মা-বাবার রক্তের গ্রুপ এক হলে কি সন্তানের কোনো সমস্যা হয়? প্রতিনিয়ত এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় চিকিৎসকদের। স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপের মিল হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বিবাহগামী নারী-পুরুষ এবং নবদম্পতির মনে তাই ভয় আর সংশয়। আমরা জানি, রক্তের গ্রুপ প্রধানত চারটি এ, বি, এবি, ও।
প্রতিটি আবার পজিটিভ ও নেগেটিভ হতে পারে। এ-পজিটিভ, এ-নেগেটিভ এরকম। অনেকেরই ধারণা, মা-বাবার রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তানের নানা সমস্যা হয়। আসলে ধারণাটি অমূলক। তবে মায়ের নেগেটিভ এবং বাবার পজিটিভ গ্রুপ থাকলে সন্তান অনেক সময় পজিটিভ রক্তের গ্রুপ পায়। আর সমস্যাটি এখানেই। কারণ মায়ের নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ আর শিশুর পজিটিভ গ্রুপ হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
আবার মায়ের গ্রুপ ও (পজিটিভ বা নেগেটিভ) এবং শিশুর এ বা বি (পজিটিভ বা নেগেটিভ) হলেও কিছু সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাবার গ্রুপ কি, তাতে কিছু যায় আসে না। মূলত মা এবং সন্তানের গ্রুপ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা। তা হলে সহজ ব্যাপারটা এমন, বাবা-মা দুজনেই পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ, কোনো সমস্যা নেই। বাবা নেগেটিভ, মা পজেটিভ তাতেও কোনো সমস্যা নেই। তবে বাবা পজিটিভ এবং মা নেগেটিভ হলে প্রথম সন্তান সাধারণত সুস্থ হয় কিন্তু দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী সন্তানের সমস্যা হতে পারে (যদি সন্তানরা পজিটিভ হয়)।
অন্যভাবেও বলা যেতে পারে। যেমন স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজেটিভ হয়, তা হলে স্ত্রীর পজেটিভ হতে হবে। স্ত্রীর নেগেটিভ হলেই কেবল সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা। এ ক্ষেত্রে স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে এ সমস্যা এড়ানো যেতে পারে। যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয়, তা হলে স্ত্রীর পজেটিভ বা নেগেটিভ যে কোনো একটি হলেই হবে। তবে ভয়ের কিছু নেই। রয়েছে সহজ সমাধান। বাবার গ্রুপ পজিটিভ এবং মা নেগেটিভ হলে, জন্মের পরপরই শিশুর গ্রুপ পরীক্ষা করাতে হবে।
যদি নেগেটিভ হয়, তবে কিছুই করার দরকার নেই। আর যদি পজিটিভ হয়, মাকে একটি অ্যান্টি-ডি ইনজেকশন ডেলিভারির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দিয়ে দিলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আরেকটি কথা, অনেকের ধারণা, বাবা-মায়ের রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হয়। এটাও ভুল এবং অযৌক্তিক ধারণা। কারণ থ্যালাসেমিয়া রোগ ক্রোমোজোম অ্যাবনর্মালিটি থেকে হয়। রক্তের গ্রুপের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
Collected