আমাজন ধ্বংস হলে হবে অনেক ক্ষতি । আমাজনকে পৃথিবীর ফুসুফুস বলা যায়, কেননা ফুসফুসটা না থাকলে যেমন নিশ্বাস নেয়ার কথা কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমন করেই - এত কার্বন-ডাই -অক্সাইডের ভিড়ে আমরা নিশ্বাস নিতে পারবো না।
আর শুধু মাটির পৃথিবীতেই নয়, এই বিপুল পরিমাণের কার্বন-ডাই-অক্সাইড কিন্তু জলভূমিকেও ছেড়ে কথা বলবে না। সমুদ্রের পানিতে মিশে গিয়ে পানির অম্লত্ব বাড়িয়ে দেবে, অর্থাৎ পানির চরিত্র হয়ে পড়বে অনেকটা এসিডের মতো। এতে মারা যাবে অসংখ্য সামুদ্রিক জীব, সমুদ্র তলদেশের শৈবাল-মস-গুল্ম মারা যাবে।
এক কথায়, পৃথিবীর প্রতিটি কোণ-গলি-ঘুপচি আক্রান্ত হবে বিপুল এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের।
৩। এতো গেল আমাদের বেঁচে থাকার কথা। এবার আসুন কিছুক্ষণের জন্য হলেও অন্য প্রাণের কথা চিন্তা করে দেখি।
বিশ্বের সবচাইতে সমৃদ্ধ প্রাণিবৈচিত্র্যের আবাসস্থল আমাজন। পৃথিবীর প্রতি ১০ টি প্রজাতির মধ্যে ১ টি এখানে বাস করে। তার মানে, আমাজন ধ্বংস হয়ে গেলে হারাবে
-
৪০ হাজার প্রজাতির প্রাণি
-
২.৫ মিলিয়ন বা ২৫ লক্ষ প্রজাতির পতঙ্গ
-
১৩০০ প্রজাতির পাখি
-
৪০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী
-
৪০০ প্রজাতির উভচর প্রাণি এবং
-
৩১ মিলিয়ন আদিবাসী মানুষ যারা শত শত বছর ধরে বসবাস করে আসছে আমাজনের বুকে।
৪। মাটিকে ধরে রাখার জন্য যখন কোন গাছ থাকবে না, তখন এই বিরাট এলাকা জুড়ে শুরু হবে মাটি ক্ষয়। আমাজন নদীর অববাহিকা বা বেসিনটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অববাহিকা। আর এই ভূমি ক্ষয়ের সমস্ত অনুর্বর মাটি গিয়ে পড়বে আমাজন নদীতে, আমাজন বেসিনে জমবে এই মাটি।
পানিতে মিশে গেলে সেই মেটে পানি গিয়ে পড়বে আটলান্টিক পর্যন্ত। ব্যাহত হবে আমাজন নদীর বৈচিত্র্যময় জলজীবন।
৫। পৃথিবীর ৩০ শতাংশ উদ্ভিদজাত ঔষধের উৎস আমাজন। এর মাত্র ১ শতাংশ সপুষ্পক ঔষধী গাছ আমরা নিয়মিত ব্যবহার করি। এখনও একটা বিরাট অংশ পড়ে রয়েছে, যেটা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোন গবেষণাই করা হয় নি।
। আমাজন রেইনফরেস্টের সবচেয়ে বড় প্রভাব পৃথিবীর জলবায়ুতে। গাছ প্রস্বেদনের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি ত্যাগ করে। এই পানি জলীয়বাষ্প হিসেবে মেঘের সঙ্গে যুক্ত হয়, যা পৃথিবীর বৃষ্টিপাতে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। যেমন শুধুমাত্র একটা ওক গাছ বছরে ৪০ হাজার গ্যালন (১ লাখ ৮২ হাজার লিটার) পানি ত্যাগ করে।
গাছ মাটি থেকে যে পরিমাণ পানি শুষে নেয়, তার প্রায় ৯৭ শতাংশই ফিরিয়ে দেয় প্রকৃতিতে। আর তাই বিশ্বের মোট পানির ১০ শতাংশ আসে উদ্ভিদ থেকে।
এজন্যই এই জঙ্গলকে রেইনফরেস্ট বলা হয়। নিজের বৃষ্টি সে নিজেই তৈরি করে।
অর্থাৎ যত বেশি এই জঙ্গল উজাড় করা হবে, দেখা দেবে খরা, বৃষ্টিহীনতা - যা এই অঞ্চলের বাস্তুসংস্থানের জন্য ক্ষতিকর।