টাইম ট্রাভেল কী সম্ভব? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+2 টি ভোট
1,718 বার দেখা হয়েছে
"প্রযুক্তি" বিভাগে করেছেন (141,850 পয়েন্ট)

3 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (141,850 পয়েন্ট)
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর

টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব?

কেমন হতো, যদি টাইম মেশিনে করে সহজেই ফিরে যেতে পারতাম ছেলেবেলায়। আবার পেতাম নির্ঝঞ্ঝাট সহজ-সরল জীবন। কিংবা যদি এক লাফে দশ বছর পরের ভবিষ্যতে চলে যেতাম, আর পড়াশোনার ঝামেলায় পড়তে হতো না, তা-ই না? কিন্তু, সেরকম কি আসলে সম্ভব? 

২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া সাড়া জাগানো মুভি Predestination নিশ্চয়ই অনেকেই দেখেছেন। টাইম মেশিনে করে সহজেই কীভাবে অনেক বছর অতীতে চলে যাওয়া যায়, কীভাবে নিজের বাচ্চাকালকে চোখের সামনে দেখা যায়। যারা দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই ধরেই নিয়েছেন যে, এসব নিছকই সায়েন্স ফিকশন! বাস্তবে অতীত বা ভবিষ্যতে আবার যাওয়া যায় নাকি! সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজবো আজ আমরা। বিজ্ঞানের আলোকে বোঝার চেষ্টা করবো- আসলেও সময় পরিভ্রমণ সম্ভব কি না।

টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণ বলতে সহজ ভাষায় অতীতে বা ভবিষ্যতে যেতে পারাকে বোঝায়। আমি যদি ২০০০ সালে ফিরে যেতে পারি বা ২০৩০ সালের পৃথিবীতে চলে যেতে পারি, তবে তাকে সময় পরিভ্রমণ বলবে। শুনতে যতটা সহজ লাগছে বাস্তবে কিন্তু সেটা ততটা সহজ না। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন! ততটা সহজ না, তবে অসম্ভব কিছুও না! টাইম ট্রাভেল কীভাবে সম্ভব তা জানতে হলে আমাদের একটু গভীরে যেতে হবে। জেনে আসতে হবে সময় পরিভ্রমণ নিয়ে বিজ্ঞানের কিছু তত্ত্ব।  

সময় পরিভ্রমণ বোঝার জন্য আপনাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা ও আলোর গতিসূত্র বুঝতে হবে। আইনস্টাইন সময় জিনিসটাকে আলোর মাধ্যমে ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন। কোনো বস্তু যত দ্রুত গতিতে চলবে, তার সাপেক্ষে সময় তত স্থির হয়ে থাকবে। অর্থাৎ, আপনি যদি আলোর কাছাকাছি গতিতে চলতে পারেন, তবে আপনার সাপেক্ষে সময় প্রায় স্থির থাকবে। আপনি দুই ঘন্টা ভ্রমণ করে আসার পর দেখবেন পৃথিবীতে হয়তো এর মাঝে দুই বছর সময় চলে গিয়েছে! এ তো গেল আলোর কাছাকাছি গতিতে ভ্রমণ করতে পারলে কী হবে সেই কথা। আর আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে যেতে পারলে আপনি সময়কেই অতিক্রম করে ফেলতে পারবেন!

একটি সহজ উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন, আপনি পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের কোনো একটি নক্ষত্রকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখছেন। এই মুহূর্তে আপনি যে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রটি দেখছেন সেটি কিন্তু নক্ষত্রটির বর্তমান অবস্থা না। আমরা কোনো বস্তু তখন দেখতে পাই যখন সেটি থেকে আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে। অর্থাৎ, এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকা সেই নক্ষত্রটি থেকে আলো এসে পৃথিবীতে পৌঁছাতে এক লক্ষ বছর লেগেছে। আপনি এই মুহুর্তে নক্ষত্রটিকে যেমন দেখছেন সেটি আপনার কাছে বর্তমান হলেও, নক্ষত্রটির কাছে সেটি এক লক্ষ বছর অতীতের ঘটনা।

