গর্ভাবস্থাকালীন কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এবং জটিলতাঃ
পৃথিবীর প্রত্যেক মায়ের মধ্যেই গর্ভাবস্থার সময় অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে। এই অনুভূতিটি যেন নতুন এক সূর্যের কিরণের মতই তার জীবনের সমস্ত অন্ধকার নিমিষেই দূর করে দেয়।
গর্ভাবস্থা হলো একজন নারীর জীবনের এমন এক দশা যেখানে একটি ভ্রূণ নারীর জরায়ুতে বিকশিত হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থা প্রায় ৪০ সপ্তাহ কিংবা ৯ মাস এমনকি এর কম-বেশি স্থায়ী হয়। তবে গর্ভাবস্থার সময় একজন নারীকে অনেক মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাচ্চা জন্মদানের অনুভূতি সুখকর হলেও গর্ভবতী মায়ের অনেক মানসিক ও শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হয় যেটি অনেকেই সহজে প্রকাশ করে না।
এই সময়ে প্রত্যেকটি নারীর মধ্যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে। তন্মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলোঃ
১. মুড সুইং (Mood Swing)
মুড সুইং হলো মনের এক আজব অসুখ। গর্ভাবস্থায় মুড সুইং একটু বেশিই হয়ে থাকে। মূলত বাহ্যিক চিন্তাভাবনা, অবসাদ, বিপাক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন দেখা দিলে এবং এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের কারনে মুড সুইং হয়ে থাকে। যদি হরমোন লেভেলে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন ঘটে তবে নিউরোট্রান্সমিটারে এর ব্যাপক প্রভাব পরবে। মুড সুইং এর প্রভাব বিশেষত গর্ভাবস্থার প্রথম ৬-১০ সপ্তাহ পরিলক্ষিত হয়।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation)
গর্ভাবস্থায় কিছু হরমোনাল চেঞ্জের কারনে অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এছাড়াও, পানির পাশাপাশি ফলের জুস, মিল্কশেক, ডাবের পানি ইত্যাদি গ্রহণ করা উচিত।
৩. প্রসাবে অসামঞ্জস্যতা (Urinary Incontinence)
প্রসাবে অসামঞ্জস্যতা এমন একটি অবস্থা যেখানে গর্ভবতী মহিলার হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কিংবা কখনো জোরে হাসার ফলপ্রসূ প্রসাব কিছু ফোটা নির্গমন হতে পারে। যদিও এটা খুব বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের সাধারণত পেলভিক পেশীগুলো শিথিল হতে শুরু করে যার ফলে পেলভিক পেশীর উপর নিয়ন্ত্রণ কম থাকে। এমতাবস্থায় ডাক্তাররা পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম (Pelvic Floor Exercise) এর সুপারিশ করে থাকেন।
৪. অদ্ভুত ও অবর্ণনীয় স্বপ্ন (Strange and Unexplained Dreams)
যদিও এরূপ স্বপ্ন কিছুটা ভয়ংকর হয়ে থাকে কিন্তু এটি একটি সাধারণ ব্যাপার কারন এরকম প্রায় অনেকের সাথেই ঘটে থাকে। বিশেষত প্রথমবার যারা গর্ভধারণ করেন তারা অনেকবেশি দুঃশ্চিন্তা ও দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে হরমোনাল চেঞ্জের কারনে এবং দুঃশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নতার ফলে অনেকেই এরকম স্বপ্ন দেখে থাকেন।
৫. চুলকানি (Itching)
যখন কেউ গর্ভধারণ করেন তখন তার দেহ বেশি পরিমানে ব্লাড পাম্প করে৷ যার কারনে অনেকসময় ত্বক চুলকায়। ত্বকে হালকা চুলকানি হলে এটি সাধারণ ব্যাপার কিন্তু তীব্র পরিমান চুলকানি কোনো স্বাস্থ্যগত অবস্থার লক্ষ্মণ হতে পারে যা "Obstetric cholestasis" বা "Intraheptic cholestasis of pregnancy" নামে পরিচিত।
৬. স্তনবৃন্তে ছিদ্র (Leakage from Nipples)
অনেকে ভেবে থাকেন বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দুগ্ধ উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু ব্যাপারটি এমন নয়। আসলে গর্ভবতী হওয়ার সাথে সাথেই মায়ের দেহ দুগ্ধ উৎপাদন শুরু করে দেয়। এক্ষেত্রে মায়ের দেহ প্রথম যেই দুগ্ধজাত তরল তৈরি করে সেটি কলোস্ট্রাম (Colostrum) হিসেবে পরিচিত।