ভৌতিক গল্পে আত্মার সাথে যোগাযোগের নানা কৌশল আমরা শুনেছি। এর মধ্যে একটি হলো প্ল্যানচেট। বর্তমানে প্ল্যানচেটে ব্যবহৃত হয় কাঠের তৈরি ওইজা বোর্ড বা স্পিরিট বোর্ড। এই বোর্ডে ইংরেজি বর্ণমালার A থেকে Z পর্যন্ত বর্ণ, ০-৯ পর্যন্ত সংখ্যা, YES, NO এবং Good Bye লিখা থাকে। বোর্ডটির সাথে কাঠের বা প্লাস্টিকের তৈরি হার্ট আকৃতির ছিদ্র করা বস্তু থাকে যাকে প্ল্যানচেট বলে। কিন্তু আমরা আত্না নামানোর সম্পূর্ণ কৌশলটিকে প্ল্যানচেট বলি। আর যারা পেশাগতভাবে আত্মা নামানোর কাজটি করে থাকেন তাদেরকে বলা হয় স্পিরিচুয়েলিস্ট বা মিডিয়াম।
উদাহরণ দিয়ে প্ল্যানচেট প্রক্রিয়া বোঝা যাক:
অন্বয় আত্মায় বিশ্বাস করে। সে তার মৃত বোন নিশাতের আত্মার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিখ্যাত স্পিরিচুয়েলিস্ট মবিন ও তার বন্ধুদের সাথে প্ল্যানচেটে বসে। প্রথমেই মবিন সবাইকে চোখ বন্ধ করে মনের যাবতীয় সকল চিন্তা বের করে দিতে বলে। তারপর সবাই একত্রে কাঠের বস্তুটির উপর হাত রেখে গোল হয়ে একটি টেবিলের চারপাশে বসে। তারপর মবিন ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করে, "এই ঘরে কি কোন আত্মা আছে?"
কয়েক মিনিট পর প্ল্যানচেট এর কাঠের বস্তুটি "YES" লিখার উপর চলে যায়।
এবার অন্বয় প্রশ্ন করে, "তোমার নাম কি?"
উত্তরে কাঠের বস্তুটি পর্যায়ক্রমে N, I, S, H, A, T অক্ষরগুলো নির্দেশ করে।
অন্বয় উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে, "তুমি কিভাবে মারা গেলে?"
একইভাবে উত্তর আসে, "ACCIDENT".....
অদ্ভুত বিষয়টি হচ্ছে আত্মার দেওয়া সব প্রশ্নের উত্তরই সঠিক ছিলো। কিন্তু কিভাবে?
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক, একে বলে ইডিওমোটর ইফেক্ট। অটোসাজেশন ক্ষমতার প্রভাবে মানুষের মস্তিষ্ক আদেশ-নির্দেশ গ্রহণ করে, এর প্রভাবে শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ স্থান পরিবর্তন করে। মূলত মানুষের অবচেতন মনের নির্দেশে হাতের পেশী অনৈচ্ছিকভাবে নড়াচড়া করে, এর ফলে ওইজা বোর্ডের বস্তুটি প্ল্যানচেটে করা প্রশ্নের উত্তর দেয়।
আবার, প্ল্যানচেটে অনেক সময় আত্মা এসে জীবিত মানুষের শরীরে ভর করে এবং তার মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দেয়৷ একে বলা হয় অটোম্যাটিজম। মোমবাতি জ্বালিয়ে, ধোঁয়া ও নিরিবিলি পরিবেশ সৃষ্টি করে যখন স্পিরিচুয়েলিস্টরা প্ল্যানচেটে বসেন, তারপর প্রথমেই তারা নিজের মনের যাবতীয় সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলেন। ধীরে ধীরে তারা অবচেতন মনের গভীরে হারিয়ে যেতে থাকেন। এবং অবচেতন মনের প্রভাবে নিজের অজান্তেই আত্মা ভর করার অভিনয় করতে থাকেন। অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিকভাবে প্ল্যানচেট অবচেতন মনের ক্রিয়া ছাড়া কিছুই নয়।
লিখেছেন: নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)