গনিত বিষয় সবাই ভয় পায় কেনো? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
128 বার দেখা হয়েছে
"গণিত" বিভাগে করেছেন (190 পয়েন্ট)

2 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (5,060 পয়েন্ট)

কোনো কোনো মনস্তত্ত্ববিদের মতে, গণিত ভীতি একধরনের চিকিৎসাযোগ্য মানসিক সমস্যা। তবে এই সমস্যায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি যে গণিতে ভালো করতে পারে না, তা মোটেই সত্য নয়। গণিতকে ভয় পাওয়া সেই ফরাসি স্কুলছাত্র লরেন সোয়াজ পরবর্তীতে গণিতের সর্বোচ্চ সম্মান ফিল্ডস মেডেলে ভূষিত হয়েছিলেন।

গণিতভীতি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন মেরি ফিডেস গফ নামের এক গবেষক। ১৯৫৪ সালে তিনি প্রথম তার লেখায় ‘Mathemaphobia’ নামে শব্দটির প্রচলন করেন। গণিতের প্রতি সাধারণ মানুষের ভীতি আর তার প্রতিকারে কী করা যেতে পারে, তা ছিলো এই গবেষকের গবেষণার বিষয়বস্তু। 

র্তমান সময়ের মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, বেশিরভাগ মানুষের এই গণিত কিংবা সংখ্যার প্রতি বিদ্যমান ভীতি লুকিয়ে আছে তাদের মস্তিষ্কে। যারা গণিতকে ভয় পায়, তাদের অনেকের মনেই এই ধারণা বদ্ধমূল যে তারা গণিতে খারাপ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনা কিছুটা উল্টো। তারা গণিত নিয়ে ভয়ে থাকে বলেই তাদের গাণিতিক সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা কম। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, মানুষ যখন গণিত সমাধানের ব্যাপারটি নিয়ে শংকিত হয়ে যায়, তখন তার বুদ্ধিবৃত্তিক জ্বালানিতে টান পরে। আর সেই জ্বালানি হলো ক্ষণস্থায়ী এবং দ্রুতগতির স্মৃতিশক্তি ব্যবস্থা, যা ‘ওয়ার্কিং মেমরি’ নামেও পরিচিত। এই স্মৃতিশক্তি ক্ষণস্থায়ী হলেও কোনো কাজের তথ্যগুলো ঠিকঠাক গুছিয়ে নিতে এর বিকল্প নেই। কঠিন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ কিংবা সমস্যা সমাধানে এই ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তির ভূমিকা আরো বেশি। গণিত সমাধানের ক্ষেত্রে এই ক্ষণস্থায়ী স্মৃতির সিংহভাগই ব্যবহার করতে হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, গাণিতিক সমস্যা নিয়ে শুরুতেই যদি কেউ ভীত হয়ে যায়, তাহলে এই ক্ষণস্থায়ী স্মৃতির অনেকটাই নেতিবাচকতা এবং এর প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কাজেই ব্যস্ত হয়ে যায়। গাণিতিক সমস্যাকে মোকাবেলা করার জন্য খুব অল্পই অবশিষ্ট থাকে। ফলে দেখা যায় গণিতভীতিতে ভুক্তভোগীদের অনেকেই মানসিক চাপে সাধারণ যোগ-বিয়োগেও তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। প্রতিযোগিতা কিংবা পরীক্ষায় এই ধরনের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে অনেকের মাঝেই।

গবেষকদের দীর্ঘদিন ধরে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, গণিতের প্রতি ভীতি থাকা ব্যক্তিদের গাণিতিক সমস্যা দিয়ে কোনো পরীক্ষা কিংবা প্রতিযোগিতায় বসিয়ে দিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ‘কর্টিসল’ নামক হরমোন নিঃসরিত হয়। এই হরমোন আমাদেরকে অধিকমাত্রায় উত্তেজিত করে দেয়। পাশাপাশি এই ধরনের প্রতিযোগিতা কিংবা পরীক্ষা আমাদের মস্তিষ্কের এমন কিছু স্থানকে (পেইন ম্যাট্রিক্স) উত্তেজিত করে, যেগুলো আমরা সাধারণত ব্যথা পেলেই কার্যকর হয়।

তবে এমনটা হওয়ার পেছনে লুকিয়ে থাকা কারণটা বের করতেও কাঠখড় কম পুড়িয়ে যাচ্ছেন না গবেষকরা। তবে তাদের ধারণা, শিশুদেরকে খুব কম বয়সে যেভাবে গণিতের হাতেখড়ি দেওয়া হয়ে থাকে, সে ব্যাপারটিও কোনো অংশে কম দায়ী নয়। বেশিরভাগ শিশুর সামনেই তার পরিবার কিংবা শিক্ষক উভয়েই গণিতকে বিভীষিকা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। এমনকি অনেক কম বয়স থেকেই বেঁধে দেওয়া সময়ে গণিতের সমাধান করতে দেওয়াও ভীতির সঞ্চার করে শিশুদের মধ্যে। বিশেষ করে মেয়েরা গণিত সমাধানে কম দক্ষ, এমন মানসিকতাও বিদ্যমান অনেকের মধ্যেই। তবে ব্যাপারটি মোটেই সত্য নয়। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন গবেষণা বলছে, গাণিতিক সমস্যা সমাধান দক্ষতা আমাদের লিঙ্গের সাথে যতটা না জড়িত, তার চেয়ে অনেক বেশি জড়িত আমাদের সংস্কৃতির সাথে। ছোটবেলা থেকেই মেয়ে শিশুদের মধ্যে গণিত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিয়ে দিলে পরবর্তী জীবনে তা উৎরে যাওয়া খানিকটা কঠিন। এমনকি গণিতের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান ফিল্ডস মেডেল পাওয়া প্রথম নারী গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখানিও স্কুলে পড়ার সময়ে গণিতের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, কারণ তার শিক্ষকেরা মনে করতো মরিয়মের গণিত সমাধান করার মতো প্রতিভা নেই।

গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখানি; Image source: din.az

তবে গবেষকদের ধারণা, গণিতের প্রতি বিদ্যমান এই ভীতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। মূলত যেকোনো প্রতিযোগিতায় গণিতকে কেন্দ্র করে ভীতি এবং উত্তেজনাকে কাটিয়ে উঠতে একটি কার্যকর উপায় হলো এই ভীতিকে অন্যদিকে ধাবিত করে দেওয়া। এটি করা যেতে পারে ছোট ছোট নিঃশ্বাস নিয়ে। এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে উত্তেজিত মুহূর্তেও নিজেকে শিথিল করা যায়। কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে সৃষ্ট উত্তেজনার ফলে অনেক সময় আমাদের হাত-পা কাঁপতে থাকে কিংবা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার যে ব্যাপারটি দেখা যায়, সেটিও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

গণিতভীতিকে যেহেতু বর্তমান সময়ে একটি মানসিক সমস্যা হিসেবেও গণ্য করা হয়, সেটিকে দূর করার আরেকটি উপায় হলো গণিতের নিজের ভয়ভীতিকে লিখে ফেলা এবং সেগুলো মূল্যায়ন করা। ‘Expressive writing’ নামক প্রক্রিয়ায় নিজের সমস্যাগুলোর বিবরণ নিজেই খাতায় লিখে ফেলা হয় এবং এর ফলে ক্ষণস্থায়ী কার্যকরী স্মৃতির উপর চাপ অনেকটাই কমে আসে।

Expressive writing নিয়ে লেখা একটি বইয়ের প্রচ্ছদ; Image source: www.barnesandnoble.com

পরবর্তীতে মানসিকভাবে চাপমুক্ত অবস্থায় সেই বিষয়গুলোকে পুনরায় মূল্যায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে কী করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। গণিত সমাধানে কাটিয়ে উঠতেও এই প্রক্রিয়া বেশ কাজে দেয়। এক জরিপে দেখা গেছে, এক দল কলেজ শিক্ষার্থীকে গণিত সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের ভয়ভীতির ব্যাপারে লিখে সেগুলো নিজেকে মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছিলো। কয়েকমাস অন্তর অন্তর তাদের গণিতের ছোট ছোট পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের গড় নম্বর রেকর্ড করা হয়। এবং যাদের এই কাজ করতে বলা হয়নি, তাদের কয়েকজনেরও এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। উভয়ের গড় নম্বর তুলনা করে দেখা গেছে নিজের ভয়ভীতিকে লিখে সেগুলোকে মূল্যায়ন করা দলটি তূলনামূলক এগিয়ে আছে এবং গণিতের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবও অনেকাংশে দূরে সরে গেছে।