এখন, কল্পনা করে নিন, সেই নক্ষত্রটি ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সেখানে বাস করা একটি এলিয়েন ১ লক্ষ আলোকবর্ষ/সেকেন্ড গতিতে পৃথিবীতে চলে আসলো। সে আসার পরও কিন্তু সে নক্ষত্রটিকে একই অবস্থায় দেখতে পাবে পৃথিবী থেকে। তারও এক লক্ষ বছর পর পৃথিবীবাসীরা সেই নক্ষত্রকে ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যেতে দেখবে। তাহলে এ থেকে আমরা কী বুঝলাম? পৃথিবীবাসীরা যা এক লক্ষ বছর পর দেখবে, যা তাদের কাছে এক লক্ষ বছর ভবিষ্যতের ঘটনা, সেই ঘটনাটি পৃথিবীতে চলে আসা এলিয়েনের কাছে নিকট অতীত! 

এখন, এখানে একটি ছোট সমস্যা রয়ে গেছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তো খুব করে বললাম, এলিয়েনটি এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরত্ব এক সেকেন্ডে চলে আসবে। কিন্তু, তা কি আদৌ সম্ভব? উত্তর, সম্ভব নয়। আইনস্টাইনের সূত্রমতে, আলোর গতি ধ্রুব এবং কোনো কিছুই আলোর চেয়ে অধিকতর গতিশীল হতে পারবে না। সেই হিসেবে এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরত্বও এক মুহূর্তে অতিক্রম করা সম্ভব না। তাহলে ভবিষ্যতে পরিভ্রমণ করার উপায় কী? আসুন, এবারে আর দ্বিধায় না রেখে সহজে বুঝিয়ে দেই।

আমরা কোনো বিন্দুর অবস্থান বের করি  XYZ অক্ষ দ্বারা। অর্থাৎ, দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে X, প্রস্থ নির্ণয়ে Y আর উচ্চতা নির্ণয়ে Z অক্ষ ব্যবহার করি। কিন্তু কোনো ঘটনার প্রকৃত অবস্থান জানতে এ তিনটি মাত্রা বাদেও আরেকটি মাত্রার প্রয়োজন। তা হলো সময়। এ চতুর্থ মাত্রাকে আইনস্টাইন স্পেস-টাইম বলেছেন। এখন, মহাবিশ্বে জালের মতো ছড়ানো যে স্পেস টাইম ফেব্রিক রয়েছে, তা দিয়ে সময়/আলো প্রবাহিত হয়। যেহেতু আলোর গতিকে অতিক্রম করা সম্ভব না, সেহেতু আমাদের সময় পরিভ্রমণের জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে। একটি ব্যবহারিক উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি। একটি কাগজের পৃষ্ঠা হাতে নিন। পৃষ্ঠাটির বরাবর উপরে নিচের দুই প্রান্তে দুটি আলাদা ফুটো করুন। এবারে মাঝ বরাবর পৃষ্ঠাটি দুই ভাঁজ করে কী দেখতে পেলেন? ফুটো দুটি একসাথে লেগে আছে, তাই তো? এবার পৃষ্ঠাটি আবার আগের মতো খুলে ধরুন। খুলে রাখা পৃষ্ঠায় দুটি ছিদ্র যতটা দূরে, ভাঁজ করা পৃষ্ঠার ক্ষেত্রে বলতে গেলে তা একদমই নেই।

এখন যদি এই পৃষ্ঠাটিকে আমরা একটি স্পেস-টাইম ফেব্রিক হিসেবে কল্পনা করি তাহলে বুঝতে পারি, স্বাভাবিকভাবে দুটি ঘটনা বিন্দু অনেক দূরত্বে থাকলেও, ফেব্রিকের সংকোচনের ফলে দুটি ঘটনা বিন্দুকে খুব অল্প দূরত্বে নিয়ে আসা সম্ভব। অর্থাৎ, সাধারণভাবে যে ঘটনা বিন্দুটি অনেক পরে দেখতে পাওয়ার কথা, সেখানে শর্টকাটে অনেক আগেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। এ ধারণার উপর ভিত্তি করেই ওয়ার্মহোল বা সময় সুড়ঙ্গের ধারণাটি এসেছে।

