যখন কোনো ব্যক্তির শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ, যেমন—হৃদপিণ্ড (হার্ট), ফুসফুস, বা কিডনি—কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে সেই অঙ্গগুলোর কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই পদ্ধতিকে লাইফ সাপোর্ট (Life Support) বলা হয়। এই ব্যবস্থাগুলো সাময়িকভাবে জীবন রক্ষা করতে পারে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, শরীরকে সেরে ওঠার জন্য বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের (organ transplant) জন্য কিছুটা সময় দেওয়া।
কিন্তু মানুষ কি পুরোপুরি বেঁচে থাকে?
এখানেই মূল বিষয়টি আসে। একটি মানুষকে জীবিত বলার জন্য শুধু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চালু থাকাই যথেষ্ট নয়; তার মস্তিষ্কের (Brain) সচল থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। মস্তিষ্কই হলো আমাদের শরীরের কেন্দ্রীয় চালক বা কন্ট্রোল সিস্টেম। এটি শুধু আমাদের চিন্তা, অনুভূতি বা স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ, যেমন—হরমোন তৈরি, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য অঙ্গের মধ্যে সমন্বয়ও সাধন করে।
যখন কোনো দুর্ঘটনা বা রোগের কারণে একজন মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে তা আর কখনোই কাজ করবে না, সেই অবস্থাকে ব্রেন ডেথ (Brain Death) বলা হয়। ব্রেন ডেথ হলে, যদিও লাইফ সাপোর্ট দিয়ে হার্ট বা ফুসফুসকে কৃত্রিমভাবে চালানো সম্ভব, কিন্তু মানুষটি আর সচেতন অবস্থায় ফিরতে পারে না এবং তার শরীরও নিজে থেকে কাজ করার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে।
সহজভাবে বললে, একটি গাড়ির ইঞ্জিন (অঙ্গ) বাইরে থেকে চালু রাখা গেলেও, চালকের আসন (মস্তিষ্ক) যদি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে গাড়িটি নিজে থেকে একচুলও নড়তে পারবে না। ঠিক তেমনি, মস্তিষ্ক অচল হয়ে গেলে লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে শরীরটাকে কিছুদিন টিকিয়ে রাখা গেলেও, মানুষটিকে আর বাঁচানো সম্ভব হয় না।
লেখা: খাইরুল আলম ফেরদৌস