গনিতভীতি দূর করতে প্রয়োজন গণিতের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব; Image source: ed.ted.com

পাশাপাশি গণিতের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ভীতি কাটিয়ে উঠতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ মানুষের মস্তিষ্ক যথেষ্ট মাত্রায় সহনক্ষম এবং খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপযোগী। খুব ছোট বয়স থেকেই বাচ্চাদেরকে গণিত সমাধানে সময় বেঁধে দিয়ে তাদেরকে গণিতের প্রতি ভীত করে না তোলারও পরামর্শ দেন অনেক মনস্তত্ত্ববিদ। পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে গণিতের প্রতি বিদ্যমান ভয় উল্লেখযোগ্য হারে দূর করা যায়। অনেকটা নতুন ভাষা শেখার মতো করেই প্রকৃতির এই ভাষা শেখার চেষ্টা করলে গণিত মোটেই কঠিন কিছু নয়। 

0 টি ভোট
করেছেন (4,260 পয়েন্ট)

গণিত বিষয় সবাই ভয় পায় না, তবে অনেকেই ভয় পায়। গণিতের ভয়কে "ম্যাথফোবিয়া" বলা হয়। গণিতে ভয় পাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে, এর মধ্যে কয়েকটি হল:

  • অপ্রাপ্তি অভিজ্ঞতা: অনেকেই ছোটবেলায় গণিতে খারাপ ফল করে থাকে। এই অভিজ্ঞতা থেকে তারা মনে করে যে তারা গণিতে ভালো হতে পারবে না, ফলে তারা গণিতকে এড়িয়ে চলা শুরু করে।
  • ভুলের ভয়: গণিতে ভুল হলে তা খুব সহজেই ধরা পড়ে। এই কারণে অনেকেই গণিত করার সময় ভুলের ভয় পায়।
  • অস্পষ্টতা: গণিতের অনেক ধারণা এবং সূত্রই অস্পষ্ট। এই কারণে অনেকেই গণিত বুঝতে সমস্যা হয়।
  • সাংস্কৃতিক প্রভাব: অনেক সমাজে গণিতকে একটি কঠিন বিষয় হিসেবে দেখা হয়। এই কারণে অনেকেই গণিতকে ভয় পায়।

গণিতে ভয় দূর করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • গণিতের মূল ধারণাগুলি বুঝতে মনোযোগ দিন।
  • নিয়মিত অনুশীলন করুন।
  • ভুল থেকে শিক্ষা নিন।
  • একজন ভালো শিক্ষকের কাছ থেকে সাহায্য নিন।

গণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গণিতে দক্ষ হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করা সহজ হয়। তাই গণিতে ভয় না পেয়ে এটিকে ভালোভাবে শিখতে চেষ্টা করা উচিত।

আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন। ধন্যবাদ!

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
1 উত্তর 293 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
1 উত্তর 438 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
1 উত্তর 3,210 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
2 টি উত্তর 4,781 বার দেখা হয়েছে
24 এপ্রিল 2022 "গণিত" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Soumyajit Biswas (220 পয়েন্ট)

10,723 টি প্রশ্ন

18,367 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

241,447 জন সদস্য

32 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 32 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Ayon Ratan Agni

    390 পয়েন্ট

  2. Al Moyaj Khondokar

    210 পয়েন্ট

  3. Vuter Baccha

    150 পয়েন্ট

  4. Hasan rafi

    140 পয়েন্ট

  5. Israt Jahan Taha

    130 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি প্রাণী স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া শীতকাল গরম কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ মস্তিষ্ক শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন গ্রহ রসায়ন তাপমাত্রা উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা পাখি গ্যাস মন সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম বিড়াল কান্না নাক
...