CID, Crime Petrol এর মতো অপরাধ বিষয়ক সিরিজ ও ড্রামাগুলোতে আসামীর ছবি তৈরির জন্য ফরেনসিক আর্টিস্টদের সাহায্য নিয়ে স্কেচ করা হয়। এই ধরনের ড্রামা দেখে আমাদের মনে প্রায়ই প্রশ্ন জাগে যে আদৌ মানুষের মুখের বর্ণনা শুনে স্কেচ তৈরি করা সম্ভব?
উত্তর হচ্ছে সম্ভব, আজকের আলোচনা সেই বিষয়েই। এই ধরনের স্কেচকে বলে ফরেনসিক আর্ট। ফরেনসিক আর্ট কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন: কম্পোজিট ড্রয়িং, পোস্টমর্টেম ড্রয়িং, ইমেজ মডিফিকেশন, ক্রাইম সিন স্কেচিং, ইত্যাদি।
- Composite Drawing: কম্পোজিট ড্রয়িং মূলত হাতে করা হয়। আসামীর শারীরিক গড়ন এর বর্ণনা শুনে এমন ড্রয়িং করা হয়। ট্রেনিংপ্রাপ্ত মানুষদের দিয়ে ভিক্টিম বা প্রত্যক্ষদর্শীদের বলা ব্যাখ্যা শুনে একটি গ্রাফিক ইমেজ তৈরি করা হয় যার সাথে আসামীর মিল আছে।
- Crime Scene Sketching: ক্রাইম সিন স্কেচ তৈরির জন্য অপরাধ যে স্থানে হয়েছে সে স্থানের পরিমাপ ও মাত্রা দেখে ইনভেস্টিগেটর কিভাবে অপরাধ হয়েছে তার স্কেচ তৈরির চেষ্টা করেন। দৃশ্যের ছবির সাথে এই স্কেচগুলো তুলনা করে অপরাধ কিভাবে হয়েছে তা অনুমান করা হয়।
- Postmortem Drawing: আর্টিস্ট যখন কোন মানুষের বিকৃত বা গলিত এবং চেহারা বুঝার উপায় নেই এমন মৃতদেহের স্কেচ তৈরি করেন তখন তাকে পোস্টমর্টেম ড্রয়িং বলে। এই ড্রয়িং দেখে মৃতদেহ বা ভিক্টিম মৃত্যুর আগে দেখতে কেমন ছিলেন, দেহ কতটুকু বিকৃত হয়েছে তা বুঝা যায়।
- Age Progression/Regression: একটি সময়ের পূর্বে বা পরে একজন মানুষের চেহারা কেমন ছিলো তার স্কেচ তৈরি করা যায়। এভাবে মূলত ইনভেস্টিগেটর'রা গুম হয়ে যাওয়া মানুষ বা অপরাধীর চেহারা কেমন ছিলো বা আছে তা নির্ণয় করেন।
- Forensic Sculpture: ভিক্টিম এর মৃতদেহের হাড় এর সাহাযে 3D মডেল তৈরি করাকে বলে ফরেনসিক স্কাপচার বা ভাস্কর্য। তাছাড়া নকল চোখ ও চুল লাগিয়ে ভাস্কর্যকে বাস্তবের মতো দেখতে বানানো হয়। অনুমান এর উপর ভিত্তি করেই এমন ভাস্কর্য তৈরি করা হয়।
বর্তমানে কম্পিউটার এর সাহায্যে 3D ভাস্কর্য বা 2D ড্রয়িং তৈরি করা সম্ভব। তবে হাতে করা স্কেচ ও কম্পিউটারে করা স্কেচ এর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। হাতে করা স্কেচ এর সূক্ষ্মতা তুলনামূলক বেশি। আসামীর মুখের ছবি তৈরি করার জন্য প্রথমত ফরেনসিক আর্টিস্ট'রা জানার চেষ্টা করেন আসামী পুরুষ নাকি নারী, আসামীর ত্বকের রঙ কি, বয়স কেমন, ইত্যাদি। যেসব জিনিস পর্যবেক্ষণ করে ছবি আঁকা হয়:-
মুখের আকৃতি : আসামীর মুখের আকৃতি গোল, সরু, হার্ট শেইপ, চিবুক উঁচু নাকি নিচু, ঠোঁট আর নাকের মাঝে দূরত্ব ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
চোখ : আসামীর চোখের মণির রঙ, দুই চোখের মাঝের দূরত্ব, ভ্রু মোটা নাকি সরু, দুই ভ্রু এর মাঝের দূরত্ব কেমন ইত্যাদি অনুমান করে স্কেচ করা হয়।
চুল : আসামীর চুলের রঙ, নারী বা পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই চুলের ধরণ ইত্যাদি বিচার করে স্কেচ করা হয়। কম্পিউটার দিয়ে চুলের ধরণ নির্ণয় করে স্কেচ করা তুলনামূলক সহজ।
আসামীর স্কেচ তৈরির পূর্বে যেকোনো ফরেনসিক আর্টিস্ট এর প্রথম কাজ হচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দী ঠিকভাবে নেওয়া, আসামীর চেহারা বাস্তবে কেমন তা জিজ্ঞাসাবাদ করে। স্কেচ তৈরি করতে কত সময় লাগবে তা অপরাধ ও যাকে ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে তার জবানবন্দীর উপর নির্ভর করে। আসামীর স্কেচ এর সাথে বাস্তব চেহারা পুরোপুরি মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, বর্তমানে অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামীর ছবি তৈরির প্রচলন বেশি।
লিখেছেন: নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)