বিষণ্ণতাকে পাশ কাটিয়ে কিভাবে নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যায়? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+17 টি ভোট
380 বার দেখা হয়েছে
"মনোবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (105,570 পয়েন্ট)

1 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (110,340 পয়েন্ট)
ডিপ্রেশন বা হতাশা কথাটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ড্রিপেশনের ভাবার্থ। এই ডিপ্রেশন সর্দি-কাশির মতো এক এক করে প্রায় সব মানুষকে আক্রমণ করে ফেলছে। ফলে, রোগ ও রোগাক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

ডিপ্রেশন থেকে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অনিদ্রা, ব্লাড প্রেশার, ক্যানসারসহ বহু জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে, সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। ডিপ্রেশন থেকে যেমন মারাত্মক ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, তেমনই অনেক অনৈতিক কাজও করা হচ্ছে। আরেকটা জিনিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো নেশার যে এত রমরমা অবস্থা তার কারণও ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত কিনা বুঝতে হলে বেশি কিছু করার দরকার নেই, শুধু নিম্নের কয়েকটি বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখলেই দেখা যাবে, ডিপ্রেশন কীভাবে নিজের অজান্তেই সর্বব্যাপী হয়ে গেছে।

ডিপ্রেশনের লক্ষণ:
*কখনো খুশি কখনো উদাসী। সকালে ভালো বিকেলে খারাপ। আজ বেশ আনন্দে আছে কাল মানসিক যন্ত্রণায় গুমরে মরছে।
*জীবনটাকে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। কখনো ভাবে এই জীবন জীবন নয়। কখনো ভাবে এইতো বেশ আছি, ভালো আছি।
*জীবনের প্রতি ঘৃণা বা উদাসীনতা। মনে হয় অনেক কিছু পাওয়ার ছিল, করার ছিল, হলো না। অতএব এই জীবনটা অর্থহীন। এটাকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে কিন্তু আর কত দিন?
*কিছু কেউ বলুক, যদি ভালো বলে না তো ঠিক আছে কিন্তু বিরূপ সমালোচনা করলে টেম্পার লুস করে দেয় বা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
*কেমিক্যাল চেঞ্জ। শরীরে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া ও অহেতুক শরীরকে কষ্ট দেওয়া।
*মানসিক ফোবিয়া।
*অন্ধকারকে ভয়, কোনো জন্তু, পোকা, পানি, আগুনের ভয় বা অজানা আতঙ্ক। বারবার হাত-পা ধোয়া, গোসল করা, ঘ্যান ঘ্যান করা ইত্যাদি। আবার অহেতুক চিন্তা ও উত্তেজনা, একটুতেই ঘাবড়ে যাওয়া, একটুতেই ভেঙে পড়া।
*কাজ করার ইচ্ছা হয় না। উৎসাহের অভাবে অল্প বয়সেই ক্লান্তি অনুভব করা। কাজ করার ক্ষমতা আছে কিন্তু ইচ্ছার অভাবে কিছুই করতে চায় না। অলসতা যেন গ্রাস করে ফেলছে। এমনকি খেলাধুলা বা পড়াশোনার ক্ষেত্রেও উৎসাহের অভাব হলে বুঝতে হবে ডিপ্রেশন হয়ে আছে।
*গোসল করা, কাপড় ধোয়া, খাবার ইচ্ছে ত্যাগ। গোসল করতে চায় না, খেতেও ইচ্ছুক নয় আবার ময়লা পোশাকেই যেন থাকতে চায়, এমতাবস্থায় বুঝতে হবে ডিপ্রেশনে ভুগছে।
*ঘুমানো। কখনো কম ঘুমায়, কখনো সব সময় শুয়ে থাকতে ভালোবাসে।
*হরমোন চেঞ্জ। হরমোনের পরিবর্তন হতে থাকলে ডিপ্রেশন আসে। বয়ঃসন্ধিকালে এই ধরনের অবস্থা লক্ষ করা যায়।
*নানা চাহিদা। চাহিদার শেষ নেই। একটা পেলে আরেকটা চায়। কখনো একটাতে বা একটুতে সন্তুষ্ট নয়। বারবার বিভিন্ন ধরনের আবদার বা বায়না করতে থাকে।
*ভালোবাসা বা প্রেম। ভালোবাসায় ব্যর্থতা আসলে, প্রেম সফল না-হলেই ডিপ্রেশন হয়ে যাওয়া। ফলে নেশা করে বা অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ করতে থাকে।
*ক্রোধ। যে ধরনের বিচার বা চিন্তা চলবে তা যদি নেতিবাচক বা ব্যর্থ হয় তাহলে ক্রোধ জন্ম নেয়। এড্রোনিল গ্রন্থি, ক্যাপিলারি টিউব, নিউরোনসের যেমন ক্ষতি হতে পারে, তেমনি ভুলও হতে পারে। যা পরবর্তী ক্ষেত্রে ডিপ্রেসড হতে সাহায্য করে। ক্রোধের বশে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। অনেকে বলেন, ক্রোধ ছাড়া চলে না। এটা ভুল। ক্রোধ শুধু ক্রোধ নয়-এ যেমন নিজেকে জ্বালায়, অন্যকেও জ্বালায়। ফলে, ক্রোধ হলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। ডিপ্রেশনের শিকার হতে হয়।
*ইমোশন। ইমোশনাল হওয়া ভালো কিন্তু অতি ইমোশনাল হওয়া ভালো নয়। এ হলো ডিপ্রেশনের লক্ষণ। ইমোশনাল ব্যক্তি বারবার চেষ্টা করে অন্যকে আকর্ষিত করতে। যখন পারে না বা নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যখন ব্যর্থ হয়, তখন ডিপ্রেশন আক্রান্ত হয়ে যায়।
*আত্মহত্যা। আত্মহত্যা হলো মানসিক ব্যাধি যা ডিপ্রেশন থেকে জন্ম নেয়। ডিপ্রেশনের শেষ অবস্থায় পৌঁছালেই আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত হয়।
ডিপ্রেশন যেকোনো বয়সে হতে পারে। ছেলেমেয়ে, ছাত্রছাত্রী, শিশু থেকে বয়স্ক সবাই ডিপ্রেশনের শিকার হতে পারে।

