স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা চিনি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে যাচ্ছেন নিয়মিতভাবে। তাদের মতামত হলো, ধীরে ধীরে খাবারে চিনি ব্যবহার কমাতে হবে।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে শর্করা জাতীয় খাবার থাকে, তাতে যে পরিমাণ চিনি থাকে, তা আমাদের দেহে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। পরে দেহে তা শক্তি উৎপাদন করে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিনি গ্রহণ করলে দেহের জন্য তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সেক্ষেত্রে ঝকঝকে, ঝরঝরে মিহি দানার চিনির বদলে মোটা দানার বাদামী চিনি গ্রহণ করাই ভালো বলে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা। ঝরঝরে মিহি দানার এই চিনি আকর্ষণীয় প্যাকেটে বাজারজাত করার কারণে ক্রেতাদের বেশি টানে।
অন্যদিকে দেশে তৈরি আখের চিনি স্বাস্থ্যকর হলেও এটি দেখতে লালচে, এর আর্দ্রতা বেশি। অনেক সময় ক্রেতারা এই চিনি কিনতে আগ্রহ দেখান না। কিন্তু দেশীয় চিনিকলে উৎপাদিত চিনি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং শিশু খাদ্য হিসেবে উপযোগী।
শিল্প-কারখানা রিফাইনিং (পরিশোধিত) পদ্ধতিতে চিনি তৈরির সময় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারি পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায়। এই চিনি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিদেশ থেকে আমদানীকৃত চিনি তৈরিতে সবসময় আখ ব্যবহার করা হয় না। আখের বিকল্প উপাদান দিয়েও চিনি তৈরি হয়। এই চিনিতে মিষ্টতা আনতে বাড়তি রাসায়নিক মিশ্রিত করা হয়। আর পরিশোধন প্রক্রিয়ায় চিনিতে যুক্ত হয় আরও ক্ষতিকর নানা উপাদান। পরিষ্কার বা সাদা করার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সালফার, হাড়ের গুঁড়ো।
বাংলাদেশ খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় দেখা গেছে, আমদানিকৃত পরিশোধিত এবং দেশে উৎপাদিত পরিশোধিত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আখ থেকে উৎপাদিত দেশি চিনিতে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ১৬০ দশমিক ৩২, যা পরিশোধিত চিনিতে ১ দশমিক ৫৬ থেকে ২ দশমিক ৬৫ ভাগ। পটাশিয়াম দেশি চিনিতে ১৪২ দশমিক ৯ ভাগ, পরিশোধিত চিনিতে শূন্য দশমিক ৩২ থেকে শূন্য দশমিক ৩৫ ভাগ। ফসফরাস দেশি চিনিতে ২ দশমিক ৫ থেকে ১০ দশমিক ৭৯ ভাগ আর পরিশোধিত চিনিতে ২ দশমিক ৩৫ ভাগ।
আয়রন দেশি চিনিতে শূন্য দশমিক ৪২ থেকে ৬ ভাগ আর পরিশোধিত চিনিতে শূন্য দশমিক ৪৭ ভাগ। ম্যাগনেশিয়াম দেশি চিনিতে শূন্য দশমিক ১৫ থেকে ৩ দশমিক ৮৬ ভাগ আর পরিশোধিত চিনিতে শূন্য দশমিক ৬৬ থেকে ১ দশমিক ২১ ভাগ। সোডিয়াম দেশি চিনিতে শূন্য দশমিক ৬ ভাগ, আর পরিশোধিত চিনিতে শূন্য দশমিক ২ ভাগ।
এসব কারণে বিশেষজ্ঞরা এখন দেশে উৎপাদিত লালচে চিনি খাবার পরামর্শ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন প্যাকেটজাত করে বিক্রি করতেও শুরু করেছে এই চিনি। ক্রেতারা পুরনো দিনের মতো আবার লালচে চিনির অভ্যাস গড়ে তুলছেন।
courtesy: সাদা চিনি নয়, অভ্যাস করুন লাল চিনিতে