Motion sickness কাদের হয়ে থাকে?
Motion sickness যে কারো হতে পারে। তবে বিশেষ ভাবে গর্ভবতী মায়েরা এবং ২-১২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি প্রবল। যাদের মাইগ্রেইনের সমস্যা আছে, তারাও বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। আর Motion sickness মোটেও সংক্রামক নয়।
কেন ভ্রমণের সময় এরকম সমস্যা হয়?
বলতে পারেন Motion sickness টা আপনার অন্তঃকর্ণের একধরণের “বিশৃঙ্খলা”র ফল। আচ্ছা একটু খোলাসা করছি, আপনার পুরো “কান” কে আমরা তিনটি অংশে ভাগ করেতে পারি। বহিঃকর্ণ, মধ্য কর্ণ আর অন্তঃ কর্ণ। অন্তঃকর্ণের কাজটা হচ্ছে, এই অংশটি আপনার ভারসাম্য রক্ষায় এবং আপনি কি অবস্থায় আছেন, যেমনঃ দাড়িয়ে আছেন নাকি বসে আছেন, নাকি স্থির আছেন, এসব তথ্য মস্তিস্কে প্রেরণ করে। Motion sickness এর পিছনের কারণটা বেশ interesting! Motion sickness হয়ে থাকে যখন আপনার মস্তিস্ক গতিজনিত এবং আপনার শরীরের অবস্থান জনিত সাংঘর্ষিক বার্তা পেয়ে থাকে। বার্তা গুলো সাধারণত আপনার চোখ(যা আপনি দেখেন), অন্তঃকর্ণ, ত্বকের receptor (যা আপনি অনুভব করেন), আপনার মাংসপেশি এবং জয়েন্ট প্রভৃতি থেকে মস্তিস্কে পৌছায়।
Motion sickness কত ধরণের হয়ে থাকে?
Motion sickness কে আমরা আলাদা করে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি।
• Air sickness: আকাশ পথে ভ্রমণ করার সময় যদি এরকম সমস্যা হয় তাহলে Air sickness.
• Car sickness: রাস্তায় ভ্রমণের সময় যদি সমস্যা হয় তাহলে সেটা Car sickness.
• Sea sickness: নদী বা সমুদ্র পথে যদি সমস্যা হয় তাহলে Sea sickness.
তবে, সাধারণভাবে আমরা এককথায় সবগুলোকে Motion sickness বলি।
কেন Motion sickness সবার হয় না?
এখন মাথায় একটি প্রশ্ন আসতেই পারে, কেন সবার এরকম সমস্যা হয় না? এর মানে কি তাহলে আমাদের মস্তিস্ক একজন থেকে আরেক জনেরটা আলাদা? আসলে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই, কেন কিছু মানুষের Motion sickness হয়, কেন কিছু মানুষের হয় না। তবে কারণটা হতে পারে কিছু মানুষের মস্তিস্ক এই গতি জনিত ব্যাপারগুলো খুব ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে আর কিছু মানুষের মস্তিস্কের ব্যাপারটা মেনে নিতে তার গলদঘর্ম হতে হয়।
Motion sickness ব্যাপারটার সাথে পরিবারের একটা যোগসূত্র আছে। যদি কোনো পরিবারের পিতা অথবা মাতার এই সমস্যা থাকে তাহলে তার সন্তানের ক্ষেত্রে এটা হওয়ার সম্ভাবনা অন্য সবার চেয়ে ৫ গুণ বেশি. Identical twins বা জমজদের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার লক্ষ করা যায়, যদি একজন Motion sick হয়ে থাকে তাহলে অন্যজনেরও Motion sickness হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এশিয় বংশদ্ভুত মানুষদের ক্ষেত্রে Motion sick হওয়ার হার তুলনামুলুক বেশি। আবার কিছু ঔষুধ যেগুলো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার বমি ভাব ঘটাতে পারে, সেগুলোর কারণেও Motion sickness হতে পারে।
Motion sickness এর লক্ষণ গুলো কি কি?
Motion sickness এর লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই পূর্ব নোটিশ ছাড়াই আবির্ভাব ঘটতে পারে এবং নিমিশেই অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে। মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, বমি করা- এগুলো হচ্ছে সাধারণ লক্ষণ। অবসাদ ও Cold sweat হতে পারে। (Cold sweat হচ্ছে হঠাৎ করেই ঘামা যেটা সাধারণ ঘাম নয় অর্থাৎ, পরিশ্রম বা গরমের জন্য হয় না)। এছাড়াও, মাথাব্যথা, চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে।
আপনি কি আগে থেকেই Motion sickness প্রতিরোধ করতে পারবেন?
