
আপনিও কি ইন্ট্রোভার্ট?
আপনি কি কখনো অনেক মানুষের সাথে সময় কাটাবার পর ক্লান্ত বোধ করেন? আপনি অফিসে গেলেন, সবার সাথে কথা বললেন, কিংবা অনেকে মিলে বেড়াতে গেলেন, সবাই মিলে আড্ডা দিলেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আপনি যদি এতে হাঁপিয়ে ওঠেন, তবে আপনি সম্ভবত ইন্ট্রোভার্ট। ইন্ট্রোভার্ট হবার একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো, সামাজিক ব্যাপারগুলোতে আপনার মনে হবে আপনি সময় বা শক্তি খরচ করছেন, যেখানে অন্যরা বরং এসব উপভোগ করে।
বিকালবেলা বা অবসরে আড্ডা দেবার চেয়ে বা বন্ধুরা মিলে কোথাও ঘুরতে যাবার চেয়ে আপনি যদি একা একটু বই পড়া, নিজের শখের কাজগুলো করা, গান শোনা বা টিভি দেখাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তবে আপনি সম্ভবত ইন্ট্রোভার্ট। মনে রাখবেন, অনেক ইন্ট্রোভার্ট এর বিপরীতও করে থাকেন।
অন্যরা কি আপনাকে রিজার্ভড, চুপচাপ স্বভাবের বলে জানে? ইন্ট্রোভার্টদের অন্যরা রিজার্ভড, চুপচাপ এমনকি ভুল করে অনেক সময়ই লাজুক বলে থাকে। আসল ব্যাপার হলো, ইন্ট্রোভার্টরা কথা বলার আগে সেটা ভালোমতো ভেবে দেখে, তাই রেসপন্স করতে একটু সময় নেয়। তাছাড়া অধিকাংশ ইন্ট্রোভার্ট অযথা কথা বলতে পছন্দ করে না।
অন্তর্মুখী (Introvert) স্বভাবের মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য :
১. বেশিরভাগ সময়েই ফেসবুকের চ্যাটলিস্ট (Active Status) বন্ধ রাখে।
২. ফেসবুকে অপেক্ষাকৃত কম পোস্ট আর শেয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
৩. বন্ধুত্বের সার্কেল মোটামুটি ২-৩জনের একটা গ্রুপ বা তারও কম।
৪. সরাসরি ফোনের কল রিসিভ না করে, রিং শেষের অপেক্ষায় থাকে, তারপর ছোট্ট একটা বার্তা পাঠায়, "কথা বলতে পারবোনা। কি ব্যাপার! অনুগ্রহপূর্বক মেসেজে বলুন"।
৫. নিজের সাথেই মনে মনে কথা বলতে পছন্দ করে!
৬. চারদেয়ালের ঘরোয়া পরিবেশটাই তার জন্য খোলা ময়দান!
৭. কেউ তাকে পছন্দের কথা জানালে, সে বলে, " এটা কীভাবে সম্ভব! আমার মতো মানুষকে কেউ পছন্দ করবে তা সম্পূর্ণ ধারণার বাইরে!"
৮. যদি কোনো সম্পর্কের মাঝে আবদ্ধ থাকে, তবে জীবনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় ধরে রাখতে চায়!
৯. বেশিরভাগ মানুষের সাথে কথা বলতে গেলে চোখ মেলানোয় অভ্যস্ত নয় সে।
১০. সে শরীরচর্চার চেয়ে বেশিরভাগ সময় সকালের প্রকৃতির ছোয়া পেতেই বাইরে যায়।
১১. হোয়াটসঅ্যাপে কোনো মেসেজের নোটিফিকেশন আসলে, এ্যাপে না ঢুকে সরিয়ে দেয় নোটিফিকেশন বার থেকে যদি না কোনো রিপ্লাই করার ইচ্ছে থাকে।
১২. সাইড পকেট আছে এমন পোশাক পড়তে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে, যাতে করে অস্বস্তিকর কোনো পরিস্থিতিতে হাত গুটিয়ে পকেটে নিতে পারে।
১৩. নিজের জন্মদিন নিয়ে অতটা হইচই, মাথাব্যথা নেই। সময় সুযোগ পেলে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে দিলেই বাঁচে!
১৪. সে সপ্তাহান্তে ঘুরতে যায় না বরং বই পড়েই কাটায়।
১৫. তার ফ্যাশন, স্টাইল নিয়ে মাথাব্যথা নেই
১৬. তার হৃদয়ের কোনো এক কোণে নিরাপত্তাহীন একটা জায়গা আছে, তবে সেটা সুকৌশলে গোপন রাখতে জানে!
১৭. সে অলস নয়, তবে আগ্রহটাই কম।
১৮. সে কতটুকু প্রতিভার, সেটা শুধুই তার রুমের দেয়াল গুলোই জানে!
১৯. রুমের বাইরে পা রাখেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত না যে মেহমানরা (Guests) চলে গেছে!
২০. কেউ তুচ্ছতাচ্ছিল্য, গাধামো আর যাইকরুক না কেন, তাদের উপরও তেমন কোনো ক্ষোভ নেই, যেমন অন্তর্মুখী আছে, তেমনই। থেকে যায়!
২১. মনের মাঝেই একটা সাম্রাজ্য তৈরি করতে পারে, যেখানে সকল কথাবার্তা, যোগাযোগ, ছন্দ-কবিতা, গান, গল্প, আর কাল্পনিক চরিত্রের সৃষ্টি নিজে একা একাই করে, মনেহয় সেটাই তার বাস্তবতা।
২২. সে মনে করে এই জীবনের অর্থ-পরিধি আরও বিশাল যা স্বাভাবিক ভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়না। আর সেই জীবনের গভীর অর্থ খুঁজতেই সময় কাটে তার!
২৩. কথা কম, কাজ বেশি:
বলা হয়,
“Introverts are good listeners”
তারা হয়তো কথা খুবই কম বলতে পছন্দ করে তবে তারা যেটা খুব ভালো পারে তা হল অপরের কথা মন দিয়ে শোনা।
২৪. গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা:
Introvert মানুষগুলোর সাধারণত অনেক বেশি মানুষের সাথে বন্ধুত্ব কিংবা সখ্যতা না থাকলেও, যে কয়জনের সাথে থাকে, তাদের সাথে সম্পর্কগুলো খুব দৃঢ় হয়। বন্ধু কিংবা সঙ্গী হিসাবে তারা সাধারণত খুবই বিশ্বাসযোগ্য ও উদার হয়ে থাকে। তারা সর্বদা অন্যদের কথা বলার সুযোগ দেয় এবং এর মাধ্যমে পারস্পরিক সম্প্রীতি, ভালবাসা ও শ্রদ্ধা গড়ে তুলতে পারে। তারা আমাদের শেখায় যে একটি সম্পর্ককে আরও অর্থবহ ও গভীর ভাবাপন্ন করতে হলে কীভাবে অপর পাশের মানুষটিকে শ্রদ্ধা করতে হয়, সময় দিতে হয়, তাদের কথা শুনতে হয়। তাই আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ মানুষগুলো যেন আদর্শ!
অনেকের চরিত্রই অনেক বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। তবে কিছু মানুষ সকল ধরনের স্বভাবেই নিজেকে তুলে ধরতে যানে। তারা অন্তর্মুখী, বহির্মুখী কোনোটাই নয়, তারা নিজেরাই জানে না এটার সংজ্ঞা।