অনিদ্রার কারণ কী? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+20 টি ভোট
419 বার দেখা হয়েছে
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন (105,570 পয়েন্ট)

1 উত্তর

+6 টি ভোট
করেছেন (105,570 পয়েন্ট)
 
সর্বোত্তম উত্তর
অনিদ্রা কাকে বলে?

সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে ঘুম আমাদের শরীরের পক্ষে একটি অতি প্রয়োজনীয় কাজ। ঘুম যে শুধু আমাদের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে তা নয়। ঘুম শরীরের সমস্ত জৈব কাজকর্ম-নিয়ন্ত্রণে রাখে ও মস্তিষ্কের কোষগুলি বিশ্রামে রেখে পরের দিনের কাজকর্মে উদ্যম ও উৎসাহ ‍‌ জোগায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে ঘুমের অভাবে বা ঘুম অল্প সময় স্থায়ী হলে তা শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। এ কারণে অনিদ্রা, বিশেষ করে তা স্থায়ী দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন সেটা ব্যক্তিগত সমস্যা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন অনিদ্রা (INSOMNIA)-কে অসুখ বলে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হতাশজনিত অনিদ্রার মূল এ‍‌তো গভীরে থাকে যে রোগী মানসিক ভারসাম্যতা হারিয়ে আত্মঘাতী হ‍‌তে চায়। সাধারণ অর্থে একজন মানুষের স্বাভাবিক যতোটা ঘুম দরকার তার কম হলে যখন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় তখন তাকে অনিদ্রাজনিত অসুস্থতা (INSOMNIA) বলা হয়। তবে সাময়িক কোনও পরিবেশ পরিবর্তন জনিত কারণে দু-তিন দিনের জন্যে ঘুমের অসুবিধে হওয়া প্রায় সকলেরই হতে পারে।

কী ধরনের অনিদ্রা হতে পারে?
১. অনেক মানুষ আছেন, যারা শয্যা গ্রহণ করার পরই ঘুমিয়ে পড়েন না, তাদের প্রথম থেকে ঘুম আসতেই চায় না, অনেকক্ষণ জেগে থাকার পর ঘুম আসে (Sleep onset insomnia)।

২. আবার প্রথম থেকে ঘুমিয়ে পড়লেও দু-এক ঘণ্টার পর ঘুম ভেঙে যায়। তারপর আর ঘুম আসতেই চায় না। (Sleep maintenance insomnia)

৩. তৃতীয়ত দেখা যায়, মধ্যরাত্রির পর থেকে অনেকে জেগে থাকেন, অনেক চেষ্টা করেও আর ঘুমাতে পারেন না (Sleep offset insomnia)

৪. আবার কখনও গাঢ় নিদ্রা না হলেও একটা খুব হালকা, তন্দ্রার মতো আচ্ছন্ন ভাব প্রায় সারা রাত্রি ধরেই থাকে। এ ধরনের ‘ঘুম’ হলে সারাদিনের পরিশ্রমের ক্লান্তিভাব দূর হয় না ফলে স্বাভাবিক নিদ্রার উপকারিতাও পাওয়া যায় না (Non restorative Sleep)

৫. আগেই বলেছি, পরিবেশগত কারণে বা সাময়িক দুশ্চিন্তার জন্যে বা যারা এক মহাদেশ থেকে আর এক মহাদেশে আসেন তাদের ৩/৪ দিনের জন্যে (Jet lag) ঘুম না হওয়ার ব্যাপারে একটা সাধারণ ঘটনা (Transient insomnia)।

৬. অনেক সময় কোন গুরুতর বিপদ বা অস্ত্রোপচারের পর কয়েকদিন থেকে তিন সপ্তাহের মতো সময়ের জন্য অনিদ্রা হতে পারে। একে বলা হয় স্বল্পমেয়াদী অনিদ্রা (Short term insomnia)।

৭.যখন কেউ মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ধরে অনিদ্রার কষ্ট পান (Long term insomnia বা chronic insomnia ) তখনই তা স্বাস্থ্যহানি আর পরের দিনের কর্মকুশলতা বিঘ্নিত হওয়ার কারণ হয়।



কী কী কারণে অনিদ্রা হতে পারে?

