মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গের ঘাটতি দূর করতে সর্বোচ্চ জিনগত সংস্কার করা ৩৭টি শূকরশাবকের জন্ম দেওয়া হয়েছে। মার্কিন গবেষকেরা এ কথা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা শূকরের ডিএনএতে লুকিয়ে থাকা ভাইরাসগুলো সফলভাবে অপসারণ করে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে ওই ৩৭টি শূকরশাবকের জন্ম দেন। এতে শূকরের অঙ্গ মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বড় বাধা দূর হলো।
জিন সংস্কার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইজেনেসিসের বিজ্ঞানীরা জানান, মানুষের শরীর শূকরের অঙ্গকে মানিয়ে নিতে পারে না। এর সমাধান করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শূকরের ডিএনএ থেকে ভাইরাসগুলো মুক্ত করার বিষয়টি প্রথম চাঞ্চল্যকর একটি পদক্ষেপ।
‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। শূকরের ত্বকের কোষ নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। ওই কোষ পরীক্ষা করে দেখা যায়, শূকরের জেনেটিক কোডে ২৫টি পার্ভস (পরসিন এনদোজেনাস রেট্রোভাইরাস) লুকানো রয়েছে। এরপর শূকরের ওই কোষকে মানুষের কোষের সঙ্গে মেশানো হয়। তারপর দেখা যায়, শূকরের কোষে থাকা ওই ভাইরাসগুলো মানুষের টিস্যুগুলোকে সংক্রমিত করছে।
এরপর গবেষকেরা জিন সংস্কার প্রযুক্তি সিআরআইএসপিআর ব্যবহার করে শূকরের কোষ থেকে ওই ২৫টি পার্ভস দূর করেন। এরপর ক্লোন প্রযুক্তি (যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথম ক্লোন প্রাণী ডলি নামের ভেড়ার জন্ম দেওয়া হয়েছিল) ব্যবহার করে সংস্কার করা কোষগুলো থেকে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। এই জটিল প্রক্রিয়াতে কিছু ঘাটতি থাকলেও ওই ভ্রূণ থেকে ৩৭টি সুস্থ শূকরশাবকের জন্ম হয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও ইজেনেসিসের ডা. লুহান ইয়াং বিবিসিকে বলেন, ‘এই শাবকগুলো প্রথম পার্ভমুক্ত শূকর। এ ছাড়া এরা জিনগত সর্বোচ্চ সংস্কার করা প্রাণী।’
ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে অঙ্গ বা টিস্যু প্রতিস্থাপনকে বলা হয় জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন। এই জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন যদি কার্যকর হয়, তবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা দূর হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে এক লাখেরও বেশি লোকের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যে সাড়ে ছয় হাজার মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিবিসিকে ডা. ইয়াং বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি যে এখনো আমরা গবেষণা ও উন্নয়নের প্রথম ধাপে রয়েছি। আমাদের দুঃসাহসী লক্ষ্য হলো বিশ্বে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গের অভাব দূর করা।’
অন্য প্রাণীদের মধ্যে বিশেষত শূকরের অঙ্গই মানুষের শরীরে জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন করা সম্ভব বলে আশা করা হয়। কারণ, শূকরের অঙ্গের আকার মানুষের অঙ্গের মতোই। এ ছাড়া এই প্রাণীর জন্মহারও বেশি।
শূকরের ভাইরাস দূর করার মধ্য দিয়ে কেবল অর্ধেক চ্যালেঞ্জ দূর হলো। কারণ, একজন মানুষের অঙ্গ অপর একজন মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় না। মার্কিন গবেষকেরা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে শূকরের অঙ্গ যাতে করে মানিয়ে নিতে পারে, সে জন্য আরও জিনগত সংস্কারের চিন্তা করছে।
কেন্ট‍ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকসের প্রফেসর ড্যারেন গ্রিফিন বলেন, ‘জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশনকে বাস্তবে সম্ভবপর করে তুলতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এ জন্য আরও অনেক বাধা পেরোতে হবে।’
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইয়ান ম্যাক কনেল বলেন, রেট্রোভাইরাস দূর করে শূকরছানা জন্মদানের বিষয়টি জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশনকে সম্ভবপর করে তোলার প্রথম পদক্ষেপ। এখন এই প্রচেষ্টা নিরাপদ অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে সম্ভবপর করে তুলতে পারে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।