মুড সুইং কি? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+6 টি ভোট
3,501 বার দেখা হয়েছে
"মনোবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (900 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন

2 উত্তর

+3 টি ভোট
করেছেন (123,400 পয়েন্ট)
নির্বাচিত করেছেন
করেছেন (47,700 পয়েন্ট)
Nishat Tasnim -

মুড সুইং মানুষের বিশেষ একটি মনস্তাত্ত্বিক পর্যায়। হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই মন-মেজাজ পরিবর্তন হওয়াকে মুড সুইং বলে। যেমন: হাসি-ঠাট্টার মাঝে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যাওয়া, বিষন্নতায় ভোগা, রেগে যাওয়া। আবার কিছু সময় পর মন ভালো হয়ে যাওয়া, এইসব মুড সুইং এর মধ্যে পড়ে। পুরুষ ও নারী উভয়ের মাঝেই মুড সুইং দেখা যায়, তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের মাঝে মুড সুইং এর মাত্রা বেশি।

মুড সুইং এর কারণ :

আমাদের স্নায়ুকোষ বা নিউরণ থেকে নিঃসৃত এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ হলো নিউরোট্রান্সমিটার। মানবদেহে প্রায় ৪০ ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার আছে, এর মধ্যে দুটি নিউরোট্রান্সমিটার হচ্ছে সেরোটোনিন ও নরপাইনফ্রাইন। সেরোটোনিন এর কাজ হচ্ছে ঘুম, আবেগ, মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা। অন্যদিকে, নরপাইনফ্রাইন এর কাজ হচ্ছে স্মৃতি, শারীরিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা। এই হরমোনগুলোর তারতম্যের ফলে মুড সুইং দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, অস্থিরতা, ডিপ্রেশন, কাজের চাপ, ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত কফি পান, মাদকাসক্তি, বাইপোলার ডিসঅর্ডার এর ফলে মুড সুইং হতে পারে।

নারীদের মুড সুইং :

সাধারণ নারীদের অধিক মুড সুইং এর জন্য হরমোনের তারতম্যকে দায়ী করা হয়। তাছাড়া মাসিক, গর্ভাবস্থাও মুড সুইংকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। মাসিকের সময় বা আগে নারীদের মুড সুইংকে Premenstrual Syndrome বা PMS বলে৷ মূলত মাসিক এর সময় ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন এর প্রভাবে মুড সুইং হয়, মেজাজ খিটখিটে থাকে, সামান্য কারণে রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। আবার, গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের ফলে মুড সুইং দেখা দিতে পারে। এই সময় মেডিটেশন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম মুড সুইং অনেকটাই কমিয়ে দেয়।

পুরুষদের মুড সুইং :

পুরুষদের মাঝেও হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য মুড সুইং হয়। একে বলা হয় Irritable Male Syndrome (IMS)। মূলত দিনের বিভিন্ন সময় টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনের তারতম্য পুরুষদের আচরণে প্রচুর প্রভাব ফেলে৷ টেস্টোস্টেরনের পাশাপাশি মেয়েদের মতো ছেলেদেরও ইস্ট্রোজেন আছে। ছেলেদের এই ইস্ট্রোজেন হরমোন এর মাত্রা যত বেশি বাড়ে তত বেশি মুড সুইং, বিরক্তি অনুভব হয়। তাছাড়া বয়স বৃদ্ধি, মানসিক চাপ, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, খাদ্যাভ্যাস, ওজনের পরিবর্তন, ঘুমের অভাব ইত্যাদি টেস্টোস্টেরন নিঃসরণ ও মুড সুইং এ ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

মুড সুইং কাটিয়ে তুলার জন্য মেডিটেশনের অভ্যাস করতে হবে, দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় অতিরিক্ত পান করা যাবেনা, প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে, খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার রাখতে হবে, বন্ধু বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে হবে।
+2 টি ভোট
করেছেন (17,750 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন

অদ্রিতা রায়-

মুড সুইং খুব একটা অপরিচিত টার্ম নয়। মানুষের একটি বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক পর্যায় এই মুড সুইং। যখন একজন মানুষের মেজাজে খুব দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং হতেই থাকে, সেই অবস্থাকে মুড সুইং নামে অভিহিত করা হয়। যেমন ধরুন, আপনার মেজাজ এই ভালো তো এই বিগড়ে যাচ্ছে, কখনো হাসছেন তো পরক্ষণেই হতাশায় চুপসে যাচ্ছেন, ক্রমাগত বিপরীতমুখী সব আবেগের মুখোমুখি হচ্ছে আপনার মন; তবে বুঝে নিন, আপনি মুড সুইংয়ের অদ্ভুত অবস্থায় পড়েছেন।
নারী পুরুষ উভয়ের হলেও নারীর মধ্যে এর প্রবোণতা বেশি দেখা যায়।

মুড সুইং কেন হয়?