ওয়ার্মহোল হচ্ছে এমন একটি ক্ষুদ্র সুড়ঙ্গ, যা অনেক অনেক আলোকবর্ষ দূরের দুটি ঘটনা বিন্দুকেও স্পেস ফেব্রিকের সংকোচনের মাধ্যমে খুব কাছাকাছি দূরত্বে নিয়ে আসে। সুতরাং, ওয়ার্মহোলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে আলোর অধিক গতিবেগ ছাড়াই ভবিষ্যৎ পরিভ্রমণ সম্ভব। প্রশ্ন থাকতে পারে, এখন পর্যন্ত কেউ ওয়ার্মহোলে করে কেন তাহলে ভবিষ্যত ভ্রমণ করেনি। এর উত্তর হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, মহাবিশ্বে ওয়ার্মহোল খুব মাঝে মাঝে সামান্য কিছু সময়ের জন্য আবির্ভূত হয়। তাছাড়াও এ ওয়ার্মহোলগুলোর ব্যাস হয় এক সেন্টিমিটারের লক্ষ কোটি ভাগের কম। সুতরাং এত কম সময় স্থায়ী ও এত ক্ষুদ্র ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করা প্রায় অসম্ভব! সুতরাং, ভবিষ্যত পরিভ্রমণ তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবিকভাবে এখন পর্যন্ত ভবিষ্যত পরিভ্রমণ করার মতো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি।

ভবিষ্যত পরিভ্রমণ নিয়ে আলোচনা গেল। এবার আসা যাক অতীত পরিভ্রমণে। তাহলে তো অতীত পরিভ্রমণও একইভাবে ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে করা যাবে, তাই না? উত্তর, না। এখানে দুটি ঝামেলা আছে। এই ঝামেলাগুলোকে 'সেলফ কনসিস্টেন্সি থিওরি' ও 'গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স থিওরি' বলে।

আমি ভবিষ্যতে গিয়ে যদি সব ভেঙেচুরে একাকার করে ফেলি, তাহলে সেটি বড় কোনো প্রাকৃতিক সমস্যা দাঁড় করাবে না। আমি ১০০ বছর ভবিষ্যতে গিয়ে ভাংচুর করে চলে আসার পর, স্বাভাবিকভাবে ১০০ বছর পরের ভবিষ্যতে এই ঘটনাটিই হবে। কিন্তু সমস্যা হবে অতীতে গিয়ে কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটালে। মনে করুন, ১৯৪৬ সালের ৬ জুলাইয়ে আমি গিয়ে যদি সদ্য জন্ম নেয়া জর্জ বুশকে মেরে ফেলি, তাহলে আবার বর্তমানে এসে বুশকে কীভাবে দেখবো? সে তো জন্মের দিনই মারা গিয়েছিল, তা-ই না? জটিল লাগছে খুব? এ প্রশ্নের উত্তরই আছে দুটি থিওরিতে।

আসুন দেখে নেই থিওরি দুটির মূলকথা!

সেলফ কনসিস্টেন্সি থিওরি : এ থিওরি অনুযায়ী, কেউ অতীত ভ্রমণ করলেও সে প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। প্রকৃতি তাকে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে দেবে না। কেউ চাইলে ওয়ার্মহোলে করে অতীতে গিয়ে ঘুরে আসতে পারবে, সবকিছু দেখতে পারবে, কিন্ত কোনো ঘটনায় প্রভাব রাখতে পারবে না। ছায়ার মতো শুধুই দর্শনার্থী হয়ে থাকতে হবে। সুতরাং, এক্ষেত্রে কোনো ঘটনার পরিবর্তন বা কোনো ধরনের প্যারাডক্স সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স : ধরে নিচ্ছি, আমি ৮০ বছর অতীতে গিয়ে দেখলাম আমার দাদা কাদা মাখামাখি করে হা-ডু-ডু খেলছে। এখন, আমি যদি সাথে করে নিয়ে যাওয়া রিভলবার দিয়ে আমার দাদাকে গুলি করে মেরে ফেলি, তাহলে আমি আসবো কোথা থেকে? আমার দাদা যদি শিশু বয়সে মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে তো তার আর বিয়েও হবে না। তার ছেলে, মানে আমার বাবাও পৃথিবীতে আসবে না কোনোদিন। আমার বাবা যদি জন্মই না নেয় তাহলে তো আমারও জন্ম নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্ত আমি তো আছি! তাহলে আমি আসলাম কোথা থেকে! অতীত পরিভ্রমণ সম্পর্কিত এই গোলমেলে সমস্যাকে বলে গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স।