যদি আপনি জানেন যে, আপনার এধরণের সমস্যা হয়, তাহলে সঠিক কিছু পরিকল্পনা পারে আপনার এই সমস্যা থেকে রেহাই দিতে।
প্রথমে যানবাহনে আপনাকে আপনার জন্য সঠিক সীট খুজে নিতে হবে।
• বাস বা গাড়ির ক্ষেত্রেঃ চেষ্টা করতে হবে গাড়ির সামনের দিকে সীটে বসার। গাড়ি নিজে চালালে Motion sickness হয় না। কারণ মস্তিস্ক গাড়ি চালনায় বেশি মনযোগী থাকে।
• রেলগাড়ির ক্ষেত্রেঃ এরকম সীট নিতে হবে যেন রেলগাড়ি চললে মনে হয় তা আপনার সম্মুখে চলছে, পিছনে চলছে না এবং জানালার পাশে হতে হবে।
• জলযানের ক্ষেত্রেঃ কেবিন নিতে পারেন এবং অবশ্যই সেটা যেন জাহাজের সম্মুখে বা মাঝামাঝি অবস্থানে হয়। চেষ্টা করতে হবে আপনার কেবিন যেন ওয়াটার লেভেল এর কাছাকাছি থাকে।
• উড়োজাহাজের ক্ষেত্রেঃ উড়োজাহাজের সামনের দিকে অথবা দুই ডানার পাশে সীট নিতে হবে। কারণ, এই জায়গায় আপনার Motion sick হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। জানালার পাশে সীট নিলেও আপনার জন্য উপকারী হবে।
যাদের এধরণের সমস্যা হয় তাদের ভ্রমণের সময় যেকোনো প্রকার গাড়িতে বই পড়া যাবে না। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য বা দিগন্ত রেখার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন। চোখ বন্ধ করেও থাকতে পারেন।
ভ্রমণের আগের রাতে ভালো ঘুম খুবই প্রয়োজন। কারণ ক্লান্তি আপনার Motion sick হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
অ্যালকোহল সেবন করা যাবে না। ভ্রমণের আগে হালকা খাবার খেতে হবে, কখনোই না খেয়ে থাকবেন না। অনেকে দেখা যায়, বমির ভয়ে কিছু খেতে চান না। ভ্রমণের আগে এবং ভ্রমণের সময় অ্যাসিডিক ও চর্বি যুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
ধূমপান করা যাবে না এবং কোনও ধূমপায়ীর পাশেও বসা যাবে না।
অনেক গবেষক বলেন, মেন্থল (Peppermint) অনেক উপকারি। সেই সাথে আদা এবং Black horehound ও উপকারি। এগুলো ভ্রমণের সময় আপনার সঙ্গে রাখতে পারেন।
Motion sickness এর চিকিৎসা কি?
Motion sickness এর জন্য কমন মেডিসিন হচ্ছেঃ Meclizine, diphenhydramine, dimenhydrinate, scopolamine. American Academy of Family Physicians (AAFP), scopolamine কে ব্যবহারে ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ এটা, nausea ও vomiting রোধে বেশ কার্যকরী। সেই সাথে ঘুম ঘুম ভাবও হয় না। Skin patch এই ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে।
Antihistamine বেশ কার্যকরী। কিন্তু, এগুলো আপনার নিদ্রাভাব নিয়ে আসে। আবার non-drowsy antihistamine গুলো Motion sickness চিকিৎসায় কার্যকরী নয়। Meclizine অনেক less sedating. Non sedating antihistamine যেমন fexofenadine, Motion sickness এর জন্য কার্যকরী নয়।
আরেক ধরণের মেডিসিন আছে যাদের antiemetic বলে। এগুলো nausea এবং vomiting এর চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।
**বিদ্রঃ যে কোনও ধরণের মেডিসিন গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই গ্রহণ করবেন।**
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
সাধারণত ভ্রমণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে Motion sicknessও আর থাকে না। ভ্রমণ শেষ হওয়ার পরেও যদি মাথাঘোরা, মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, বমি বন্ধ না হওয়া- এসব লক্ষণ থাকে, তাহলে দেরী না করে ডাক্তারের কাছে যাবেন।
লেখকঃ আকিব নিয়াজ জোহা
JINZHOU MEDICAL UNIVERSITY (CHINA)
Session: 2016-17