ডিপ্রেশনের জন্য আমরাই দায়ী। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যেমন মা-বাবা দায়ী, তরুণ-তরুণীদের ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই দায়ী, বয়স্কদের ক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজ দায়ী। সব কথার শেষ কথা হলো, ডিপ্রেশন যেহেতু মানসিক রোগ, সেহেতু ওই রোগের আক্রমণকে অনুভব করে, নিজেই নিজের শিক্ষক হতে পারলে বহুলাংশে উপকৃত হওয়া যায়। এ ছাড়া ডিপ্রেশন কেন হচ্ছে যদি বোঝা যায়, তাহলে যেমন মেডিটেশন তেমনি ভালো ডাক্তারের সুপরামর্শ তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে।

তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেকে নিজে লুকানোর বা ঠকানোর চেষ্টা করলে পরবর্তীকালে তা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। তখন কাউন্সেলিং বা স্টেপ বাই স্টেপ ট্রিটমেন্ট, নিয়মিত ব্যায়াম ও রাজযোগ মেডিটেশন অভ্যাস করলে এবং মনকে পরিবর্তন করার পদ্ধতি জানা থাকলে ডিপ্রেশন সহজেই দূর হয়ে যায়। অন্যথা শেষের সেদিন বড়ই ভয়ংকর হয়ে উঠে।

