আতশবাজি বা পটকার মধ্যে থাকে একটি সহজদাহ্য মিশ্রণ, যেটি বাতাসের অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই জ্বলতে পারে। আসলে অক্সিজেনের যোগান দেওয়ার জন্য বাজির মিশ্রণে থাকে সোরা বা পটাসিয়াম নাইট্রেট (KNO3) অথবা কোনও-কোনও ক্ষেত্রে পটাসিয়াম ক্লোরেট (KCLO3)। এই যৌগ দুটিতে আগুন লাগলেই তা থেকে অক্সিজেন বেরিয়ে আসে। দাহ্যপদার্থ হিসাবে বাজির মধ্যে থাকে কাঠকয়লার গুঁড়ো, গন্ধক বা সালফার।
তারাবাজি, ফুলঝুরি, তুবড়িতে স্ফুলিঙ্গ বা ফুলকি তৈরির জন্য সীসার যৌগ, অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার গুঁড়ো মিশিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কয়েক বছর হল বাজারে এসেছে রঙ-বেরঙের আলো সৃষ্টি করা বাজি। এসব বাজিগুলিতে বিভিন্ন রঙের আলোর জন্য বিভিন্ন ধাতব লবণ ব্যবহার করা হয়। যেমন-অ্যান্টিমনি ও আর্সেনিক যৌগ থাকে বলে তুবড়ির আলো হয় উজ্জ্বল সাদা। বেরিয়ামের লবণ সবুজ, সোডিয়াম সল্ট হলুদ, পটাসিয়ামের লবণ হালকা সাদা ও তামার সল্ট নীল আলো তৈরি করে।
বাজি-পটকাতে যে জ্বালানি সালফার ও কার্বন থাকে তা পুড়ে সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়। সালফার-ডাই-অক্সাইড শ্বাসনালী ও ফুসফুসে ঘা বা ক্ষত সৃষ্টি করে। এই গ্যাস বৃষ্টির জল ও কুয়াশার সঙ্গে মিশে তৈরি করে সালফিউরাস ও সালফিউরিক অ্যাসিড। এসব অ্যাসিড ত্বকের ক্ষতি করে। তবে সে পরের কথা। কার্বন মনোঅক্সাইড ফুসফুসের মধ্য দিয়ে প্রাণীর রক্তের সাথে মিশে পরিণত হয় সুস্থির কার্বোক্সিহিমোগ্লোবিনে। ফলে জীবকোষে ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ হতে পারে না। এজন্য মাথাধরা, ক্লান্তিভাব ও আরও বহু উপসর্গ দেখা দেয়।
বাজি-পটকার মিশ্রণের সীসা বা লেড অক্সাইডের বিষক্রিয়ায় রক্তাল্পতা, দেহের অঙ্গগুলির অসাড়তা দেখা দিতে পারে। দেখা গেছে, শিশুদের ক্ষেত্রে সীসার বিষক্রিয়া বেশি। অ্যান্টিমনি দূষণের ফলও সীসার মতোই। আর্সেনিক থেকে দুরারোগ্য চুলকানি, যকৃতের গোলযোগ দেখা দেয়। অনেক ফিজিওলজিসের মতে, আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। ম্যাগনেসিয়াম, বেরিয়াম, প্রভৃতি ধাতু আমাদের শরীরের জৈবিক ক্রিয়া চালানোর জন্য অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও এদের মাত্রা বাড়লে শরীরে দেখা দেয় নানা অসুবিধা। বাজির ধোঁয়ার সঙ্গে এসব পদার্থ প্রথমে ফুসফুসে যায়, তারপর রক্তে মেশে। অনেকসময় অসাবধানতাবশত বাজির বারুদ পেটে চলে যায়, সেক্ষেত্রে অ্যালার্জি ও পেটখারাপ হয়ে থাকে।
বাজি-পটকা পোড়ানো মানেই আগুন নিয়ে খেলা। কাজেই আগুনের ছ্যাঁকা লাগতেই পারে।এমনকি আগুনে পুড়ে জীবন সংশয়ও হয়। শিশুদের এই বিপত্তি বেশি ঘটে।
আনন্দের অতিরিক্ত বহিঃপ্রকাশ/ নিরানন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়
শ ব্দ দূ ষ ণ
পটকা-বাজির সবচেয়ে মারাত্মক দিক হল শব্দদূষণ।
বাজি-পটকার অচমকা শব্দ মাতৃগর্ভে ভ্রূণেরও ক্ষতি করে। গর্ভবতী মহিলারা বাজি পটকার আওয়াজে যদি চমকে ওঠেন, তবে সেই ভয়ের ভাব তাঁদের জরায়ুতে প্রভাব ফেলে। তার ফলে গর্ভাশয়ের জলীয় পদার্থ (Amniotic Fluid) হঠাৎ সংকুচিত হয়ে গর্ভস্থ শিশুর অপরিণত মস্তিষ্কে ব্যাঘাত ঘটায়, এর জন্য জন্ম হতে পারে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর।