চোখের সাহায্যে আমরা পৃথিবী দেখি। সেই চোখে যখন অসুখ হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হবে। এবং এই সব অসুখের ভেতর চোখের ছানি পড়া সবচেয়ে পরিচিত ও বেশিমাত্রায় হওয়া অসুখ। একটি হসপিটালের চক্ষু বিভাগে যত রোগী আসেন তার আশি শতাংশই চোখে ছানি পড়ার সমস্যা নিয়ে আসেন।
ছানি কী : আমাদের চোখের ভেতর ক্রিস্টালের মতো পরিষ্কার লেন্স থাকে। এটি দিয়ে আমরা দূরে-কাছের দৃশ্য সমন্বয় করি। এটিতে কোনো অস্বচ্ছতা তৈরি হলে একে আমরা ছানি বলি। এটি সাধারণত ঘোলাটে ও সাদা রঙের হয়।
ছানির লক্ষণ : চোখে ঝাপসা দেখা, লেন্সের রং ঘোলা হয়ে যাওয়া, একটি জিনিস দুইটি দেখা, অন্ধকারে কম দেখা, রঙের বোধ কমে যাওয়া।
কাদের বেশি হয় : চোখের ছানি সাধারণত বয়স্কদের বেশি হয়। ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়স্কদের জন্য এটা খুবই সাধারণ একটি অসুখ। তবে সব সময় বয়স্কদেরই হবে এমনটা ভাবা ভুল। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের অপেক্ষাকৃত কম বয়সে ছানি হতে দেখা যায়। এমনকি ছানি হতে পারে ছোটদেরও। গর্ভবতী মায়ের কিছু জীবাণু সংক্রমণ হলে সন্তানের চোখে ছানি থাকতে পারে জন্ম থেকেই। গর্ভবতী মায়ের গর্ভধারণের তিন মাসের মধ্যে এক্স-রের মতো কোনো বিকিরণ রশ্মির সংস্পর্শে এলেও গর্ভের সন্তানের জন্মগত ছানির ঝুঁকি থাকে। ছোটদের বা বড়দের চোখে মারাত্মক আঘাত থেকে ছানি হতে পারে। ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন কিংবা বিকিরণ এলাকায় কাজ করেন, এমন ব্যক্তির ছানি হওয়ার ঝুঁকি থাকে যেকোনো বয়সে।
ছানি পড়ার কারণ : চোখে ছানি পড়ার প্রধান কারণ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে লেন্সের উপাদান প্রোটিনের গঠন নষ্ট হয়ে যাওয়া। এছাড়া আরও যেসব কারণে সমস্যা হতে পারে ১. দীর্ঘমেয়াদি কিছু রোগ যেমন ডায়াবেটিস, চোখের ইনফেকশন ইত্যাদি ২. বংশগত ৩. দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন ৪. ধূমপান ও অ্যালকোহলে আসক্তি ৫. সূর্যের অতিরিক্ত তাপ কিংবা অতিবেগুনি রশ্মিতে কাজ করা ৬. চোখে আঘাত পাওয়া ৭. ভিটামিনের ঘাটতি।
চিকিৎসা : চোখে ছানি হলে তার একমাত্র চিকিৎসা হলো অপারেশন করে চোখের ছানি অপসারণ করা। অনেকেই মনে করেন ছানি বেশি বড় হলে তবে অপারেশন করা উচিত। এটা খুবই ভয়াবহ একটি ভুল ধারণা। কখন অস্ত্রোপচার করা নিরাপদ, সেটি চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছানির অবস্থা দেখে বলে দেবেন। বেশি দেরি হয়ে গেলে ছানিজনিত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন : গ্লুকোমা ও লেন্স ডিজলোকেশন বা চোখের লেন্স নির্দিষ্ট স্থান থেকে সরে যাওয়া, দৃষ্টি হারানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আজকাল অতি উন্নতমানের চোখের ছানির অপারেশন যেমন ফ্যাকো, SICS, ECCE ইত্যাদি হয়ে থাকে। অনেক সময় অপারেশনের পরে চশমা পরার প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধ : চোখের ছানি এড়ানোর জন্য নিয়মিত চোখের যতœ নেওয়া, দীর্ঘমেয়াদি অসুখ হলে তার চিকিৎসা করা, চোখের ডাক্তারের কাছ থেকে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করার মতো নিয়মসমূহ মেনে চলা জরুরি। এছাড়া যেসব খাবারের উপাদান সমূহ চোখের জন্য উপকারী সেসব খাবার খাওয়ার দ্বারা ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। যেমন-রসুন (অ্যালিসিনন), বাদাম (ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড), পালংশাক (ফাইটো নিউট্রেয়ান্ট), গাজর (ভিটা ক্যারোটিন) পেঁপে (প্যাপিন), মধু, অশ্বগন্ধা, গ্রিন টি ইত্যাদি। চোখের ছানি হলে অন্ধ হয়ে যেতে হবে এমন ভয় না পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব চক্ষুবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। তাতে রোগমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
©DeshRupantor