-৮ গ্লাস পানি পান করার ধারণাটি সঠিক কিনা যাচাইয়ের আগে এটি কোথা থেকে এসেছে জানতে হবে। ধারণাটির উৎপত্তি হয়েছে ৮×৮ রুল থেকে। এই রুলের মতে প্রত্যেককে দৈনিক ৮ গ্লাস পানি গ্রহণ করতে হবে। বহু গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরিক্ষার পরে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে দৈনিক ৮ গ্লাস পানি পানের নিয়মটি যথার্থ নয়। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ এই নিয়মের লঙ্ঘন করলেও কোন সমস্যা হবেনা। যতটুকু প্রয়োজন মনে হবে ততটুকু পানি পান করলেই চলবে। অর্থাৎ, তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করতে হবে। কেননা,প্রতিদিনের খাবার, শাক-সবজি, ফলমূল থেকেও আমার দেহ প্রচুর পানি পেয়ে থাকে।
তাহলে প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিত?
এই প্রশ্নের কোন নির্দিষ্ট উত্তর নেই। এটি ব্যক্তির শরীরের গঠন,কাজ এবং পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তির চাহিদাভেদে পানির চাহিদাও কম বেশি হয়। যেমন একজন ক্রীড়াবিদ অথবা যাকে রোদবৃষ্টিতে সারাদিন বাইরে থাকতে হয়, তার যতটা পানি প্রয়োজন সাধারণ মানুষের ততটা পানির প্রয়োজন নেই। একই ভাবে সাধারণ মহিলার তুলনায় যিনি ছোটশিশুকে স্তনদান করেন তার পানির চাহিদা বেশি। আবার গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিকভাবেই সকলের পানির চাহিদা বেশি থাকে। তাছাড়া, বয়সভেদেও পানির চাহিদায় ভিন্নতা থাকে। তাই জবরদস্তি আট গ্লাস পানি পান না করে পিপাসা অনুভব করলে তবেই পানি পান করুন।
এছাড়া, চাহিদার বাইরে গিয়ে প্রতিদিন আটগ্লাস পানি গ্রহণ কিছু কিছু লোকের স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে উঠতে পারে। অতিরিক্ত পানি পান বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত প্রসাব, ক্লান্তির এবং মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে প্রত্যেকের দৈনিক ৭-৮ গ্লাস পানি খাওয়ার নিয়মটার কোন শক্তপোক্ত কারণ এবং ভিত্তি নেই। উল্টো অনেকের জন্যেই এটি বিভিন্ন ক্ষতির কারণ। তাহলে এটাকে বরং গুজবের খাতাতেই রাখা যাক।