নিশাত তাসনিম(সায়েন্স বী)-
শীতকালে নিয়মিত গোসলের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? কতদিন পর পর গোসল করা স্বাস্থ্যকর?
শরীর পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি শরীরের ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করার জন্য মানুষ নিয়মিত গোসল করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নিয়মিত গোসল করার প্রচলন আছে। তবে ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ঘনঘন গোসল করার প্রয়োজন নেই।
গোসল করলে ত্বক পরিষ্কার হয়, মৃত কোষ, ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। তাছাড়া গোসল করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, ক্লান্তি দূর হয়, ইমিউন ফাংশন উন্নত হয়। স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর ত্বকে নির্দিষ্ট স্তরের তেল, ভালো ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য মাইক্রো অরগার্নিজমের ভারসাম্য থাকে। গোসল করার ফলে শরীর থেকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও তেল অপসারণ হয়ে যায়, বিশেষত গোসলের পানি যদি গরম থাকে। এর ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়, চুলকানি দেখা দেয়। শুষ্ক, ফাটা ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও অ্যালার্জেন এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ত্বকে ইনফেকশন দেখা দেয়। science
গোসল করার জন্য ব্যবহৃত সাবান মূলত তেল বা চর্বি ও অ্যালকালাইন জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি। সাবান ত্বক থেকে সব ধরনের তৈলাক্ত পদার্থ, ব্যাকটেরিয়া দূর করে দেয়। এর ফলে ত্বকে অনুজীবের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়৷ আমাদের ইমিউন সিস্টেম প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি ও ইমিউন মেমরি তৈরির জন্য কিছু অনুজীব ও ত্বকের ময়লার সাহায্য নেয়। বার বার গোসল করলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। তাছাড়া আমরা নিয়মিত যে পানি দিয়ে গোসল করি তাতে লবণ, ভারী ধাতু, ক্লোরিন, ফ্লোরাইড ও অন্যান্য রাসায়নিক থাকে যা ত্বকে নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
শীতকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার ভয়ে অনেকে নিয়মিত গরম পানি দিয়ে গোসল করেন। সবান ও গরম পানি দিয়ে গোসল করার ফলে ত্বকের বাইরের অংশে থাকা ফ্যাটি এসিড স্তর ও সেবাম (তেল) এর স্তর নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে শীতকালে ত্বক ফেটে যায়, খুশকি উঠে। তবে যেসব মানুষ বাহিরের পরিবেশে কাজ করেন তাদের দেহ প্রতিনিয়ত ধুলাবালি, ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে, ঘাম হয়। এর জন্য তাদের নিয়মিত গোসল করা অনিবার্য। অনেক দিন গোসল না করলে দেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পাশাপাশি তেল, ঘাম ও মৃতকোষ দিয়ে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে মুখে ব্রণ দেখা দেয়। শীতের ভয়ে অনেকে কয়েক মাস গোসল না করে থাকার চিন্তা করেন। এর ফলে Dermatitis Neglecta (DN) হতে পারে। ডিএন হলে ত্বকে মৃত কোষ, তেল, ঘাম এর বাদামী স্তর তৈরি হয় যা দূর করতে পরবর্তীতে বেশ খাটনি পোহাতে হয়। science bee
পরিশেষে বলা যায়, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নিয়মত গোসল করলে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই একদিন পর পর বা শরীর খুব বেশি নোংরা না হলে সপ্তাহে একবার বা দুইবার গোসল করলেই চলে।