Nahida Afrin-
চকলেট তৈরির মূল উপকরণ হলো কোকোয়া গাছের বীজ! দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকা আমাজন উপত্যকার উদ্ভিদ এটি। কোকোয়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Theobroma cacao। গ্রীক ভাষায় Theos মানে ঈশ্বর এবং broma মানে খাদ্য। অর্থাত্ এটি ঈশ্বরের খাদ্য! কোকোয়া গাছ খুব বেশি বড় হয় না। বড়জোর ২০-২৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। এটি চিরসবুজ বৃক্ষ এবং গাছের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। কাণ্ড ও ডালে সাদা ও গোলাপি রঙের ছোট ছোট, থোকা থোকা ফুল ফোটে। কোকোয়া ফল দেখতে অনেকটা নাশপাতির মতো। পেকে গেলে মেটে লাল বা হলুদ রং ধারণ করে। ভেতরে ছোট ছোট বীজ থাকে। এই বীজ শুকিয়ে নিয়ে গাজানোর পর তা গুঁড়ো করা হয়। এই গুঁড়ো থেকেই তৈরি হয় চকলেট।
আসলে চকলেট তৈরিতে কোকোয়া ব্যবহার করা হয় দুভাবে। এর গুঁড়ো অথবা কোকোয়ার মাখন। সাধারণ মিষ্টি চকলেট বা মিল্ক চকলেটে ব্যবহার করা হয় কোকোয়ার মাখন, চিনি, দুধ ও অন্যান্য উপকরণ। এতে কোকোয়ার গুঁড়ো মেশানো হয় না। ডার্ক চকলেট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কোকোয়ার গুঁড়ো।
প্রায় তিনশ বছর ধরে আমেরিকা ও মেক্সিকোতে কোকোয়া গাছের চাষ হচ্ছে। এর ব্যবহারের সবচেয়ে পুরোনো পাওয়া গেছে লিখিতভাবে। এটি লেখা হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ১১০০ অব্দে! মেসোআমেরিকান লোকেরা কোকোয়া থেকে তৈরি করত বিশেষ ধরনের পানীয়। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯৫ সালে মধ্য আমেরিকা থেকে কোকোয়ার বীজ ইউরোপে নিয়ে আসে। চকলেট পানীয় তৈরি করতে ইউরোপীয়রা এতে দুধ ও চিনি যোগ করে, যা মেক্সিকানরা করত না! পরে ফরাসীরা এই গাছের সন্ধান পায়। ১৬৫৭ সালে এক ফরাসী নাগরিক 'চকলেট হাউস' প্রতিষ্ঠা করে একে জনপ্রিয় করে তোলেন। দীর্ঘদিন চকলেট পানীয় হিসেবেই খাওয়া হতো।
১৯ শতকে Briton John Cadbury প্রথম চকলেটকে শক্ত আকার দিতে সক্ষম হন। বর্তমান সময়ের আধুনিক চকলেট বারের তিনিই জনক। ১৮৯০ থেকে ১৯৫০ সালে কোকোয়া চাষের প্রসার ঘটে। আমেরিকা-মেক্সিকো তো বটেই, এর চাষ শুরু হয় আইভরি কোস্ট, ঘানা, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনে। মালয়েশিয়া, নিউগিনি ও ইন্দোনেশিয়াতেও কোকোয়া চাষ করা হয়।
চকলেট নানা উপলক্ষের উপহার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। নববর্ষ, ঈস্টার, বড়দিন, জন্মদিন, ভালবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের চকলেট তৈরি করে থাকে চকলেট কোম্পানিগুলো। ডিম, খরগোশ, মুদ্রা ও হৃদয় আকৃতির চকলেট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
চকলেট নিয়ে গবেষণারও অন্ত নেই! যাঁরা নিয়মিত চকলেট খান, তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায় এমনটা বলেছেন সুইজারল্যান্ডের কিছু গবেষক। তাঁরা প্রায় ৩৩ হাজারের বেশি নারীর ওপর একটা জরিপ চালিয়ে এই তথ্য দেন। তবে চকলেট অধিক পরিমাণে খাওয়া যাবে না। চকলেটে চর্বি ও চিনি থাকায় এতে উচ্চ পরিমাণে ক্যালরিও আছে! ডার্ক চকলেটে কোকোয়ার পরিমাণ বেশি থাকায় তা বেশি উপকারী।এ গবেষণাটি করেছেন ইতালির লেককুইল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ৯০ জন বয়স্ক, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া রোগীর ওপর এ পরীক্ষণটি করা হয়। বৃদ্ধদের টানা আট সপ্তাহ কোকো পানীয় পান করানো হয় বিভিন্ন মাত্রায়। উচ্চ মাত্রার পানীয় যাঁদের দেয়া হয়েছিল, তাঁদের স্মৃতিশক্তি বাড়তে দেখা যায়!