সিন্যাপস
দুটি নিউরনের সংযােগস্থলকে অথবা একটি নিউরন ও একটি ইফেক্টরের (যেমন পেশি অথবা গ্রন্থি) সংযােগস্থলকে সিন্যাপস বলে। সিন্যাপস এর মাধ্যমে উত্তেজনা বা তথ্য এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে প্রেরিত হয়। এগুলাের মাধ্যমেই প্রান্তীয় স্নায়ু দ্বারা গৃহীত উদ্দীপনা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরিত হয় এবং কেন্দ্রের নিদের্শাবলি প্রান্তের সুনির্দিষ্ট অঙ্গে পৌঁছায়। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সকল উচ্চতর কার্যাবলি যেমন- সমন্বয়, শিক্ষণ, স্মৃতি ইত্যাদি সবকিছুই সম্ভব হয় কেবল সিন্যাপসের জন্য। স্নায়ুতন্ত্রে সিন্যাপস অসংখ্য এবং ধারণা করা হয় এর সংখ্যা প্রায় ১০১৪। এসব সিন্যাপস বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন নামের হয়ে থাকে।
সিন্যাপসের গঠনঃ
দুটি নিউরনের অংশ মিলিত হয়ে সিন্যাপস গঠন করে। যে নিউরনের অ্যাক্সন সিন্যাপস গঠনে অংশ নেয় তাকে প্রিসিন্যাপটিক নিউরন বলে। সিন্যাপস গঠনকারী অন্য নিউরনকে পােস্ট সিন্যাপটিক নিউরন বলে। প্রিসিন্যাপটিক নিউরনের প্রিসিন্যাপটিক মেমব্রেন এবং পােস্টসিন্যাপটিক নিউরনের পােস্টসিন্যাপটিক মেমব্রেন সম্মিলিতভাবে সিন্যাপস গঠন করে। এ দুটি মেমব্রেনের মাঝে প্রায় ২০ ন্যানােমিটার দৈর্ঘ্যের তরল পূর্ণ ফাঁক থাকে একে সিন্যাপটিক ক্লেফট (Synaptic cleft) বলে। প্রিসিন্যাপটিক মেমব্রেন প্রকৃতপক্ষে প্রিসিন্যাপটিক নিউরনের অ্যাক্সনের স্ফীত প্রান্তের অংশ। অ্যাক্সনের স্ফীত প্রান্তকে সিন্যাপটিক নব (Synaptic knob) বলে। এ নবের ভিতরে অসংখ্য মাইটোকন্ড্রিয়া, মাইক্রোফিলামেট এবং নিউরােট্রান্সমিটার যুক্ত ভেসিকল থাকে। আর পােস্টসিন্যাপটিক মেমব্রেন, পােস্টসিন্যাপটিক নিউরনের সােমা বা ডেনড্রাইট বা অ্যাক্সনের অংশ।
সিন্যাপসের কাজঃ
- এগুলাে এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনের তথ্যের প্রেরণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
- এরা উদ্দীপনা বাছাই করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরণ করে।
- এরা নিউরােট্রান্সমিটার বস্তু ক্ষরণ করে।
- এরা বিভিন্ন নিউরনের মধ্যে সমন্বয় ঘটায় এবং স্নায়ু উদ্দীপনার গতিপথ নির্ধারণ করে।
- স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ুসমূহ অতি উদ্দীপিত হলে অবসাদ গ্রস্থ (fatigued) হতে বাধা দেয়া।
- খুব অল্প মাত্রার স্নায়ু উদ্দীপনাকে ফিল্টার করে বাদ দেয়া (যেমন ঘড়ির কাটার খুব সামান্য শব্দ শুনি না)।
- সব উদ্দীপনার ক্রিয়াকে সমষ্টিবদ্ধ করে (summation) তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করা।
- স্মৃতি শক্তির ভৌত কাঠামাে হিসেবে কাজ করা।