মুড সুইং সাধারণ দুটি কারণে হয়। এগুলো হলো:

1.শারীরিক বা হরমোনজনিত কারণে।

2.মানসিক বা আবেগজনিত কারনে।

1. শারীরিক বা হরমোনজনিত কারণে:
যেহেতু মুড সুইং নারীদের বেশি হয় সেহেতু এর পেছনে অবশ্যই এমন কিছু কারণ রয়েছে তা পুরুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মেয়েদের মুড সুইং হয় কিছু শারীরিক কারণে। মুড সুইংয়ের জন্য দায়ী প্রধান দুটি কারণ হল পিরিয়ড এবং গর্ভধারণ। পিরিয়ডের সময় মুড সুইং সল্পমেয়াদী হলেও গর্ভধারণের মুড সুইং দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে।

পিরিয়ডের আগে অর্থাৎ ওভ্যুলেশান এর পর নারীর সেক্স হরমোন এস্ট্রোজেন (Estrogen) এবং প্রোজেস্টেরন (Progesterone) নিঃসরণ কমে যায়। এ হরমোন দুটির নিঃসরণ হ্রাস বৃদ্ধির ফলে মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারের (Neurotransmitter) নিঃসরণ ব্যহত হয়। ডোপমিন (Dopamine) ও সেরোটোনিন (Serotonin) হল নিউরোট্রান্সমিটার গুলোর মধ্যে অন্যতম যারা ঘুম, মন-মেজাজ এবং প্রেরণার জন্য দায়ী। মুড সুইংকে প্রভাবিত করে এরা। এ হরমোন গুলোর জন্য পিরিয়ডের সময় রাগ, বিরক্তি, মন খারাপ, বিষন্নতা, নিঃসঙ্গতা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া কাজ করে।

পিরিয়ডের শেষে যখন এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ স্বাভাবিক হয়ে যায় তখন রাগ, অভিযোগ, বিরক্তি সব দূর হয়ে যায়। অর্থাৎ মুড সুইং বন্ধ হয়ে যায়।

পিরিয়ডের সময় প্রচন্ড ব্যাথার জন্যেও সবকিছু বিরক্ত লাগে। এরজন্য মুড সুইং দেখা যায়। পিরিয়ডের সময়টা খুব নমনীয় সময়। এ সময় মুড সুইংয়ের জন্য অভিযোগ, বিরক্তি এসব বেশি কাজ করে। তাছাড়া ওভ্যুলেশান চলার সময়ও ঘন ঘন মুড সুইং দেখা যায়।

প্রেগন্যান্সির সময় প্রচন্ড রকমের মুড সুইং হয়। দীর্ঘ নয় মাস এ মুড সুইংয়ের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। ক্রমাগত অনাগত সন্তানের চিন্তা, সন্তানের সুস্থতা, আদর্শ অভিভাবক হতে পারবে কিনা এসব ভাবনার ফলে মুড সুইং হয়। এসময় মুড সুইং খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। মানসিক দুশ্চিন্তা বিষন্নতা এসময় বেশি দেখা যায়। সাধারণত মুড সুইং বেশি হয় প্রথম ৬-১০ সপ্তাহে আর শেষ ৩ সপ্তাহে যখন শরীর সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। প্রেগন্যান্সির সময় এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ কমে থেকে। এ হরমোন গুলোর খম নিঃসরণে মুড সুইং হয়।

সন্তান জন্মদানের পরে শারীরিক এবং মানসিক কিছু পরিবর্তন আসে। এ পরিবর্তন গুলোর সাথে মানিয়ে নিতে কিছু অসুবিধা হয় প্রথম দিকে। এরজন্যও মুড সুইং হয়। একে পোস্ট প্রেগন্যান্সি মুড সুইং বলা হয়।