১. অনেক সময় ঘুম না হওয়ার সঠিক কারণ জানা যায় না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অনেকগুলি ছোট ছোট কারণ থাকলেও, কোনও একটিই উল্লেখযোগ্য প্রধান কারণ নয়, এই অবস্থাকে Primary Insomnia বলা হয়।

২. কখনও দেখা যায় সাময়িক মানসিক উদ্বেগ বা উত্তেজনার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাদের ঘুম আসতে দেরি হয়। খুব অল্প শব্দে ঘুম ভেঙে যায় বা অসময়ে এমনকি দিনের বেলাতেও ঘুম হয়। এর নাম Psychophysi ologic insomnia ।

৩. পরিবেশগত কারণে অনিদ্রা। যখন হোটেল, হাসপাতাল বা অন্য কোনও নতুন জায়গায় শুতে হয়। বা নিকট কোনও আত্মীয়র অসুস্থতা বা মৃত্যু ঘটে তখন অনিদ্রার মতো অভিজ্ঞতা আমাদের প্রায় সকলেরই কখনও কখনও হয়েছে।

৪. খুব উচ্চতায় থাকার জন্য শ্বাসকষ্টের কারণে প্রথম প্রথম কয়েকদিনের জন্যে সুনিদ্রা হয় না, বার বার ঘুম ভেঙে যায় (High Altitude- insomnia)।
 
৫. শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা পৃথিবীতে শতকরা আশিভাগ ‍ ক্ষেত্রে মানসিক রোগ হচ্ছে অনিদ্রার অন্যতম প্রধান কারণ। প্রধানত মানসিক অবসাদ (mental depression) বা নৈরাশ্য ও বিভিন্ন ধরনের ভয় ‍ থেকে অনিদ্রার সূত্রপাত হয়। এক্ষেত্রে সব ধরনেরই অনিদ্রা হতে পারে। কখনও ঘুম আসতেই চায় না, আবার অল্প ঘুমের পর সারারাত্রি বা শেষ রাত্রিতে জেগে থাকা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।

৬. এছাড়া আছে দু‍‍শ্চিন্তাজনিত উদ্বেগ (Anxiety Tension) ম্যানিয়া (Mania) সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) মদ্যপানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, স্মৃ‍‌তি বিভ্রম (Dementia) ও মৃগীর (Epilepsy) মতো বিভিন্ন রকমের মানসিক অসুখ।

৭. এক ধরনের অসুখে রোগী সারারাত্রি পায়ের অস্থিরতা ও অসাড়ত্ব (Restless Leg Syndrome) অনুভব করে। পায়ের মাংসপেশির শক্ত হয়ে টান ধরা (Leg Cramps) একটা খুব সাধারণ কারণ।

৮, যাদের হাঁপানি (Asthma) বা হার্টের অপটুতা (Cardiacfailure) জনিত অসুখ আছে তাঁরা প্রায়ই একটু ঘুমের পর শ্বাসকষ্টের ফলে (Cardiac Asthma ) জেগে ওঠেন ও প্রায় সারারাত্রি একটা বালিশ কোলে নিয়ে বসে থাকেন, পরে আর ঘুম আসতে চায় না।

৯. ডায়ারবেটিস রোগীদের বা বয়স্ক পুরুষ মানুষদের প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের (Prostate Gland) অসুখ থাকলে, রাত্রে তিন-চারবার উঠে টয়লেটে যেতে হয়, ফলে স্বাভাবিক ঘুম হয় না।

১০. কিছু মানুষ আছেন যারা রাত্রিতে দুঃস্বপ্ন দেখে বা ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন (Night mare)। কম বয়সী ছেলেমেয়েদের এক অদ্ভুত ধরনের অসুখ হয়। তারা মাঝ রাত্রিতে ঘুম থেকে উঠে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে শুরু করে (Sleep walking) যার জন্য ঘুমের ব্যাঘাত হয়।

