মশার বেশির ভাগ প্রজাতিতে পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়েই মধু এবং গাছের রস খেয়ে জীবন ধারণ করে। তবে অনেক প্রজাতিতে স্ত্রীদের মুখের বিভিন্ন অংশ রক্ত চোষার জন্য অভিযোজিত হয়েছে। অনেক প্রজাতিতে, ডিম পাড়ার ঠিক আগে রক্তে থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে হয়, আবার অনেক প্রজাতিতে রক্তে থেকে পুষ্টি গ্রহণ করার কারণ যাতে সে আরও সংখ্যায় ডিম পাড়তে পারে।
কোনো মানুষকে মশার বেশি পছন্দ হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, রক্তের গ্রুপ ('ও' গ্রুপ মশার বেশি পছন্দ), দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাসের হার, প্রচুর পরিমাণে ত্বকের ব্যাকটিরিয়া, দেহের উচ্চ তাপ ইত্যাদি। তবে এই পছন্দের পেছনে জিনগতভাবে নিয়ন্ত্রিত উপাদানও রয়েছে বলে মনে করা হয়।
স্ত্রী মশা রক্ত খাবার জন্য মানুষের ত্বকে হুল ফুটানোর পরে তাদের চাহিদা মতো রক্ত চুষে খায়। কিন্তু এই সময় মশাদের জন্য সমস্যা হলো, মানুষের রক্ত বেশ দ্রুতই জমাট বেঁধে যায়। আর একবার জমাট বেঁধে গেলে তো মশারা আর রক্ত খেতে পারবে না। তাই তারা রক্ত যাতে জমাট না বাঁধে সেজন্য হুল ফুটানোর সময় তারা আমাদের শরীরে কিছুটা লালা ঢুকিয়ে দেয়। সেই লালা রসে কিছু তঞ্চন বিরোধী (Anticoagulants) উপাদান থাকে। এই লালা রস বিভিন্ন প্রোটিন নিয়ে তৈরি হয়। এটি যে অংশে মশা কামড়িয়েছে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। এতে করে মশার মুখে রক্তের প্রবাহ ঠিক থাকে। আর তারা আরাম করে রক্ত খেতে পারে। মশা ও অন্য রক্তপায়ী পরজীবীদের এই বৈশিষ্টটি পরজীবীতার জন্য অভিযোজনের ফসল। উল্লেখ্য মশাটি সংক্রামিত থাকলে এই লালা রসের মাধ্যমে তা আমাদেরকেও সংক্রামিত করে।
এখন বিভিন্ন জৈবিক কাঠামো সহযোগে গঠিত জীবদেহের নিজস্ব অনাক্রম্যতন্ত্র বা প্রতিরক্ষাতন্ত্র বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Immune system) যা জীবদেহকে আক্রমণকারী রোগব্যধির বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে মশার মুখ থেকে আসা স্যালাইভাতে উপস্থিত বিজাতীয় প্রোটিনগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে। জীবদেহের এই অনাক্রম্যতন্ত্রও দীর্ঘ অভিযোজনের ফসল জীবদেহের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা জীবদেহকে আক্রমণকারী রোগব্যধির বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। মানুষের শরীরে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ফলে মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বা কিছুক্ষণ পরে জায়গাটি ফুলে যায় এবং চুলকাতে থাকে।
লক্ষ্য করে দেখুন এই ফুলে যাওয়া এবং চুলকাতে থাকার ব্যাপারটা বিরক্তিকর হতে পারে, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এটা একটা রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করে।যদি এই প্রতিক্রিয়াটি আমাদের শরীরে না তৈরি হত তাহলে যখন তখন, যত খুশি মশা আমাদের রক্ত খেয়ে চলে চলে যেত।চুলকায় বলেই আমরা বুঝতে পারি কিছু একটা কামড়াচ্ছে এবং নিজেকে নিরাপদ করার চেষ্টা করি। পরজীবী-পোষক সম্পর্কের অভিযোজনের এক উল্লেখযোগ্য দিক।