যোগ
দুই বা ততোধিক সংখ্যাকে একসাথে গণনা করতে যে চিহ্ন ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তা-ই যোগ চিহ্ন। আরও বাড়ানোর নিমিত্তেই যোগ করার প্রক্রিয়া। যোগ শব্দের আগমন ল্যাটিন শব্দ Plus থেকে, যার অর্থ 'আরও'। ল্যাটিন 'Et' থেকে & (And)-এর আগমন। এই 'and' এর পরিবর্তেই '+' চিহ্ন ব্যবহার করা শুরু হয়। যতদূর জানা যায়, যোগ চিহ্ন হিসেবে ‘+’ এর ব্যবহার শুরু হয় চতুর্দশ শতাব্দীতে। নিকোলাস ওরেসমে তার 'অ্যালগোরিসমাস প্রোপোর্শনাম'-এ প্রথমবার '+' চিহ্ন ব্যবহার করেন বলে জানা যায়। তবে সে সময়েই এটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে, এমনটা নয়। অনেকেই আরও অন্য অনেক ধরনের প্রতীক ব্যবহার করতেন। যেমন, ইতালিয় গণিতবিদ ‘লুকা প্যাসিওলি’ যোগ বোঝাতে ব্যবহার করতেন ইংরেজি 'p' এর উপর একটি ছোট দাগ দিয়ে। '+' চিহ্নের প্রচলন ব্যপকভাবে ঘটে জোহানেস উইডম্যান নামক জার্মান গণিতবিদ তার 'মার্সেন্টাইল অ্যারিথমেটিক' বইয়ে এ চিহ্ন ব্যবহার করলে।
বিয়োগ
বাদ দেওয়াকেই বিয়োগ বোঝায়। 'বিয়োগ' শব্দের উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ 'minus' থেকে, যার অর্থ 'less' বা কম। লুকাস প্যাসিওলি যোগের মতো বিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু 'p'-এর স্থলে 'm' ব্যবহার করতেন। তবে বিয়োগ চিহ্ন হিসেবে ‘–‘ এর ব্যবহার ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে, তা স্পষ্ট জানা যায় না। খুব সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দীতেই যোগের সাথে বিয়োগেরও উৎপত্তি। বিয়োগ ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে 'মার্সেন্টাইল অ্যারিথমেটিক' বইয়ে এর ব্যবহারের পরেই। উল্লেখ্য, ইংরেজদের কাছে যোগ এবং বিয়োগ চিহ্ন প্রথম তুলে ধরেন রবার্ট রেকর্ড’ তার বই 'দ্য ওয়েটস্টোন অব উইট'-এ ব্যবহারের মাধ্যমে।
গুন
(×) কিংবা (.); বর্তমান সময়ে গুন বোঝাতে এই দুটি চিহ্নই বহুল ব্যবহৃত। যদিও দ্বিতীয়টির ডট প্রোডাক্ট হিসেবে আলাদা ব্যবহার আছে, তবে প্রথমটিই অধিক ব্যবহৃত হয় সাধারণ গুন বুঝাতে। এ চিহ্নের ব্যবহার শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দীতে। বলা হয়ে থাকে, ইংরেজ গণিতবিদ উইলিয়াম অটরেড সর্বপ্রথম এ চিহ্নের ব্যবহার করেন। তবে ঠিক কী কারণে এটির মাধ্যমেই গুন প্রক্রিয়াকে চিহ্নায়িত করা হয়, তা নিশ্চিত নয়। বলা হয়ে থাকে, তিনি সেন্ট এন্ড্রু ক্রস থেকে এর ব্যবহার করেন।
আবার অনেকেরই ধারণা, যেহেতু গুন মূলত অনেক বড় যোগ প্রক্রিয়াকেই সহজতর করেছে, তাই যোগ চিহ্নকেই আড়াআড়িভাবে ব্যবহার করে গুন চিহ্নের ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। তবে এটি ইংরেজি 'x'-এর সাথে মিলে যাওয়ায় জার্মান দার্শনিক ও গণিতবিদ গটফ্রিড এ চিহ্নকে প্রত্যাখ্যান করে শুধু একটি ডট ব্যবহার করেন, যা এখনো অনেকটাই প্রচলিত।
ভাগ
ভাগ চিহ্ন হিসেবে আমরা অনেক চিহ্নের ব্যবহারই দেখে থাকি এই একবিংশ শতাব্দীতেও। এদের মধ্যে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে '÷', '/', 'x) y (z' এবং '।'; সবশেষে উল্লেখ করা ধরনটির ব্যবহারই হয়তো সবার আগে শুরু হয়েছে, আনুমানিক ত্রয়োদশ শতাব্দীরও আগে। তবে ব্যবহারে ব্যাপকতা লাভ করে ষোড়শ শতাব্দীতে এসে। এটি সামনে আনে আরবীয়রা, এবং পরবর্তী সময়ে ইয়োরোপীয় গণিতবিদ ফিবোনাচ্চি এটি ব্যবহার করেন ষোড়শ শতাব্দী। ‘/’ চিহ্ন দিয়ে ভাগ বোঝানো শুরু হয় ১৮৪৫ সালে ডি মরগানের হাত ধরে।
তবে বহুল প্রচলিত ভাগ চিহ্ন (÷)-এর ব্যবহার প্রথমবার করেন সুইস গণিতবিদ জোহান রাহন, ১৬৫৯ সালে তার Teutsche Algebra নামক বইতে। যদিও এই চিহ্নটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই বর্তমানে। ভাগ চিহ্ন হিসেবে ‘/’-এর ব্যবহারই বর্তমান সময়ে আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত।
©রোর মিডিয়া