এ সমস্যা সামনে আসার পর বিজ্ঞানীরা এর আপাত সমাধান হিসেবে প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা বলেছেন। প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরি মতে, প্রতিটি ঘটনার অসংখ্য সম্ভাবনা থাকতে পারে। অর্থাৎ, একই ধরনের ঘটনা আরো অনেকগুলো ইউনিভার্সে থাকা সম্ভব। দুটি সমান্তরাল রেখার যেভাবে কখনো দেখা হয় না, একইভাবে দুটি প্যারালাল ইউনিভার্সেরও কখনো দেখা হবে না। দুটি সমান্তরাল রেখার মাঝে ছোট আরেকটি রেখা টেনে যেভাবে দুটি রেখাকে যুক্ত করা যায়, একইভাবে ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে দুটি প্যারালাল ইউনিভার্সের মাঝে ভ্রমণ করা হয়। সুতরাং, আপনি অতীতে যেতে চাইলে কখনোই আপনার নিজের ইউনিভার্সের অতীতে যেতে পারবেন না। আপনি ওয়ার্মহোলে ঢোকামাত্র অন্য কোনো প্যারালাল ইউনিভার্সে চলে যাবেন। সেখানে গিয়ে আপনি আপনার দাদাকে হত্যা করলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ সেই ইউনিভার্সের ভবিষ্যতে আপনার কোনো অস্তিত্বই নেই!

এই ছিলো মোটামুটি সময় পরিভ্রমণ নিয়ে আলোচনা। বিজ্ঞানের বহুর্মুখী অগ্রযাত্রার নিরিখে বলতে পারি, আপাতত সম্ভব না হলেও, হয়তো সেই দিন আর বেশি দূরে নয়।

লেখকঃ A.S.M. Kamrul Islam

+1 টি ভোট
করেছেন (93,090 পয়েন্ট)

ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব। অতীতে যাওয়া সম্ভব নয়। স্টিফেন হকিং ব্যাপারটা খুব সহজে বুঝিয়েছিলেন। তার থেকেই বলছি, খুব সংক্ষেপে।

ধরুন কোন এক যানে আরোহণ করে আপনি ৩০ মিনিট পূর্বে গেলেন। ৩০ মিনিট পূর্বে গিয়ে দেখলেন যে আপনার অতীত অস্তিত্বটি সময়-যানে আরোহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আপনি তাকে হত্যা করলেন। তাহলে ৩০ মিনিট পরে ওই যানে আরোহণ করলো কে? তাকে হত্যাই বা করলো কে? অর্থাৎ এই মডেল সমস্যা তৈরি করছে। এরকম উদ্ভুত কুটাভাসের সমাধান না হলে, এখনও পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানের যা পরিধি, তাতে অতীত ভ্রমণ সম্ভব নয়। ভবিষ্যত হতে অতি বুদ্ধিমান বা জগৎটাকে আরও ভালোভাবে জানা কোন সময়-ভ্রমণকারী হয়তোবা এই কারণেই এখনও আমাদের সাথে দেখা করতে আসে নি।

আলোর গতিতে চললে সময় ধীরে চলে। আপনি আলোর গতিতে কোন মহাকাশ যানে চড়ে যথেষ্ট সময় ভ্রমণ করলেন, ধরুন আপনার মহাকাশ যানের ঘড়ির হিসাবে আপনি দশ বছর ভ্রমণ করলেন। দশ বছর পরে পৃথিবীতে ফেরত এসে দেখবেন যে পৃথিবীতে দশ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ আপনি ভবিষ্যতে এসে পড়েছেন। তাহলে, এই ভবিষ্যত ভ্রমণ বর্তমান পদার্থবিজ্ঞানই ব্যাখ্যা করতে পারছে।

