হাতের লেখার বৈশিষ্ট্য দেখে ব্যক্তিত্ব বোঝার বিজ্ঞানকে বলে গ্রাফোলজি।
শব্দটা গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে। গ্রিকভাষীরা ‘গ্রাফ’ ওর ‘ওলজি’কে মিশিয়ে দিয়ে ‘গ্রাফোলজি’ বানিয়েছেন। বাংলা করে বলা যায়, আকার বা লেখা দেখে বিশ্লেষণ। রসায়ণ, জীববিজ্ঞান কিংবা মনোবিজ্ঞানের মতো এই বিজ্ঞানও সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষালব্ধ। বহু বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত। আবার ঠিক উল্টোপথে গিয়ে লেখার ধরন অন্যরকম করে কোনও বিশেষ স্বভাব পাল্টে পেলার নাম ‘গ্রাফোথেরাপি’।
এই বিজ্ঞানের চর্চা চলছে সেই অ্যারিস্টটলের সময় থেকে। বর্তমানে অসংখ্য প্রয়োজনে এর প্রয়োগ ঘটে। অপরাধী শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে মানুষের স্বাস্থ্যগত তথ্য পেতেও এর ব্যবহার রয়েছে। গ্রাফোলজিস্ট ক্যাথি ম্যাকনাইট জানান, কেবল হাতের লেখা বিশ্লেষণ করেই মানুষের ৫ হাজার রকমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বের করা সম্ভব।
কোনও হস্তলিপিবিশারদ যখন কোনও মানুষের হাতের লেখা পান, তখন তিনি সেই লেখা থেকে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বের করে নিয়ে আসেন সেই ব্যক্তিটির মানসিক, চারিত্রিক, দৈহিক ও পেশাগত নানা অসঙ্গতি। এই সব অসঙ্গতির কথা হয়ত সেই মানুষটি নিজেও জানতেন না। হাতের লেখার ব্যাপারে একটি কথা বলে রাখা ভাল, যে-কোনও হাতের লেখা হলেই কিন্তু সঠিক বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না। এ-৪ সাইজের কোনও কাগজে অন্তত দেড় পাতা বা কোনও সাদা কাগজে ১২৫ লাইনের বেশি কোনও লেখা একজন হস্তলিপিবিশারদের কাছে গ্রাহ্য। আর একটি কথা মনে রাখতে হবে, লেখাটি কিন্তু কোনও পাতা বা বই বা কোনও কিছু থেকে দেখে লিখলে চলবে না। লিখতে হবে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে অর্থাৎ মাথা খাটিয়ে। আর একটু পরিষ্কার করে বলি, চিঠি, ডায়েরির পাতা, কোনও প্রশ্নের উত্তর, কোনও রচনা এ-সব জাতীয় লেখা লিখলেই হবে। মুখস্থ করে লিখলেও কোনও আপত্তি নেই। শুধু লেখার সময় কোনও কিছু দেখা চলবে না এবং শেষে স্বাক্ষর করতে হবে। কীভাবে অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো গ্রাফোলজিও সম্পূর্ণরকম অভ্রান্ত। বিষয়টিকে পুরোপুরি শারীরবৃত্তীয় ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। মস্তিস্কে মোটামুটি ১৬ লক্ষ কোষ আছে। কথা বলবার সময এই কোষের মাত্রা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাজ করে। অথচ আমরা যখন লিখি, তখন ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কোষ ক্রিয়াশীল হয়। সংখ্যার বিচারে সেটা প্রায় ১৩ লক্ষ কোষের সমান। লেখা মূলত তিনটি বিষয়ের ওপরে নির্ভর করে। মস্তিষ্ক, পেশি এবং লেখবার ইচ্ছে। এই তিনটির কোনও একটির অনুপস্থিতিতে কিন্তু লেখা সম্ভব নয়। মস্তিস্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের অবচেতন অংশ থেকে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। এই উদ্দীপনা সুষুম্নাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন স্নায়ুর মাধ্যমে পেশিতে ছড়িয়ে পড়ে। তার পরে ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে যায় সারা শরীরে। পেশির এই উদ্দীপনা কলমকে লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করে। তাই একজন হস্তলিপিবিশারদের কাছে বাঁ হাত কিংবা ডান হাত, পা, মুখ বা শরীরের অন্য যে-কোনও অংশ দিয়ে লেখার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।
( বি:দ্র : এখানে ছবি insert যাচ্ছে ্না তাই আপনাকে ছবি দিয়ে বোঝাতে পারলাম না তবে আমি একটা লিংক দিচ্ছি সেখান থেকে আশা করি বুঝবেন )