দার্শনিক অ্যারিস্টটল-এর মতে,
স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনের জন্য কতিপয় পরিবার ও গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনই রাষ্ট্র।
কিন্তু অ্যারিস্টটল মশাইতো ইহজগতের মায়া ত্যাগ করে প্রায় ২৩০০ বছর পূর্বেই গত হয়েছেন। এই সময়ে পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, তাই না? আধুনিক রাষ্ট্রের সংজ্ঞা অ্যারিস্টটল প্রদত্ত সংজ্ঞার সাথে খাপ খায় না। অধ্যাপক গার্নারের মতে,
রাষ্ট্র হলো বহুসংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত এমন এক সমাজ, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত এবং যাদের সুসংগঠিত সরকার আছে, যে সরকারের প্রতি ঐ জনসমাজ স্বভাবতই অনুগত।
প্রত্যেক রাষ্ট্রই চারটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয়। জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। এর একটি উপাদান যদি না থাকে, তবে সেটাকে রাষ্ট্র বলা যাবে না। অর্থাৎ একটি রাষ্ট্রের জনসমষ্টি বা নাগরিক থাকবে, রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানা থাকবে, একটি সরকার থাকবে এবং সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা থাকবে। এদের মধ্যে আবার সার্বভৌমত্ব সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এটা রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা। এই ক্ষমতাবলেই রাষ্ট্র বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকে, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের কাছে তাদের কর্মের জবাবদিহি চাইতে পারে। সরকারের পরিবর্তন এই সার্বভৌমত্বকে প্রভাবিত করে না।
এখন আসি আসল কথায়। ভারতের কথা চিন্তা করুন। ভারত একটি রাষ্ট্র। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ কি রাষ্ট্র? না, এটি একটি প্রদেশ বা রাজ্য বা অঙ্গরাজ্য।
পশ্চিমবঙ্গের কিন্তু মূল প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্র বিষয়ক কোনো ক্ষমতা নেই, এই বিষয়গুলো সরাসরি কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ এক কথায় পশ্চিমবঙ্গের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই, তাই এটা রাষ্ট্র নয়।
বিভাগ, জেলা এগুলো হলো কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অংশ। বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্রের পরিধি বড়। তাই সরকারের পক্ষে কেন্দ্রে বসে সমস্ত রাষ্ট্রের সব কাজ করা সম্ভব নয়। এর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন অংশ (যেমন: বিভাগ, জেলা, উপজেলা)। কেন্দ্রের কোনো সিদ্ধান্ত প্রথমে বিভাগীয় প্রশাসনের কাছে যায়, সেখান থেকে জেলা প্রশাসন এবং সেখান থেকে উপজেলা প্রশাসনের কাছে যায়। জেলা প্রশাসক তার কাজের জন্য বিভাগীয় প্রশাসকের নিকট দায়ী থাকেন এবং বিভাগীয় প্রশাসক তার কাজের জন্য সরাসরি কেন্দ্রের কাছে দায়ী থাকেন।
collected