যে টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম সে টিস্যুকে স্থায়ী টিস্যু বলে। এ টিস্যুর কোষগুলো পূর্ণভাবে বিকশিত এবং সঠিক আকার-আকৃতিবিশিষ্ট অর্থাৎ এরা আকার-আকৃতি ও বিকাশে স্থায়িত্ব লাভ করেছে, তাই এরা স্থায়ী টিস্যু। বিশেষ অবস্থা ছাড়া এরা আর বিভাজিত হতে পারে না। ভাজক টিস্যু হতে কোষের পূর্ণ বিকাশ লাভের পর বিভাজন ক্ষমতা স্থগিত হওয়ার মাধ্যমে স্থায়ী টিস্যুর উদ্ভব ঘটে।
স্থায়ী টিস্যুর বৈশিষ্ট্য:
স্থায়ী টিস্যুর কোষগুলো সাধারণত বিভাজনে অক্ষম।
টিস্যুতে দু’রকম কোষ থাকে- জীবিত ও মৃত।
জীবিত কোষে সাইটোপ্লাজম স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
মৃত কোষ প্রোটোপ্লাজমবিহীন।
কোষগুলোর প্রাচীর অপেক্ষাকৃত স্থূল অর্থাৎ বেশ পুরু।
কোষ গহ্বর অপেক্ষাকৃত বড়।
নিউক্লিয়াস স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট এবং কোষের এক পাশে অবস্থান করে।
কোষ প্রাচীরে নানা নকশা দেখা যায়।
স্থায়ী টিস্যুর শ্রেণিবিভাগ:
গঠন ও কাজের ভিত্তিতে স্থায়ী টিস্যু তিন প্রকার; যথা: (১) সরল টিস্যু (২) জটিল টিস্যু এবং (৩) ক্ষরণকারী বা নিঃস্রাবী টিস্যু ।
(১) সরল টিস্যু:
সরল স্থায়ী টিস্যুর সবগুলো কোষ আকার, আকৃতি ও গঠন বৈশিষ্ট্যে একই ধরনের হয়। কোষের আকৃতি ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে সরল টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে; যথা: প্যারেনকাইমা, কোলেনকাইমা এবং স্কেলেরেনকাইমা।
প্যারেনকাইমা:
উদ্ভিদদেহের সকল অংশে এদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এ টিস্যুর কোষগুলো জীবিত, সমব্যাসীয়, পাতলা প্রাচীরযুক্ত ও প্রোটোপ্লাজমপূর্ণ। এই টিস্যুতে আন্তঃকোষীয় ফাঁক দেখা যায়। কোষপ্রাচীর পাতলা ও সেলুলোজ দিয়ে গঠিত। এসব কোষে যখন ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে তখন তাকে ক্লোরেনকাইমা বলে। জলজ উদ্ভিদের বড় বড় বায়ুকুঠুরিযুক্ত প্যারেনকাইমাকে এ্যারেনকাইমা বলে।
কাজ: প্যারেনকাইমা টিস্যুর প্রধান কাজ দেহ গঠন করা, খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য সঞ্চয় করা ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন করা।
কোলেনকাইমা:
এগুলো বিশেষ ধরনের প্যারেনকাইমা কোষ দ্বারা গঠিত। কোষপ্রাচীরে সেলুলোজ ও পেকটিন জমা হয়ে পুরু হয়। তবে এদের কোষপ্রাচীর অসমভাবে পুরু এবং কোণাগুলো অধিক পুরু হয়। এ টিস্যুর কোষগুলো লম্বাটে ও সজীব। এরা প্রোটোপ্লাজমপূর্ণ কোষ দ্বারা গঠিত। এতে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকতে পারে। কোষপ্রান্ত চৌকোণাকার, সরু বা তীর্যক হতে পারে। খাদ্য প্রস্তুত ও উদ্ভিদদেহকে দৃঢ়তা প্রদান করা এদের প্রধান কাজ। পাতার শিরা, পত্রবৃন্তে এদের দেখা যায়। কচি ও নমনীয় কান্ড, যেমন কুমড়া ও দন্ডকলসের কান্ডে এ টিস্যু দৃঢ়তা প্রদান করে। এ কোষে যখন ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে তখন এরা খাদ্য প্রস্তুত করে।
স্কেলেরেনকাইমা:
এ টিস্যুর কোষগুলো শক্ত, অনেক লম্বা ও পুরু প্রাচীরবিশিষ্ট হয়। প্রোটোপ্লাজমবিহীন, লিগনিনযুক্ত এবং যান্ত্রিক কাজের জন্য নির্দিষ্ট কোষ দ্বারা গঠিত টিস্যুকে স্কেলেরেনকাইমা টিস্যু বলে। প্রাথমিক অবস্থায় কোষগুলোতে প্রোটোপ্লাজম উপস্থিত থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি তা নষ্ট হয়ে মৃত কোষে পরিণত হয়। কোষগুলো প্রধানত দুই ধরনের, যথা- ফাইবার ও স্কেলেরাইড। উদ্ভিদদেহে দৃঢ়তা প্রদান এবং পানি ও খনিজ লবণ পরিবহন করা এর মূল কাজ।
ক. ফাইবার বা তন্তু:
এরা অত্যন্ত দীর্ঘ , পুরু প্রাচীরযুক্ত, শক্ত এবং দুই প্রান্ত সরু। তবে কখনো ভোঁতা হতে পারে। প্রাচীরের গায়ে ছিদ্র থাকে। এ ছিদ্রকে কূপ বলে। অবস্থান ও গঠনের ভিত্তিতে এদের বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে, যথা- বাস্ট ফাইবার , সার্ফেস ফাইবার, জাইলেম তন্তু বা কাষ্ঠতন্তু।
খ. স্কেলেরাইড:
এদেরকে স্টোন সেলও বলা হয়। এরা খাটো, সমব্যাসীয়, কখনও লম্বাটে আবার কখনও তারকাকার হতে পারে। এদের গৌণপ্রাচীর খুবই শক্ত, অত্যন্ত পুরু ও লিগনিনযুক্ত। পরিণত স্কেলেরাইড কোষ সাধারণত মৃত থাকে। কোষপ্রাচীর কূপযুক্ত হয়।
নগ্নবীজী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কর্টেক্স, ফল ও বীজত্বকে স্কেলেরাইড টিস্যু দেখা যায়। বহিঃত্বক জাইলেম ও ফ্লোয়েমের সাথে একত্রে পত্রবৃন্তে কোষগুচ্ছরূপে থাকতে পারে।