ডিপ্রেসন থেকে বাঁচার জন্য যা করা যেতে পারে—
*লক্ষ রাখা দরকার সব সময় যেন নৈতিকতার মাধ্যমে আনন্দে থাকা যায়।
*সুখ-দুঃখ টাকার এপিঠ আর ওপিঠ। দুটোকে মেনে নিতে হয়।
*যেখানে খুশি হারিয়ে যায় সেখান থেকে খুশির পথ খুঁজে নিতে হয়।
*চিন্তার পরিবর্তন দরকার। বিষাক্ত চিন্তা, ব্যর্থ চিন্তা, নেতিবাচক চিন্তা, অহেতুক চিন্তা, ভয়ের চিন্তা ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকার ব্যবস্থা নিতে হবে। তার জন্য ম্যানেজমেন্টের কথা হলো, কথা বলো, শান্ত থাক, ইতিবাচক হও, অন্যকে নয় নিজেকে বদলাও।
*আমাদের মধ্যে যেমন অনেক গুণ আছে তেমনি আবার ত্রুটিও আছে। ত্রুটিগুলোকে স্মরণ করা ও কাজে লাগানো দরকার।
*নিজের কাউন্সেলিং নিজে করা দরকার। বিশেষ করে রাতে শোয়ার আগে, সারা দিনের অ্যাকাউন্ট চেক করা এবং পরের দিন পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার প্রতি লক্ষ্য রেখে নতুনভাবে শুরু করা দরকার।
*মনের প্রভু তো আমি। মন আমার দাস। তাই মনকে দমন নয় বরং সুমনে পরিবর্তন করা দরকার। চাবকে নয়, ভালোবেসে করা দরকার।
*কেউ আমাকে বিরক্ত করলে কেন বিরক্ত হব? আমি পারমিশন দিচ্ছি কেন? কারণ মন দুর্বল তাই। মনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা দরকার।
*আমি যা আমি তাই। মেনে নিতে হয়। লক্ষ্য মহৎ হলে সফলতা আসবেই। ধৈর্য ও সহনশীলতার কবচ সঙ্গে থাকলে জয় হবেই হবে। এক্সপেক্ট ও রিজেন্ট এই অঙ্ক জানা থাকলে ডিপ্রেশন আসবে না।
*তরুণ-তরুণীরা মাথাকে যত ব্যবহার করবে ততই ভালো থাকবে।
*যত সিম্পল হওয়া যাবে ততই ডিপ্রেশন মুক্ত থাকা যাবে। অসম্ভব কথাটা আমাদের অভিধানে থাকতে নেই।
*নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে সঙ্গে নিয়ে চললে ডিপ্রেশনকে প্রতিহত করা যাবে।
*ভুলে যাও, ক্ষমা করো এই দুটো শব্দ ডিপ্রেশন মুক্ত জীবনের চাবিকাঠি।
*সব বোঝা আল্লাহকে সমর্পণ করে দিয়ে মুক্ত মনে থাকতে পারলে ডিপ্রেশন আসবে না।
*বাহ্যিক সুখ ক্ষণস্থায়ী, সেই জন্য এই সুখে লালায়িত না-হয়ে আন্তরিক সুখের সন্ধানে নিয়োজিত থাকা দরকার।
*যেমন পানিকে পানি, বরফকে বরফ দেখি তেমনি যা দেখছি, যা শুনছি সেইভাবে দেখা ও শোনা দরকার। অতিশয়তা ভালো নয়। আধ্যাত্মিক হওয়া দরকার। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের প্রতি একনিষ্ঠ হলে ডিপ্রেশন আসবে না।
ক্রোধ থেকে মুক্ত থাকা দরকার। এ জন্য ভুলকে ঠিক করতে ভুল নয়।
*হীনতাকে সহযোগী করা উচিত নয়।
*তর্কে তর্ক বাড়ায় সেই জন্য প্রয়োজনে হার স্বীকার করা ভালো। এই হার হার নয়, হরমনি সৃষ্টি করে।
*রোগ আসবে কিন্তু রোগী হওয়া ঠিক নয়। রোগ দেহের হয়, চিকিৎসা করা দরকার কিন্তু মন যেন রোগাক্রান্ত না হয়ে যায়।
*ক্রোধকে অস্ত্ররূপে ব্যবহার করা দুর্বলতার লক্ষণ। দুর্বল নয়, সবল হওয়া দরকার। ক্রোধ আসলে বিরাম নেওয়া দরকার। তিন-চারবার গভীর শ্বাস নিলে ক্রোধ কমে যাবে।
*শুভ ভাবনার এনার্জি বিকিরণ করা দরকার।
*নিজের পছন্দমতো সবকিছু সব সময় হবে আশা করা বৃথা। সেই জন্য পছন্দমতো যদি না হয়, তাহলে ইগোকে ব্রেক করে সবকিছুকে মেনে নেওয়া দরকার।
*শ্রদ্ধা এক ধরনের ইতিবাচক এনার্জি। সবার জন্য সমান হওয়া দরকার সে ছোট হোক আর বড়।
*মা-বাবারা কীভাবে সন্তানকে ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত রাখবেন তার জন্য নিজে নিজেই চেষ্টা করা দরকার। সেই চেষ্টা করতে কার্পণ্য করা উচিত হবে না।
*বহির্জগৎ, টিভি, ইন্টারনেট, সেল ফোন ডিপ্রেশন সৃষ্টি করে সেই জন্য নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এসবের ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
ওষুধ, কাউন্সেলিং, যোগাসন, সহজ রাজযোগ, মেডিটেশন করা দরকার। এতে করে আবার সুস্থ জীবন ফিরে পাওয়া যাবে।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+6 টি ভোট
1 উত্তর 948 বার দেখা হয়েছে
+9 টি ভোট
1 উত্তর 523 বার দেখা হয়েছে
10 সেপ্টেম্বর 2020 "পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Naina Jamil (330 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 760 বার দেখা হয়েছে

10,807 টি প্রশ্ন

18,512 টি উত্তর

4,744 টি মন্তব্য

518,248 জন সদস্য

64 জন অনলাইনে রয়েছে
17 জন সদস্য এবং 47 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

    1280 পয়েন্ট

  2. Dibbo_Nath

    370 পয়েন্ট

  3. Fatema Tasnim

    340 পয়েন্ট

  4. _Polas

    160 পয়েন্ট

  5. Arnab1804

    140 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে ডিম চাঁদ কেন বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মাছ মশা শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা মস্তিষ্ক ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...