Warman Hasbi-
নিষিক্ত হয় মাত্র একটি তবে কেন কোটি কোটি শুক্রাণুর প্রয়োজন!
সাধারণত প্রতিবার ইজেকিউলেশনের সময় ২-৫ ml সিমেন(বীর্য) মুক্ত হয়, এতে কিছু তরল থাকে এবং এই সিমেনে গড়ে ১৫ মিলিয়ন থেকে ২০০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকে। যত বেশি শুক্রাণু সিমেনে থাকবে ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণুর নিষেকের সম্ভাবনাও তত বেশি থাকবে, ধারণা করা হয় একবার ইজেকিউশনে যদি কোন পুরুষের ১ মিলি সিমেনে শুক্রাণুর সংখ্যা ১৫ মিলিয়ন এর কম হয় তবে স্বাভাবিক ভাবে তার বাবা হবার সম্ভাবনা প্রায় নেই।
কারণ শুক্রাণু নারীর ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌছানোর পূর্বে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়, যার ফলে শুক্রাণুর চলার গতি থেমে যায় এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি ডিম্বাণুর কাছে যেতে পারে যার মধ্যে একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারে।
নারীর জননাঙ্গে প্রবেশের পূর্বেই প্রায় কয়েক মিলিয়ন অন্যদিকে হারিয়ে যায় এবং যোনীপথে প্রবেশের পর অম্লীয় পরিবেশের ফলে অনেকগুলো নস্ট হয়। এরপর ও বেশি সংখ্যক তখন ও টিকে থাকে, শুক্রাণুর পাশের এক বিশেষ তরল জাতীয় পদার্থের জন্য, যা শুক্রাণুকে ওই পরিবেশ থেকে রক্ষা করে। এর পর শুক্রাণু গুলো জরায়ু বা ফেলোপিয়ান টিউবে যাওয়ার আগে সার্ভিক্স হয়ে ইউটেরাস নামক স্থান পারি দিয়ে যেতে হয়, সার্ভিক্সে প্রবেশের পথ টি সরু এবং সাধারণত বন্ধ অবস্থায় থাকে, ডিম্বাণু মুক্ত হবার সময়েই শুধু এটা খোলা অবস্থায় থাকে কয়েকদিনের জন্য, এই পথ পারি দিয়ে যাওয়ার সময় এর মিউকাসে আটকে যায় আরো কয়েক মিলিয়ন শুক্রাণু, এর মধ্যে কিছু শুক্রাণু আবার পরবর্তী তে এগিয়ে যায়, আর সামনে যাওয়াগুলো পৌছাতে না পারলে এগুলোর মধ্যে একটা পৌছায় পরে।
এর পর আসে আরেক বাধা, শুক্রাণু গুলোকে নারীদেহ বহিরাগত অবজেক্ট হিসেবে ডিটেক্ট করে, এবং এর ফলে দেহের ইমিউন সিস্টেম আরো কয়েক মিলিয়ন বা থাউজ্যান্ড পরিমাণ শুক্রাণু নস্ট করে ফেলে। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু জরায়ুতে আসে ফ্যালোপিয়ান টিউব হয়ে, ফ্যালোপিয়ান টিউব দুই পাশে বিভক্ত, কিন্তু ডিম্বাণু আসে যেকোন এক পাশের ফ্যালোপিয়ান টিউব দিয়ে, শুক্রাণু গুলো অর্ধেক চলে যায় যে ফ্যালোপিয়ান টিউবে ডিম্বাণু নেই সেদিকে আর বাকি অর্ধেক যায় যেদিকে ডিম্বাণু আছে সেদিকে। এই পর্যায়ে এসে এত মিলিয়ন শুক্রাণু থেকে মাত্র কয়েক হাজার ই টিকে আছে, এগুলো যখন ফ্যালোপিয়ান টিউবে ডিম্বাণু কে নিষিক্ত করতে যায় তখন ফ্যালোপিয়ান টিউবে থাকা এক প্রকার সিলিয়া শুক্রাণুগুলোকে ঠেলে বিপরীত দিকে পাঠিয়ে দেয়, এসময় শুক্রাণুর সামনে চলায় গতি মন্থর হয় আর অনেকগুলো সেই সিলিয়ায় আটকা পরে মারা যায়।
এই পর্যায়ে এসে প্রায় ২০০ মিলিয়ন শুক্রাণুর মধ্যে মাত্র ১০-২০ টির মতই টিকে থাকে যেগুলো ডিম্বাণুর বাইরে থাকা জোনা প্যালোসিডা নামক বিশেষ আবরণে যাওয়ার চেস্টা করে, এর মধ্যে যে শুক্রাণু আগে পৌছায় সেটা ওই আবরণ ভেদ করে ডিম্বাণুর সাথে নিষিক্ত হয়, পরবর্তীতে বাকিগুলো আর ঢুকতে পারেনা।
এতগুলো শুক্রাণু থেকে এভাবে বাধার কারণে মাত্র কয়েকটা শেষ পর্যন্ত ডিম্বাণুর কাছে যেতে পারে, আর যদি কোন পুরুষের পার মিলি সিমেনে ১৫ মিলিয়ন এর কম শুক্রাণু থাকে, অথবা শুক্রাণু গুলো শক্তিশালী না হওয়ায় তাদের সাতার কাটা অনেক ধীর হয়, তাহলে ধারণা করা হয় শেষ পর্যন্ত একটিও শুক্রাণু এত বাধা পার হয়ে ডিম্বাণুর নিকট পৌছাতে পারবেনা ফলে এক্ষেত্রে সেই নারী প্রেগন্যান্ট ও হবেন না।
একটা জরীপে দেখা গেছে প্রায় ১৫% বিবাহিত দম্পতিই বাচ্চা জম্নদানে অক্ষম এবং এদের মাঝে একটা বড় অংশ এই সমস্যায় আছেন যাদের শুক্রাণু কম পরিমাণে মুক্ত হয় বা উৎপাদন হয়।
শুক্রাণু কম হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে যেমনঃ অতিরিক্ত মদ্যপান করা, ধূমপান করা, অস্বাস্থকর পরিবেশে বসবাস, কিছু বিষাক্ত ক্যামিকেল এর প্রভাবে,ডিপ্রেশন, অতিরিক্ত ওজন, ড্রাগ নেয়ার প্রভাবে বা অনেকের জেনেটিক্যাল কারণেও হয়ে থাকে।
এর সমাধান ও আছে তা ব্যাক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়ে থাকে।
Warman Hasbi | Science Bee-বিজ্ঞান গ্রুপ