আমাদের কাছে চোখের অসুখ নিয়ে যারা আসে তাদের মধ্যে অনেকের একটি কমন সমস্যা `চোখে ঝাপসা দেখা`।
চোখে ঝাপসা দেখার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। অনেকে নিয়মিত চশমা পড়েন। যদি চশমা ভেঙ্গে যায় তাহলে তারা নতুন চশমা নিতে আসে। আবার যেসব বাচ্চারা স্কুলে ভর্তি হবে, আমরা তাদের বাবা মায়েদের বলি, স্কুলে ভর্তি করানোর আগে যেন অবশ্যই একবার চেকআপ করিয়ে নেয়।
কিন্তু সাধারণত বাবা মায়েরা আনে না। কিন্তু স্কুলে ভর্তি করানোর পর দেখা যায় তারা ব্ল্যাক বোর্ডের লেখা দেখতে পারছে না। পাশের সহপাঠীর খাতা দেখে লিখছে। বা ব্ল্যাক বোর্ডের কাছে গিয়ে লেখাটা দেখে আসছে। তখন বাবা মায়েরা আমাদের ( ডাক্তার) কাছে নিয়ে আসলে আমরা পরীক্ষা নীরীক্ষা করে পাওয়ার লাগলে পাওয়ার দিয়ে দিই।
বয়স যাদের ৪০ পেরিয়েছে, বই পড়তে তাদের অনেকের সমস্যা হয়। অনেকে আসেন যারা সুঁচে সুতা ঢুকাতে পারছেন না এমন। আবার অনেকে পত্রিকা পড়তে পারছেন না বা মাছের কাঁটা বাছাই করতে পারছেন না বা মোবাইলে নাম্বার দেখতে পারছে না এমন। এমন রোগীদের আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকি।
চোখে ছানি পড়লেও ঝাপসা দেখে। একটা ক্যামেরার সঙ্গে যদি আমরা চোখকে তুলনা করি, ক্যামেরার লেন্স ঘোলা হয়ে গেলে আপনি যতোই চশমা পাল্টান কোন লাভ হবে না। তেমনি ছানি পড়লেও দৃষ্টি পরিষ্কার হবে না। তাই অপারেশন করলে আগের দৃষ্টি ফিরে আসে।
আগে বলা হতো ছানি শক্ত হয়ে গেলে অপারেশন করা ভাল, এখন কিন্তু সেটা বলা হচ্ছে না। এখন ফ্যাকো মাধ্যমে অপারেশন হচ্ছে। ছোট্ট একটা অপারেশন। ছোট্ট একটা ছিদ্র করে ছানিটা গলিয়ে বের করে নিয়ে আসা হয়। তাই যখনই রোগী বুঝবে, তিনি ঝাপসা দেখছেন বা ভাল দেখছেন না তখনই অপারেশন করে নেওয়া ভাল। এটার জন্য এখন অপেক্ষা করার দরকার হয় না।
চোখের রেটিনাতে কোন সমস্যা থাকলেও চোখে ঝাপসা দেখা যায়। এক্ষেত্রে রোগীরা আমাদের (ডাক্তার) বলে, চোখে হঠাৎ করে কম দেখছে। বা আস্তে আস্তে চোখের দৃষ্টি কমে আসছে। চোখকে যদি আমরা ক্যামেরার সঙ্গে তুলনা করি তাহলে `রেটিনা` হচ্ছে ক্যামেরার ফিল্ম। যেটা দিয়ে ছবিটা তৈরী হয়। তাই রেটিনা`য় সমস্যা থাকলে চোখের অন্য সকল কিছু ভাল থাকলেও দৃষ্টি ভাল থাকেনা।
রেটিনা`র সমস্যার অনেক কারণ থাকতে পারে। ডায়াবেটিস, প্রেসার যাদের থাকে, বা যাদের চোখে প্রেসার আছে যেটাকে `গ্লুকোমা` বলা হয়, তাহলে রেটিনা`র সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমরা বলি, যাদের ডায়াবেটিস বা প্রেসার আছে তারা যেন বছরে অন্তত একবার চেকআপ করে।
লেখক: চক্ষু বিশেষজ্ঞ, eye lid, orbit, squint & oculoplastics sergeon. কনসালটেন্ট, বাংলাদেশ আই হসপিটাল এন্ড বাংলাদেশ আই কেয়ার হসপিটাল।