©️quora

0 টি ভোট
করেছেন (8,580 পয়েন্ট)

হ্যাঁ। তত্ত্বীয়ভাবে মানুষ সময় যাত্রা করতে পারবে অর্থাৎ টাইমট্রাভেল সম্ভব; তবে সেটা সাইন্স ফিকশনে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় সেরকম না।

ভবিষ্যৎ যাত্রা:

      প্রথমেই আসি ভবিষ্যৎ ভ্রমণে। ভবিষ্যতে যাওয়ার বিষয়টি ঘটে টাইম    ডাইলেশন বা সময়ের প্রসারণের মাধ্যমে। বিষয়টা কেমন তা বোঝা যাক-

          সময় আপেক্ষিক। এটা দ্রুত কিংবা ধীরও হয়ে যেতে পারে। কোনো স্থানে ভর যত বেশি সেখানে মহাকর্ষ তত শক্তিশালী। আর কোথাও মহাকর্ষ যত শক্তিশালী হবে, সেখানে স্পেস বা স্থানের বক্রতাও তত বেশি হবে। আর  স্পেসের বক্রতা যত বেশি সেখানকার সময়ও তত ধীর। এখানে সময় ধীর মানে সেখানে থাকা সকল বস্তুর সময়ই ধীর। যেমন: প্রবল মহাকর্ষ আছে এমন একটা গ্রহে স্পেসের বক্রতা বেশি হওয়ায় সময় অনেক ধীর হবে। ফলে সেখানে ঘড়ি, দৌড়ের গতি এমনকি মানুষের শারীরবৃত্তিয় সকল ক্রিয়াই ধীর হয়ে যাবে। সেই সাথে আপনার বয়সও ধীরে ধীরে বাড়বে। ফলে আপনি সেখানে থেকে বুঝতেও পারবেন না যে আপনার সময় ধীর হয়ে গিয়েছে। কারণ আপনার সময় যে ধীর তা বোঝার মতো এমন কোনো প্রসঙ্গ কাঠামো নেই যার তুলনায় আপনি যে ধীর তা বুঝতে পারবেন। এককথায় স্পেসের বক্রতা বেশি হলে সময় ধীর হয়ে যায়।

          এখন আরেকটা জিনিস কল্পনা কর। ধরে নাও তুমি X নামে একটা গ্রহে যাবে যার ভর পৃথিবীর তুলনায় ৫ গুণ বেশি হওয়ায় সেখানে মহাকর্ষও পৃথিবীর তুলনায় ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী। ফলে সেখানে স্পেসের বক্রতাও পৃথিবীর তুলনায় ৫ গুণ বেশি। এতে করে যা হবে তা হলো- কল্পিত X গ্রহে সময় পৃথিবীর তুলনায় ৫ গুণ বেশি ধীর। বিপরীতভাবে বললে পৃথিবীতে সময় X গ্রহের তুলনায় ৫ গুণ ফাস্ট বা দ্রুত। এখন মনে কর তুমি ২০২২ সালে পৃথিবী ছেড়ে X চলে গেলে এবং X গ্রহে ২০ বছর কাটালে। ২০ বছর পর তুমি পৃথিবীতে ফিরলে তোমার হিসেবে পৃথিবীতেও ২০ বছর পার হওয়ার কথা। কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে আপনি দেখবেন পৃথিবীতে (২০×৫) বা, ১০০ বছর পার হয়ে গিয়েছে। কারণ পৃথিবীর সময় X গ্রহের তুলনায় ৫গুণ ফাস্ট বা দ্রুত বলে X গ্রহের ২০ বছর পৃথিবীর ১০০ বছরের সমান। তার মানে ২০ বছর পর ফিরে এসে আপনার হিসেবে যেখানে ২০৪২ সাল হওয়ার কথা সেখানে পৃথিবীতে ২১২২ সাল হয়ে গিয়েছে। তার মানে আপনি ৮০ বছর সামনে বা ভবিষ্যতে চলে এসেছেন।

