বেতার যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসেবে জগদীশ চন্দ্র বসুকে তেমন কোনো স্বীকৃতি দেয়া হয় নি কেন যতটা মার্কনিকে দেয়া হয়েছে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
908 বার দেখা হয়েছে
"প্রযুক্তি" বিভাগে করেছেন (4,460 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (4,460 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর
রেডিও বা বেতার যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসেবে মার্কোনির নাম জানে সবাই। কিন্তু তার আগেই বেতার যন্ত্র তৈরি করেছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু। বাঙালি বলেই জগদীশ চন্দ্র আবিষ্কারকের মর্যাদা পাননি, পশ্চিমাদের এটা একটা চালবাজি ছিলে- এ ধরনের একটা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে। কিন্তু আসলেই কি তাই?

জগদীশ চন্দ্র বসু গবেষণা করেছিলেন ক্ষুদ্র বিদ্যুৎচুম্বক তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ নিয়ে। পরীক্ষাগারে তিনিই প্রথম ক্ষুদ্র বিদ্যুৎচুম্বক তরঙ্গ আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। আরও চেষ্টা করছিলেন ক্ষুদ্র তরঙ্গকে রেডিও বা বেতারযন্ত্রের সাহায্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠাতে। অবশেষে ১৮৯৪ সালে সফল হয় তাঁর সেই চেষ্টা।

১৮৯৫ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু কলকাতার টাউন হল মাঠে এক জনসভায় বক্তৃতা দেন। সেখানে তিনি বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গকে বিনা তারে দেয়াল ভেদ করে কীভাবে পাঠানো যায়, সে ব্যাখ্যা দেন। এমনকী তার যন্ত্রটা চালিয়েও দেখান। সারা ভারতে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। নাম ছড়ায় ইউরোপেও।
ওই বছরই তাঁর কাজ নিয়ে একটা ফিচার ছাপা হলো ইংল্যান্ডের ইলেকট্রিশিয়ান পত্রিকায়।

জগদীশ বসুর গবেষণা ও খ্যাতির ফলে বাংলার সরকার তাঁকে নয় মাসের জন্য ইউরোপ ভ্রমণে পাঠায়। ১৮৯৬ সালে ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটির এক সভায় যোগ দেন জগদীশ চন্দ্র বসু। সেই সভায় বেতারে বার্তা প্রেরণ করে তাঁর কাজের প্রমাণ দেখান। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন লর্ড র;্যালেসহ আরও অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী।

এর এক বছর পর পর ইতালিয়ান বিজ্ঞানী মার্কোনিও একটা বেতারযন্ত্র তৈরি করেন। অনেকে মনে করেন জগদীশ চন্দ্র বসুর যন্ত্রটার নকল করেছিলেন তিনি। আসলে তা নয়। সেই সময় বেতার যন্ত্র নিয়ে অনেকেই কাজ করেছিলেন। জগদীশ চন্দ্র বসু আর মার্কোনি তাঁদের অন্যতম।

জগদীশ চন্দ্র বসু যে ধরনের বেতারযন্ত্র তৈরি করেছিলেন, তা অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গের বিদ্যুৎচুম্বক তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ বিকিরণ প্রেরণ করতে পারত। আজকের রাডার, টেলিভিশন ও স্যাটেলাইট যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই ধরনের তরঙ্গের আদান-প্রদান ঘটে। তাই বলা যায় এসব যন্ত্রের মূল ভিত্তিই হলো জগদীশ চন্দ্র বসুর বেতারযন্ত্র। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটিতে দেওয়া তাঁর বক্তব্য শুনে ও পরীক্ষাগুলো দেখে র‌্যালে বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'এমন নির্ভুল পরীক্ষা আগে কখনো দেখিনি- এ যেন মায়াজাল'। সেই বক্তৃতার পর বিখ্যাত বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন লাঠিতে ভর দিয়ে এসে জগদীশ চন্দ্র বসুর স্ত্রী অবলা বসুকে অভিনন্দন জানান। এরপর জগদীশের খ্যাতি আরও বেড়ে যায়। ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে আমন্ত্রণ আসে। সেখানেও বক্তৃতা দেন।

সে সময় ইউরোপের এক বিখ্যাত ইলেকট্রনিক কোম্পানি জগদীশ বসুর বেতারযন্ত্রের নকশাটা কিনতে চায়। কিন্তু তিনি সেটা বিক্রি করতে রাজি হননি। এর কিছুদিন পরেই মার্কনিও তার বেতারযন্ত্র তৈরি করেন। তখন সেই ইলেকট্রনিকস কোম্পানি মার্কোনির যন্ত্রের নকশাটা কিনে নেয়। ফলে মার্কোনির তৈরি বেতারযন্ত্রই ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। আবিষ্কারকের মর্যাদা তিনিই পেয়ে যান তিনি। এ নিয়ে অবশ্য জগদীশ চন্দ্র বসুর মনে কোনো দুঃখ ছিল না। তিনি মনে করতেন, বিজ্ঞান হলো সাধনা, ব্যবসার বস্তু নয়।

সুতরাং, ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটা একেবারেই গুজব। ওই সময় অনেকেই এই যন্ত্র নিয়ে কাজ করছিলেন, জগদীশ চন্দ্র বসু বা মার্কোনি এ যন্ত্র তৈরি না করলে অন্য কেউ করে ফেলত। এমনকী জগদীশ বসুর আগে অনেকেই বেতার যন্ত্র তৈরি করেছিলেন, সেগুলো হয়তো অতটা কার্যকর হয়নি। এর প্রমাণ মেলে জগদীশ চন্দ্র বসুর বেতারযন্ত্র নিয়ে ইলেকট্রিশিয়ান পত্রিকার ওই ফিচারেই। সেখানে বলা হয়েছিল, 'এ পর্যন্ত যতগুলো বেতারযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সব কটিকে হারিয়ে দিয়েছে জগদীশ চন্দ্র বসুর বেতারযন্ত্র।'

সুতরাং জগদীশ চন্দ্র বসুকে মর্যাদা দিতে গিয়ে আমরা ষড়যন্ত্রের যে কথা বলি, সেটা সত্যি নয়। এ কথা বললে, বরং মার্কোনির কৃতিত্বকে ছোট করা হয়। আবার ইউরোপিয়ানরা আমাদের বিজ্ঞানীদের খাঁটো করে দেখেন, সেটাও সত্যি নয়। বরং ব্রিটিশ ভারতের বিজ্ঞানী হিসেবে জগদীশ চন্দ্র বসুকে নিয়ে গর্ব করে খোদ ব্রিটিশরাই। একারণেই তাঁদের পঞ্চাশ টাকার নোটে জগদীশ চন্দ্র বসুর ছবি ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্র: ব্রিটানিকা
লেখনী: কালের কন্ঠ

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+2 টি ভোট
3 টি উত্তর 877 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 194 বার দেখা হয়েছে

10,807 টি প্রশ্ন

18,512 টি উত্তর

4,744 টি মন্তব্য

512,658 জন সদস্য

182 জন অনলাইনে রয়েছে
28 জন সদস্য এবং 154 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

    1280 পয়েন্ট

  2. Dibbo_Nath

    370 পয়েন্ট

  3. Fatema Tasnim

    340 পয়েন্ট

  4. _Polas

    160 পয়েন্ট

  5. Arnab1804

    140 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে ডিম চাঁদ কেন বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মাছ মশা শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা মস্তিষ্ক ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...