১১. অনেক সময় রাত্রিতে মাঝে মাঝে শ্বাস বন্ধ (Sleep apnoea) হওয়ার মতো কষ্ট হয় বলে অনিদ্রা হয়।

১২. একজনের ঘুমের মধ্যে নাসিকা গর্জন (Snoring) অন্যের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোর অভিজ্ঞতা আমাদের প্রায় কম বেশি সকলেরই আছে।

১৩. বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতা যেমন বাত, ব্যাধি, হাড়ভাঙা (Fracture), Spondylosis কিডনি বা পিত্ত থলির অসুখ, Colic pain, Gastric ulcer, Migraine-এর মতো অসুখে অনিদ্রা একটা প্রধান উপসর্গ।

১৪. বিভিন্ন ধরনের ওষুধ যেমন Amphetamine, Ephedrine স্টেরয়েড ও যাদের মদ্যপানের নেশা আছে তাদের হঠাৎ মদ্যপান বন্ধ করা, রাত্রে ‍ নস্যি নেয়া ও ধূমপান করা অনিদ্রার অন্যতম কারণ।

১৫. চা, কফি, ও কোলা জাতীয় পানীয়তে Caffeine থাকার ফলে অনিদ্রা হয়। দেখা গেছে দিনে তিন থেকে পাঁচ কাপ চা বা কফি খেলে, সাত বা আট ঘণ্টা পরেও ঘুম আসে না, ঘুম এলেও গভীর ঘুম হয় না ও তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায়।

১৬. বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ (Sleeping Pill) এখন সহজলভ্য হওয়াতে অনেকেই ভাবনা চিন্তা না করে তা মুড়ি মিছরির মতো ব্যবহার করেন, পরে তা নিয়মিত অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রকমের অসুবিধার কারণ হয় যা মোটেই কাম্য নয়।


অনিদ্রার হাত থেকে রেহাই পাবার  কয়েকটি উপদেশ

১. রাত্রে TV দেখা বন্ধ করুন।

২. তাড়াতাড়ি শুতে যান ও সকালে খুব ভোরে শয্যা ত্যাগ করে হালকা ধরনের ব্যায়াম করুন। যোগ ব্যায়াম খুব ভালো।

৩. রাত্রে বেশি আহার করবেন না। মদ্যপান বা ধূমপান একেবারেই নয়।

৪. সন্ধ্যার পর চা, কফি বা কোলা জাতীয় পানীয় একদম নয়।

৫. মনকে সবসময় দুশ্চিন্তা মুক্ত করে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।

৬, কোনো কারণেই মন খারাপ করবেন না ও অন্যের দোষ দেখার চেষ্টা করবেন না।

তথ্যসূত্র : দেশে বিদেশে৷

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+20 টি ভোট
1 উত্তর 162 বার দেখা হয়েছে
23 সেপ্টেম্বর 2020 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন HABA Audrita Roy (105,570 পয়েন্ট)
+20 টি ভোট
1 উত্তর 135 বার দেখা হয়েছে
+19 টি ভোট
1 উত্তর 106 বার দেখা হয়েছে
22 সেপ্টেম্বর 2020 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন HABA Audrita Roy (105,570 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 65 বার দেখা হয়েছে

10,743 টি প্রশ্ন

18,394 টি উত্তর

4,731 টি মন্তব্য

243,880 জন সদস্য

46 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 46 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. MIS

    930 পয়েন্ট

  2. shuvosheikh

    220 পয়েন্ট

  3. তানভীর রহমান ইমন

    160 পয়েন্ট

  4. Muhammad_Alif

    120 পয়েন্ট

  5. memo

    120 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো #ask মোবাইল ক্ষতি চুল কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি #science স্বাস্থ্য প্রাণী বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #biology বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক শব্দ ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম হরমোন বিড়াল কান্না
...