অঞ্জন আচার্য
পুরাণ শব্দটি সৃষ্ট পুরা+ন যোগে। ‘পুরা’ অর্থ পূর্বে বা প্রাচীনকালে এবং ‘ন’ অর্থ সংঘটিত বা জাত, অর্থাৎ পূর্বে সংঘটিত বা সৃষ্ট হয়েছে এমন কিছুকে পুরাণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে অভিধানে। বুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এ শব্দটি সংস্কৃত ‘পুরাতন’ থেকে এসে প্রাকৃত ‘পুরাণ’ শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে। অর্থাৎ পুরাণের ধাতুগত অর্থ পুরাতন। সংস্কৃত শব্দজাত এ শব্দটির নানা অর্থ করা হয়েছে বিভিন্ন অভিধানে। যেমন : বিশেষ্যরূপে পুরাবৃত্ত, ইতিহাস, ইতিকথা, ইতিবৃত্ত শব্দগুলো এ শব্দের সম্পূরক অর্থ বহন করে। তেমনই বিশেষণরূপে প্রাচীন, পুরা, পুরোনো, পুরাতন, পুরাণ, অনাদি ইত্যাদি শব্দও প্রকাশ করে একই অর্থ। শব্দটিকে আখ্যান ও পূর্বতন এই দুই অর্থে গ্রহণ করা যায়।
মিথ শব্দে। গ্রিক শব্দ ‘মিথস্’ থেকে ‘মিথ’ শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ গল্প, কিংবদন্তি। অন্যদিকে ল্যাটিন ভাষায় ‘মিথস্’ শব্দটির অর্থ হলো নির্দিষ্ট কোনো জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিদ্যমান অতিমানবীয় শক্তির প্রতি বিশ্বাস। কারও মতে, গ্রিক ‘মুথোস’ শব্দ থেকে এসেছে ল্যাটিন মিথুস শব্দ। এ শব্দে নিহিত ছিল সংগীত ও কবিতার ধ্বনিময়তা। [সূত্র : নজরুলের কবিতায় মিথ ও লোকজ উপাদান, মাহবুব হাসান, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা, বৈশাখ ১৪০৮/এপ্রিল ২০০১, পৃষ্ঠা : ১২]। কলকাতা ‘আকাদেমি অব ফোকলোর থেকে প্রকাশিত, ড. দুলাল চৌধুরী সম্পাদিত ‘বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ’ বইয়ে ‘লোকপুরাণ’ ভুক্তিতে লেখা হয়েছে— “মানুষের আদিতম সাহিত্যকৃতি লোকপুরাণ—তথা মিথ্ সম্পূর্ণতই মৌখিক ঐতিহ্যানুসারী। গ্রিক শব্দ ‘মুথোস্’ [অর্থাৎ মুখ], ‘মিথ্’ এবং ‘মাউথ্’—দুই শব্দের উৎস। বর্ণমালা সৃষ্টির বহু সহস্র বছর আগেই আদিম লোকপুরাণের সৃষ্টি; প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্রগুলির মধ্যে ঐ আদিম পুরাণগুলির হদিশ খুঁজে পাওয়া যায়; পরবর্তী সময়ে পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক পরিবেশে তাদের বাইরের কাঠামো বদলে যায় ধীরে-ধীরে, যদিও ভিতরের কাঠামোটি মোটামুটি অপরিবর্তিতই থাকে।”