স্কিজোফ্রেনিয়া শব্দের অর্থ ‘split mind’ বা ‘দ্বিখণ্ডিত মন’। এটি এক ধরনের জটিল মানসিক রোগ। এই রোগকে একসময় শয়তান বা ভূতে পাওয়া হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হতো। এই রোগে আক্রান্ত মানুষের আলাদা একটি কাল্পনিক জগৎ থাকে, তারা বাস্তব জীবনের কোন ঘটনাকে অতিপ্রাকৃত ও অবাস্তবভাবে ব্যাখ্যা দেন। স্কিজোফ্রেনিয়া রোগীদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়, বেশিরভাগ রোগীদেরই হ্যালুসিনেশন হয়।
বাংলাদেশে স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ০.২৪% (প্রায় ৪ লক্ষ) মানুষ এবং পুরুষের চেয়ে নারীদের মাঝে স্কিজোফ্রেনিয়া রোগের হার বেশি। স্কিজোফ্রেনিয়া কয়েক ধরনের হতে পারে, এগুলো হলোঃ
▪️Paranoid Schizophrenia: প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মাঝে ভ্রম, অডিটরি হ্যালুসিনেশন, সন্দেহপ্রবণতা দেখা যায়। তারা ভাবতে থাকে যে কেউ তাদেরকে দেখছে, ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
▪️Disorganized Schizophrenia: ডিজঅর্গানাইজড স্কিজোফ্রেনিয়া এর কারণে মানুষের কথা, চিন্তাধারা ও কাজে অমিল দেখা যায়। বেশিরভাগ সময়েই তারা পরিস্থিতির বিপরীত আচরণ করেন। এর ফলে তাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
▪️Catatonic Schizophrenia: ক্যাটাটোনিক স্কিজোফ্রেনিয়া তে আক্রান্ত মানুষ হঠাৎ কোন পরিস্থিতিতে কথা বলা ও অন্যান্য শারীরিক কার্যক্রম কয়েক ঘন্টার জন্য বন্ধ করে দেয় বা একই কথা বার বলতে থাকে।
▪️Residual Schizophrenia: রেসিডিউয়াল স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মাঝে এই রোগের লক্ষণ তেমনভাবে প্রকাশ পায়না। তাদের মাঝে অনুভূতি, বেঁচে থাকার আগ্রহের অভাব দেখা দেয়।
▪️Undifferentiated Schizophrenia: এই ধরনের স্কিজোফ্রেনিয়া তে আক্রান্ত মানুষের মাঝে একাধিক ধরনের স্কিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ একসাথে দেখা দেয়।
স্কিজোফ্রেনিয়ার কারণঃ
স্কিজোফ্রেনিয়ার কোন সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। নানা কারণে এই রোগ হতে পারে। মূলত মানুষের মস্তিষ্কে আছে কোটি কোটি স্নায়ুকোষ বা নিউরন। নিউরনের কাজ হচ্ছে উদ্দীপনা বহন করা, প্রাণীদেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে কাজের সমন্বয় সাধন করা, বিভিন্ন কাজের নির্দেশ দেওয়া এবং পরিচালনা করা। স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের নিউরনে গোলযোগ দেখা দেয় যার ফলে ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা, বিচার-বিবেচনা করার শক্তি লোপ পায়। তাছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপে, পারিবারিক অশান্তি, ক্ষোভ-রাগ, দুশ্চিতা বা জিনগত কারণেও স্কিজোফ্রেনিয়া হতে পারে।
স্কিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণঃ
স্কিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত মানুষের মাঝে অবাস্তব চিন্তাভাবনা, অহেতুক সন্দেহপ্রবণতা, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্ন কথা বলার প্রবণতা দেখা দেয়। অনেক সময় রোগী নিজেকে মহাপুরুষ, জ্ঞানী, বিখ্যাত মানুষ ভাবতে শুরু করেন। রোগী অবাস্তব জিনিস দেখেন, অনেকে আবার গায়েবি আওয়াজ বা কথা শুনতে পান যা অন্য কেউ শুনেনা। তাছাড়া স্কিজোফ্রেনিয়া আক্রান্তদের মাঝে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে যাওয়া, একা একা থাকা, আত্মহত্যার চেষ্টার প্রবণতা দেখা দেয়।
স্কিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসাঃ
বর্তমানে স্কিজোফ্রেনিয়ার বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক চিকিৎসা আছে তবে স্কিজোফ্রেনিয়া প্রতিরোধের কোন উপায় নেই। এই রোগ নিরাময়ে অ্যান্টি সাইকোটিক ঔষধ নিয়মিত সেবন করতে হয়। পাশাপাশি তাদেরকে কাউন্সিলিং, সাইকোথেরাপি দেওয়া হয়।
ক্রেডিট: নিশাত তাসনিম