মনে করুন আপনি এক জায়গায় চাকরির ভাইভা দিতে গেলেন। আপনার সাথেই আপনার এক সহপাঠী; সে দেখতে সুদর্শন পুরুষ। ২জনের প্রায় একই সিজি, একই বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু কোনো কারণে আপনি তার চেয়ে কিছু অংশে এগিয়ে থাকার পরও ভাইবা বোর্ড আপনাকে বাদ দিয়ে আপনার সেই সহপাঠীকে নিয়ে নিলো। কেনো? কারণ আপনার সেই সহপাঠী এক কথায় সুন্দর। জিনিসটা আপেক্ষিক বা নৈতিক দিক দিয়ে অবশ্যই অনৈতিক! কিন্তু প্রতিনিয়ত শুধু আমাদের সমাজ বা দেশে নয় বরং পুরো বিশ্বে আপেক্ষিক ভাবে সুন্দর মানুষরা pretty privilege বা সৌন্দর্যের কারণে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। এটা আমার কথা নয়, Harvard Business review এই নিয়ে বেশ খোলামেলা আলোচনা করেছে (মূল বিষয়বস্তু ছিল বিউটি বায়াস ও এটা থামাতে বা নিরপেক্ষতা আনতে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে, কিন্তু এখানে বিউটি বায়াসের যে অনিরপেক্ষ দিক বা সৌন্দর্যের দিক দিয়ে অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যে ব্যাপারটা তা ফুটে উঠেছে)
এখন কথা হচ্ছে, বিউটি বায়াসটা কি?
-বিউটি বায়াস হচ্ছে কারো চেহারা, সমাজে প্রচলিত বিউটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কাউকে সুন্দর লাগলে তাকে সব সাধারণ নিয়ম থেকে আলাদা করে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া, তার ভুল ত্রুটি সহজেই ক্ষমা করে দেয়া, মনে করা যে সে সবার থেকে স্পেশাল ও নৈতিকভাবে একজন ভালো মানুষ। (Science Bee)
আরও সহজভাবে ব্যাখা করি, আমাদের চারপাশে তাকালেই দেখা যায়, ছেলেরা যারা চুল বড় রাখে তারা ভালো ছেলে হওয়া সত্বেও প্রথম দেখায় বেশিরভাগ মানুষ তাদের ভালো ছেলে হিসেবে মেনে নিতে চান না। অন্যদিকে, কোন সুদর্শন ছেলে কোনো খারাপ কাজ করলেও তাকে কিছুটা সমীহার চোখে দেখা হয়, মনে করা হয় ছেলেটা নিশ্চয়ই ভুল করে করে ফেলেছে, তাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়া উচিত, সে তো এমন করার কথা না। এমন শুধু মাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যের উপর বিবেচনা করে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেয়া বা আচরণ করাকে Beauty bias বলে।
এক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে মেয়েরা বেশি সুবিধা পান। রিসার্চে দেখা যায় যে, যারা শারীরিক ভাবে বেশি আকর্ষণীয় তারা সাধারণ যেকোনো মানুষের তুলনায়, সমাজের মানুষ তাদের বেশি পজিটিভলি গ্রহণ করে। এবং তাদের জীবনে বেশ কিছু বিষয়ে অতিরিক্ত সুবিধা পেতে দেখা যায়। যেমন- বেশি বন্ধু পাওয়া, বেশি সেলারি পাওয়া, সামাজিকভাবে উচ্চতর মর্যাদা পাওয়া ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে যোগ্যতাকে বেশি মর্যাদা দেয়া হলেও এই বিউটি বায়াস এখনো সব জায়গায় প্রবলভাবে দেখা যায়। দেখা যায় যে, চাকরি বা অন্যান্য প্রতিযোগিতায় যারা শারীরিকভাবে সুন্দর তারা অন্যদের তুলনায় ১০-১৫% পর্যন্ত এগিয়ে থাকেন।
এই অতিরিক্ত সুবিধা গুলো তারা খুব ন্যাচারালি পেয়ে থাকেন। এর পিছনে আমাদের কিছু পুরোনো সাইকোলজি কাজ করে। আমাদের ছোটবেলার প্রিয় যে ডিজনি প্রিন্সেস গুলো রয়েছে, তাদের গল্প একই ধরনের প্রতিফলন দেখা যায়। প্রিন্সেস গুলো সাধারণত সুন্দর আকৃতির, শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় ও সবশেষে হ্যাপি এন্ডিং পায়। অপরদিকে, যারা ডাইনি বা ভিলেন থাকে তারা অসুন্দ*র, কদা*কার হয়ে থাকে। এই যে যারা সুপ্রিম এবং ভালো তাদেরকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা এবং যারা তুলনামূলক কুৎ*সিত দেখতে তাদেরকে খারাপ মনে করা এসবই বিউটি বায়াসের উদাহরণ।
এখন এই বিউটি বায়াস কেনো হয়ে থাকে?
ডিউটি বায়াসের এই প্রবণতা অনেক পুরাতন। ধারণা করা হয় প্রাচীনকালে যারা বেশ ভালো সামাজিক অবস্থানে ছিল, তারা নিজেদের শারীরিকভাবে বেশি যত্ন নিত এবং সুন্দরভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতো। অপরদিকে যারা সামাজিকভাবে নিচু শ্রেণীর ছিল তাদের উঁচু শ্রেণিদের মতো করে নিজেদের সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার কোন সুযোগ ছিল না। সেই সাথে তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করা লাগত বলে নিজেদের যত নেয়ার মত কোন সুযোগ থাকত না। সেখান থেকেই যারা আকর্ষণ ও তাদের সামাজিকভাবে উঁচু শ্রেণীর এবং যারা আকর্ষণীয় না তাদের সামাজিকভাবে নিচু শ্রেণীর হিসেবে সহযোগী চেনা যেত। এই সমাজ ব্যবহার অনেক আগেই চলে গেলেও এই মানুষিকতা আমাদের মধ্যে এখনো কোনো ভাবে রয়ে গেছে। যার প্রতিফলন বিউটি বায়াসে দেখা যায়।
বিউটি বায়াসের মুল কথাই হচ্ছে, যারা সুন্দর, আকর্ষণীয় তারা ভালো, মোরালিটির দিক দিয়ে অন্যদের দিক থেকে এগিয়ে। এরা কোনো খারাপ কাজ করলেও সেই খারাপ কাজকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হয়। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতায় তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। শুধুমাত্র সুন্দর হওয়ার কারণে এই এক্সট্রা সুবিধা গুলো দেওয়াই বিউটি বায়াস।
নাদিয়া ইসলাম
Team Science Bee
#science #bee #facts #beauty #bias