          এবার আরেকভাবে ভবিষ্যৎ ভ্রমণের কথা বলব। আমরা যখন উচ্চ গতিতে চলি কিংবা কোনো উচ্চ গতির যানে চড়ি, তখন আমাদের আপেক্ষিক ভর বেড়ে যায়। আর আগেই তো বলেছি, ভর বাড়লে স্পেসের বক্রতা বেশি হবে। আর স্পেসের বক্রতা যত বেশি সময়ও তত ধীর। ফলে আপনার উচ্চ গতির কারণে তোমার সময়ও ধীর হয়ে যাবে। এই বিষয়টা তখনও ঘটে যখন আপনি ট্রেন, বাস বা কোনো উচ্চ গতির যানবাহনে চড়েন। যদিও এক্ষেত্রে আপনার সময়ের ধীর হওয়ার পরিমাণ খুবই কম, তবুও আপনার সময় ধীর হবেই। কিন্তু কই আমরা তো ট্রেনে চড়ার পর ভবিষ্যতে চলে যাইনা। আসলে ট্রেনের গতি অতটাও বেশি নয়, যতটা হলে আপনি টাইম ডাইলেশন অনুভব করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি আলোর গতির ৯৯.৯৪% গতিতে মহাকাশযাত্রা করেন, তবে ১০ বছর পর পৃথিবীতে ফিরে আসলে আপনার হিসাবে ১০ বছর পার হওয়ার কথা থাকলেও পৃথিবীতে ২৯ বছর পেরিয়ে যাবে। মানে ৯ বছর ভবিষ্যতে চলে আসলেন।

অতীত যাত্রা:

      এবার আসি অতীত ভ্রমনের বিষয়ে। এখন পর্যন্ত গবেষণা অনুযায়ী অতীত ভ্রমণ প্রায় অসম্ভব। তবে কিছু বিজ্ঞানী অতীতে যাওয়া নিয়ে কিছু আইডিয়া বা অনুমান প্রদান করেছেন। তবে বাস্তবে এগুলোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাহলে কি অতীতে যাওয়া সম্ভব নয়? সম্ভব, তবে অতীতে যাওয়া নয়, অতীত দেখা।

          আপনি যে স্থানের অতীত দেখবেন সেই স্থান হতে যথেষ্ট দূরে যেতে পারলে আপনি সেখানকার অতীত দেখতে পাবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আলো ১ সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কি.মি. যায়। তাই আপনি যদি পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ কি.মি. দূরে যান তবে পৃথিবী থেকে সেখানে আলো প্রায় ১ সেকেন্ড পরে পৌঁছাবে। ফলে আপনি ১ সেকেন্ড অতীতের পৃথিবীকে দেখবেন। আবার সূর্য থেকে যেহেতু পৃথিবীতে আলো আসতে ৮ মিনিট প্রয়োজন তাই আপনি পৃথিবী থেকে ৮ মিনিট পূর্বের সূর্যকে দেখছেন। একইভাবে আপনি যদি পৃথিবী থেকে ৯.৪৫ ট্রিলিয়ন কি.মি. দূরে যেতে পারেন এবং সেখান থেকে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে পৃথিবীকে দেখতে পারেন, তবে আপনি পৃথিবীর ১ বছর আগের অতীত দেখতে পাবেন। এই পদ্ধেতিতেই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ১৩৫০ কোটি বছর পূর্বের ছবি তুলতে পেরেছে।

     আর এভাবেই আমরা ভবিষ্যতে যেতে পারি কিংবা অতীত দেখতে পারি।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
3 টি উত্তর 644 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 437 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 280 বার দেখা হয়েছে
03 জানুয়ারি 2023 "পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Ahsanul Islam Badhon (130 পয়েন্ট)
+2 টি ভোট
2 টি উত্তর 392 বার দেখা হয়েছে
08 জুলাই 2022 "পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rakib Ahmed (520 পয়েন্ট)

10,772 টি প্রশ্ন

18,455 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

263,059 জন সদস্য

98 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 97 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  2. MichelleU26

    100 পয়েন্ট

  3. 33winflorist

    100 পয়েন্ট

  4. ChandaSoundy

    100 পয়েন্ট

  5. qh88dangnhapvip

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী চিকিৎসা #science পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...