ট্রমা হলো একধরনের মনোশারীরিক চাপমূলক ঘটনা। কোনো ভয়াবহ ঘটনার অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষদর্শীর মনে ট্রমার সঞ্চার করতে পারে। এর নমুনা হতে পারে শারীরিক বা যৌন নির্যাতন, মারাত্মক দুর্ঘটনা, সামরিক সংঘাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি।
কোনো ব্যক্তি যখন তার সামনে কোনো করুণ মৃত্যু সংঘটিত হতে দেখে অথবা অন্য কোনো মানুষকে হত্যা করতে দেখে কিংবা প্রচণ্ড আঘাত পেতে দেখে, তখন ব্যক্তির মাঝে ট্রমার সৃষ্টি হয়। ট্রমার সময় ব্যক্তি একধরনের অসহায়ত্ব অনুভব করে থাকে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে এই স্মৃতির ভয়াবহতা বাড়তেই থাকে। এর ফলে তারা আতঙ্কিত আর উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাকে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বলা হয়। এটি একধরনের অ্যাংজাইটি অর্ডার, যা কোনো দুঃখজনক ঘটনা দেখে বা তার অভিজ্ঞতা লাভের পর দেখা দেয়। কমপক্ষে এক মাস ধরে এর লক্ষণ-উপসর্গ থাকে। লক্ষণ-উপসর্গে ব্যক্তি চরম দুর্দশা এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাতের সম্মুখীন হয়।
রোগের কারণ
• কোনো ধরনের জীবন বিপন্নকারী পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া।
• শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া বা সরাসরি প্রত্যক্ষ করা।
• ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন- ঝড়, তুফান, ভূমিকম্পের মুখোমুখি হওয়া।
• অাকস্মিক সামাজিক পরিবর্তন, যেমন- দাঙ্গা, বিপ্লব, অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করা।
এছাড়াও পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার হবার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো-
ট্রমাটিক ঘটনাটির-
• ধরন
• প্রচণ্ডতা
• অাকস্মিকতা
• ব্যপ্তিকাল
• সান্নিধ্য
রোগের উপসর্গ
PTSD-তে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচণ্ড ভয় আর উদ্বেগ অনুভব করেন। এর কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো-
ঘটনার আবেগপূর্ণ পুনরাবৃত্তি: আক্রান্ত ব্যক্তি ঘটনাটিকে নিয়ে বারবার দুঃস্বপ্ন দেখেন আর প্রায়ই জাগ্রত অবস্থায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখেন। এর ফলে ব্যক্তি প্রতিবার সেই তীব্র মানসিক আঘাত আর ভয় অনুভব করেন যা ঘটনা ঘটার সময় অনুভব করেছিলেন। এ সময় নানা শারীরিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, গা গোলানো ভাব আর আতঙ্কিত হয়ে পড়া।
এড়িয়ে চলা: আক্রান্ত ব্যক্তি এমন সব আলোচনা, স্থান এবং পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেন, যা সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে পারে।
সবসময় অধিক সতর্কতা অবলম্বন: আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় সতর্ক থাকেন আর সুরক্ষিত পরিবেশেও বিপদের আশঙ্কা নিয়ে ভীত হয়ে থাকেন। তার ঘুমাতে অসুবিধা হয় এবং বারবার চমকে ওঠেন।
অনুভূতিহীন হয়ে পড়া: আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের প্রতি আবেগ অনুভব করেন না এবং ক্রমশ বিনোদন কাজে আনন্দ হারিয়ে ফেলেন। এক্ষেত্রে তার পারিপার্শ্বিকতা অনুভূতির বিকৃতি অথবা সবকিছু অবাস্তব বলে মনে হতে থাকে।
অপরাধবোধে ভোগা: আক্রান্ত ব্যক্তি ট্রমাটিক ঘটনার পর নিজে বেঁচে যাওয়ার অপরাধবোধে ভোগেন। কারণ তিনি মনে করেন যে, অন্যরা মরে গেছে অথচ এত কিছুর পরও তিনি বেঁচে আছেন অথবা বেঁচে থাকার জন্য তাকে এমন কিছু করতে হয়েছে যা ঠিক নয়, এ কথা তিনি বার বার মনে করতে থাকেন।
এ রোগের পরিপূর্ণ উপসর্গ-লক্ষণগুলো প্রচন্ড স্পষ্টভাবেই রোগীর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। রোগী এবং তাদের পরিবার-পরিজন এ রোগের কারণে নানা রকম উদ্বেগের শিকার হন। এই রোগ অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রের দক্ষতার ওপর আঘাত হানে এবং সামাজিক নানা কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে তোলে।
Source : Roar Bangla