2. মানসিক বা আবেগজনিত কারনে:
মানসিক কারণে মুড সুইং নারী পুরুষ উভয়ের হয়। পড়াশোনার চাপ, কর্মস্থলের জটিলতা, পারিবারিক দায়িত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, রেজাল্টের টেনশন ইত্যাদি কারনে মুড সুইং হয়।

আবার কিছু মানুষের কারনে ছাড়াই এমনি এমনি মুখ সুইং হয়। হাসতে হাসতে নীরব হয়ে যাওয়া, গান শুনতে শুনতে গানে হারিয়ে যাওয়া, আশেপাশে এতো মানুষ থাকার পরও একা লাগা, অল্পতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া এগুলো মুড সুইংয়ের অংশ।

কারো কারো মুড সুইং এতো দ্রুত হয় যে নিজেরাও বুঝতে পারে না। দ্রুততম এই মানসিক অবস্থার পরিবর্তনে অনেকে বিরক্ত হয়। বিরক্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিরক্ত না হয়ে সেসব মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।

সাবধানতা কখন দরকার?
1.নিজের ক্ষতিসাধন করতে চাচ্ছেন, জীবন শেষ করে দেয়ার চিন্তাও আসছে কখনো কখনো।
2.বন্ধুবান্ধব, আপনজনদের এড়িয়ে যাচ্ছেন, কাজ করতে এমনকি চলাফেরা করতেও অনীহা হচ্ছে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে।
3.মানুষের মুখোমুখি হতে চাচ্ছেন না, কোনো অপ্রীতিকর আচরণে লিপ্ত হচ্ছেন।

এসব লক্ষণ আবিস্কার করল এবার একটু সামলে চলুন, হয়তো আপনার চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন!

মুড সুইং এর ফলাফল
মুড সুইং হলে মানুষ হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায়, ওভার রিয়্যাক্ট করে। প্রচণ্ড চেষ্টা করে সবার সাথে নরমাল বিহেভ করার। মুড সুইং নামের ঝড় বয়ে গেলে সেই ঝড়ের আঁচ এসে পড়ে কাছের মানুষ গুলোর উপর। দেখা যায় অকারণে ছোট বোনকে বকছেন, নয়তো গৃহ পরিচারিকার সাথে খারাপ আচরণ করছেন।

মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে যা করনীয়

মুড সুইং ঘন ঘন যার হয়, তার জন্য এটি একটি অভিশাপের মতো। এই অভিশাপ থেকে বাঁচতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর এবং মন দুটোই ভালো থাকে এবং মানসিক চাপ কম হয়। এতে মুড সুইং কমে যায়। এছাড়াও মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে করণীয় গুলো হলো:

  •  সময়সূচী মেনে চলার অভ্যাস করুন
  • ব্যায়াম একটি ভালো উপায় মানসিক চাপ কমানোর
  • পর্যাপ্ত ঘুম অত্যাবশ্যক
  • খাদ্য তালিকা হোক সুষম
  • যোগ ব্যায়ামে আসবে মনের প্রশান্তি
  • মানসিক পীড়া পাশ কাটান যতটা সম্ভব
  • গুটিয়ে না থেকে নিজেকে প্রকাশ করতে শিখুন।
  • একজন অন্তত মানুষ আপনার থাকা চাই, হোক সে বন্ধু বা পরিবারের কেউ, কিংবা জীবনের বিশেষ সেই মানুষটি যার কাছে মন একদম মেলে ধরতে পারবেন।


তথ্যসূত্র  : Roar media ,daily bangladesh , bd protidin , priyo

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+10 টি ভোট
2 টি উত্তর 5,689 বার দেখা হয়েছে
+10 টি ভোট
3 টি উত্তর 643 বার দেখা হয়েছে
29 ডিসেম্বর 2020 "মনোবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Ahnaf Tahmid (5,090 পয়েন্ট)
+8 টি ভোট
3 টি উত্তর 2,432 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 675 বার দেখা হয়েছে
+12 টি ভোট
2 টি উত্তর 715 বার দেখা হয়েছে

10,775 টি প্রশ্ন

18,456 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

265,669 জন সদস্য

206 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 206 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  2. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  3. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  4. 789winspa

    100 পয়েন্ট

  5. ChristoperMi

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...