ঔষধের প্রথম প্রয়োগ কেন অন্য প্রাণীর উপর করা হয়?
যখন একটি নতুন ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের কৌশল তৈরি করা হয়, তখন সমাজ সেই ওষুধ বা কৌশলটিকে প্রথমে মানুষের মধ্যে ব্যবহার করা অনৈতিক বলে মনে করে কারণ এটি ভালোর পরিবর্তে ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর পরিবর্তে, ওষুধ বা কৌশলটি নিরাপদ এবং কার্যকর কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য প্রাণীদের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়।
বায়োমেডিকাল গবেষণার ইতিহাস জুড়ে প্রাণীগুলি বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রারম্ভিক গ্রীক চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা।যেমন: অ্যারিস্টটল(৩৮৪ – ৩২২ খ্রিস্টপূর্ব) এবং ইরাসিস্ট্রেটাস, (৩০৪ – ২৫৮ খ্রিস্টপূর্ব)জীবিত প্রাণীদের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। একইভাবে, গ্যালেন (129 - 199 / 217 খ্রিস্টাব্দ),ইবনে জুহর (আভেনজোয়ার) এবং আরও আরব চিকিৎসক, মানুষের রোগীদের উপর প্রয়োগ করার আগে অস্ত্রোপচারের পদ্ধতিগুলি পরীক্ষা করার জন্য একটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতি হিসাবে প্রাণী পরীক্ষা চালু করেছিলেন।
বর্তমান সময়েও অনেকেই পশুদের ব্যবহার করে ওষুধ পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করেন।নতুন কোনো চিকিৎসাপ্রযুক্তি, ওষুধ, টিকা আবিষ্কার ও এসবের কার্যকারিতা পরীক্ষায় বিশ্বজুড়ে নানা প্রজাতির প্রাণীর ব্যবহার করা হয়। মানুষের জন্য কোনো ওষুধ বা টিকা কার্যকর ও নিরাপদ কি না, তা দেখার জন্য ওই ওষুধ ও টিকা প্রথমে কোনো প্রাণীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। মানুষের মতো প্রাণীর কোষেও ক্রোমোজোম থাকে। ক্রোমোজোমে থাকে জিন। প্রাণীর বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্য কী হবে, তার নির্দেশনা থাকে জিনে। মানুষের সঙ্গে অনেক প্রাণীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য, জিনকাঠামো ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে মিল আছে। তবে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত প্রাণী হচ্ছে ইঁদুর। ইঁদুরের জিনের সঙ্গে ৯৮ শতাংশ মিল আছে মানুষের জিনের। মানুষের প্রয়োজনে হওয়া গবেষণার ৭৪ শতাংশ প্রথমে ইঁদুরের ওপরে চালানো হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ৩৭টি নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিজ্ঞানীরা তাঁদের আবিষ্কারের গবেষণায় ইঁদুর ব্যবহার করেছিলেন। জিন কীভাবে কাজ করে, কোষ কীভাবে কাজ করে, শরীর কীভাবে বাইরের তথ্যের সমন্বয় ঘটায়—এসব মৌলিক গবেষণায় ইঁদুর ব্যবহার করা হয়েছিল।
তবে বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির কারণে প্রাণীদের উপর এরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সীমিত করা হচ্ছে।অনেক দেশে তো এসব বন্ধের জন্য নানা আইনও তৈরি করা হয়েছে।
Shah Sultan Nur
Source : NCBI