Nishat Tasnim -
মুড সুইং মানুষের বিশেষ একটি মনস্তাত্ত্বিক পর্যায়। হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই মন-মেজাজ পরিবর্তন হওয়াকে মুড সুইং বলে। যেমন: হাসি-ঠাট্টার মাঝে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যাওয়া, বিষন্নতায় ভোগা, রেগে যাওয়া। আবার কিছু সময় পর মন ভালো হয়ে যাওয়া, এইসব মুড সুইং এর মধ্যে পড়ে। পুরুষ ও নারী উভয়ের মাঝেই মুড সুইং দেখা যায়, তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের মাঝে মুড সুইং এর মাত্রা বেশি।
মুড সুইং এর কারণ :
আমাদের স্নায়ুকোষ বা নিউরণ থেকে নিঃসৃত এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ হলো নিউরোট্রান্সমিটার। মানবদেহে প্রায় ৪০ ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার আছে, এর মধ্যে দুটি নিউরোট্রান্সমিটার হচ্ছে সেরোটোনিন ও নরপাইনফ্রাইন। সেরোটোনিন এর কাজ হচ্ছে ঘুম, আবেগ, মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা। অন্যদিকে, নরপাইনফ্রাইন এর কাজ হচ্ছে স্মৃতি, শারীরিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা। এই হরমোনগুলোর তারতম্যের ফলে মুড সুইং দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, অস্থিরতা, ডিপ্রেশন, কাজের চাপ, ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত কফি পান, মাদকাসক্তি, বাইপোলার ডিসঅর্ডার এর ফলে মুড সুইং হতে পারে।
নারীদের মুড সুইং :
সাধারণ নারীদের অধিক মুড সুইং এর জন্য হরমোনের তারতম্যকে দায়ী করা হয়। তাছাড়া মাসিক, গর্ভাবস্থাও মুড সুইংকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। মাসিকের সময় বা আগে নারীদের মুড সুইংকে Premenstrual Syndrome বা PMS বলে৷ মূলত মাসিক এর সময় ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন এর প্রভাবে মুড সুইং হয়, মেজাজ খিটখিটে থাকে, সামান্য কারণে রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। আবার, গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের ফলে মুড সুইং দেখা দিতে পারে। এই সময় মেডিটেশন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম মুড সুইং অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
পুরুষদের মুড সুইং :
পুরুষদের মাঝেও হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য মুড সুইং হয়। একে বলা হয় Irritable Male Syndrome (IMS)। মূলত দিনের বিভিন্ন সময় টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনের তারতম্য পুরুষদের আচরণে প্রচুর প্রভাব ফেলে৷ টেস্টোস্টেরনের পাশাপাশি মেয়েদের মতো ছেলেদেরও ইস্ট্রোজেন আছে। ছেলেদের এই ইস্ট্রোজেন হরমোন এর মাত্রা যত বেশি বাড়ে তত বেশি মুড সুইং, বিরক্তি অনুভব হয়। তাছাড়া বয়স বৃদ্ধি, মানসিক চাপ, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, খাদ্যাভ্যাস, ওজনের পরিবর্তন, ঘুমের অভাব ইত্যাদি টেস্টোস্টেরন নিঃসরণ ও মুড সুইং এ ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
মুড সুইং কাটিয়ে তুলার জন্য মেডিটেশনের অভ্যাস করতে হবে, দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় অতিরিক্ত পান করা যাবেনা, প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে, খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার রাখতে হবে, বন্ধু বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে হবে।