রহস্যের প্রতি আকর্ষণ থাকে না এমন মানুষ হয়তো কমই পাওয়া যাবে। মানুষ আসলে সেই সব জিনিসের প্রতিই আকর্ষণ অনুভব করে থাকে যার মধ্যে রহস্য, ভয়, রোমাঞ্চকর ব্যাপারগুলো একটু বেশি থাকে। তেমনই একটি বিষয় হচ্ছে ‘এনাবেলা ডল’ নামে একটি অভিশপ্ত পুতুল এর বাস্তব ঘটনা।
সাধারণত এনাবেলা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। এটি তৈরি হয় ১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যে বা ইংল্যান্ডে। একজন নারী তার কিশোরি মেয়েকে একটি পুতুল গিফট করেন। সে মেয়েটির নাম ছিল ডোনা। ডোনা শৈশব থেকেই পুতুলের সঙ্গে খেলতে ভালবাসে। তাই ডোনার মা জন্মদিনে ডোনাকে একটি পুতুল উপহার দেয়।সে কলেজে পড়াকালীন সময়েও পুতুলকে ভালোবাসতো, তার কাছে একাধিক পুতুলের সংগ্রহ ছিল। ডোনা তার নতুন পুতুলটির নাম দেয় ‘এনাবেলা’। যখন ডোনাকে তার মা পুতুলটি দিয়েছিল তখন ডোনা তার বন্ধু এনজির সঙ্গে নার্সিং এ পড়াশোনা করত। ডোনা এবং এনজি একই এপার্টমেন্টে থাকতো একসঙ্গে। পুতুলটিকে নিজের এপার্টমেন্টে রাখার কিছুদিনের মধ্যেই ডোনা কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা উপলব্ধি করতে থাকে। ডোনা দেখতো যে এনাবেলাকে কলেজে যাবার আগে যেখানে রেখে যেত কলেজ থেকে ফিরে এসে সেখানে পাওয়া যেত না। হয়তো তাকে রাখা হত বিছানাতে আর সে চলে যেত সোফাতে। ডোনা এবং এনজি তাদের কল্পনা ভেবে বিষয়টি নিয়ে আর চিন্তা করে না। এর কিছুদিনের মধ্যেই ডোনার এক বন্ধু লো তাদের এপার্টমেন্টে শিফট হয়ে যায়।এরই মধ্যে ডোনা একদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে এনাবেলের হাতে একটি চিরকুট দেখতে পায়, সেখানে লেখা ছিল ‘হেল্প মি’। ডোনা সেটিকেও কারো ঠাট্টা ভেবে নেয় এবং বিষয়টিকে ভুলে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু বিষয়টি ভুলবার আগেই ডোনা একদিন এনাবেলার দিকে তাকিয়ে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করে কাছে যেতে সে দেখে এনাবেলা পুতুলের চোখে রক্ত। যেন সে কান্না করছে, খুব কষ্ট অনুভব করছে। ডোনা এবং তার বন্ধুরা বিষয়টিকে আর তুচ্ছ না ভেবে তারা প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর এর সাহায্য নিবে বলে ঠিক করে।তারা বুঝতে পেরেছিল বিষয়টি মোটেই স্বাভাবিক নয়। তারা তাদের বাসার কাছেই একজন প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর এবং ক্রিষ্ট এর কাছে নিয়ে যায়। তারা দুইজনই এনাবেলাকে পরীক্ষা করে এনাবেলার মধ্যে একটি আত্না পায়। সে আত্না তাদের জানায় যে, আত্নাটি ডোনা এবং এনজির সঙ্গে থাকতে চায় এবং তাদের ভালোবাসা পেতে চায়। আত্নাটির বয়স মাত্র ৭ বছর। যেহেতু ডোনা এবং এনজি নার্সের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল তাই তাদের মন ভর্তি ছিল দয়ালু।তারা ঠিক করে এনাবেলাকে তাদের সঙ্গেই রাখবে এবং আরেকটি কারণ ছিল তারা প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর এবং ক্রষ্টের কথাটা ততটা বিশ্বাস করতে পারেনি। কিন্তু লিও বিষয়টিকে মোটেও হালকা ভাবে নেয়নি। লিও এর মতে এনাবেলা ভীষণ ডেঞ্জেরাস পুতুল এবং সে পুতুলটিকে পছন্দও করত না। কিন্তু ডোনা এবং এনজির কাছে পুতুলটি ছিল খুব আদরের এবং ভালো। কিন্তু তাদের এ ধারণা পাল্টে দিল এনাবেলা।
একদিন রাতে লিও এর হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং সে দেখল তার পা কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে এবং এনাবেলা পুতুলটি তার পায়ের দিক থেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে। এতে লিও খুব ভয় পেলেও অন্যরা বিষয়টিতে ততটা গুরুত্ব দিল না। একদিন লিও, ডোনা এবং এনজি তাদের বাড়িতে একা ছিল এবং একই সময় তারা দুজনেই ভীষন জোড়ে ডোনার একটি চিৎকার শুনতে পেল, তারা দৌড়ে ডোনার রুমে ঢুকে দেখতে পেল ডোনা তো নেই, রয়েছে শুধু এনাবেলা পুতুলটিলিও তখনই পুতুলটির সামনে যায় এবং তার বুকে খুব জোড়ে একটা চাপ অনুভব করে, তার মনে হয়েছিল তাকে সামনে থেকে কেউ চাপ দিচ্ছে যেন সে পুতুলটি থেকে দূরে সরে যায়। এই ঘটনাটির পরে লিও এবং এনজি দেখে তাদের জামা রক্তে ভর্তি এবং লিও এর বুকে ৭টি বড় বড় ক্ষত বিক্ষত দাগ দেখা যায়।
এই ঘটনাটির পর সেই সময়কার বিখ্যাত ফাদার কুককে ডাকা হয় পুতুলটিকে দেখানোর জন্য। ফাদার কুক একজন প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটরও ছিলেন। ফাদার পুতুলটিকে পরীক্ষা করে বলেন এনাবেলার মধ্যে মোটেও কোনো ভালো আত্মার বাস নেই। এনাবেলার মধ্যে রয়েছে অতি ভয়ংকর একটি আত্মা। ফাদার কুক বলেন আত্মাটির বয়স মোটেও ৭ বছর ছিল না এবং আত্মাটি তাদের ভালোবাসাও পেতে চায় না। আত্মাটি তাদের সঙ্গে নাটক করেছেএটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ডোন এবং এনজির শরীরে প্রবেশ করা। ফাদার কুক একজন বিখ্যাত ধর্মযাজক হয়েও এনাবেলার আত্মাটিকে ভয় পেয়েছিলেন। এনাবেলা পুতুলের আত্মাটিকে অবহেলা করাতে পরবর্তীতে অনেকের অদ্ভুত ভাবে মৃত্যু হয়। আরো জানা যায়, যিনি এই অদ্ভুত পুতুলটি তৈরি করেছিলেন তার মৃত্যু এর তৈরির কারণেই হয়েছিল। তাইতো এটাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে অভিশপ্ত পুতুল।।।
সূত্র- ডেইলি বাংলাদেশ