প্রাণের সৃষ্টি কিভাবে হলো? ব্রিটেনের একদল বিজ্ঞানী বলছেন, প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর বাইরে, আর তা পৃথিবীতে এসেছে ধূমকেতু আর উল্কাখন্ডের মাধ্যমে।
প্রাণের উৎস কোথায়, এই প্রশ্ন চিরকালই চিন্তাশীল মানুষকে ভাবিয়েছে, এ নিয়ে তত্ত্বেরও শেষ নেই। নতুনতম তত্ত্ব এসেছে যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিকদের কাছ থেকে। তারা বলছেন পৃথিবীর যে প্রাণীজগৎ - তার উৎস এই পৃথিবীতে নয় বরং মহাশূন্যে, ধূমকেতু বা উল্কাপিন্ডের মধ্যে ।
তারা গবেষণায় দেখেছেন যে পৃথিবীতে প্রতি মূহুর্তেই মহাশূন্য থেকে নানা রকম মাইক্রোব বা অণুজীব এসে পড়ছে এবং এগুলোকে বহন করে আনছে ধূমকেতু এবং উল্কাপিন্ড। কিন্তু পৃথিবীতে একসময় এগুলোর টিকে থাকার এবং বিবর্তিত হবার মতো পরিবেশ ছিল না। সেই বহু লক্ষ বছর আগে পরিবেশ যখন তৈরি হলো, তখন থেকেই পৃথিবীতে প্রাণীজগতের সূচনা।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণার প্রধান হলেন ড. মিল্টন ওয়েনরাইট। তিনি বলছেন, "আমরা বায়ুমন্ডলের উচ্চ স্তর যেটাকে বলে স্ট্রাটোস্ফিয়ার – সেখানে বেলুন পাঠিয়েছি। কিছু বেলুন তো ৪৮ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় উঠেছে – যেটাকে বলা চলে স্ট্রাটোস্ফিয়ারের একেবারে শেষ সীমানা। সেখান থেকে আমরা এমন কিছু অণুজীবের নমুনা সংগ্রহ করেছি – যার প্রকৃত স্বরূপ যে কি তা আমাদের অজানা।"
"তবে এগুলো যে বায়োলজিকাল, এবং তাদের যে প্রাণ আছে - তাতে সন্দেহ নেই। আমরা মনে করছি যে বায়ুমন্ডলের এত উচ্চ স্তর থেকে পাওয়া এসব অণুজীব মহাশূন্য থেকে এসেছে। পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও আমরা মনে করছি যে এগুলো এসেছে ধুমকেতু থেকে। কিছু নমুনা আছে যা আমরা সংগ্রহ করেছি জুলাই মাসে - যে সময়টায় অনেক উল্কাপাত হয়েছিল তখন। সে কারণেও আমাদের ধারণা, এসব অণুজীব ধূমকেতু এবং উল্কাখন্ড থেকেই এসেছে, সব সময়ই আসছে। পৃথিবীতে যে সময় থেকে প্রাণের উদ্ভব হয়েছে - তখন থেকেই।"
তার মানে, প্রাণের বিকাশ সম্পর্কে ডারউইনের তত্ত্ব কি তাহলে উল্টে যাচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে ড মিল্টন ওয়েনরাইট বলছিলেন, "ডারউইনের তত্বের ওপর আমাদের এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে ঠিকই। তবে ডারউইন তো আর ঈশ্বর নন। তার তত্ত্ব যে চিরকাল টিকে থাকবে তা তো না-ও হতে পারে। এতে পরিবর্তন হতেই পারে। তবে এটা ঠিক যে প্রথমে যে সব অণুজীব মহাশূন্য থেকে পৃথিবীতে এসেছিল তারা জৈবিক কাঠামো ছিল অত্যন্ত সরল। তার পরে তা থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়েছে। কাজেই ডারউইনের তত্ত্বে যে বিবর্তনের কথা আছে তা তো ঘটেছেই, কিন্তু প্রাণের সূচনা পৃথিবীতে হয়নি, হয়েছে তার বাইরে কোথাও।"
©বিবিসি