হঠাৎ জলের মধ্যে থেকে শোনা গেলো, মধুর কণ্ঠের সুললিত আকুল করা সুর। বিমোহিত হলেন জাহাজের সব নাবিক, সুরের মূর্ছনায়। লাফ দিলেন অতল জলে, গানের সুরে আবেশিত হয়ে। কিন্তু কোথায় সে সুরের উৎস? কেউ জানেনা।
ক্রিশ্চিয়ান অ্যানডারসনের রূপকথার গল্পের বিখ্যাত সৃষ্টি, লিটল মারমেইড এর গল্প হয়তো অনেকেই পরেছেন। যেখানে বলা হয়, অত্যন্ত সুন্দরী এক কন্যা ভুল করে তার প্রেমিককে হত্যা করে ফেলেন। কিন্তু কন্যাটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জায় দুঃখে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে কিন্তু মেয়েটি এতটাই সুন্দরী ছিলেন যে সমুদ্র দেবতা, তাকে মৃত্যুর রাজ্যে যেতে দিলেন না। বরং তাকে তিনি অর্ধ মানবী অর্থ মাছ রূপে নতুন জীবন দান করেন।
রুপকথার হাজারো গল্পে, হাজারো কল্পকাহিনিতে, এই মৎসকন্যা বা মারমেইডকে বিভিন্ন ভালে তুলে ধরা হয়েছে। সেই আদিকাল থেকে সুন্দরী নারীর, এমন বিশ্বাসঘাতক মৎস্যকন্যার জন্ম নিয়ে, বহু কিংবদন্তির কল্পনা গল্প-উপন্যাস তৈরী হয়েছে। সুধু গল্প-উপন্যাসেই নয়, ছাড়িয়ে বাস্তবেও। মৎস্যকুমারী বা মারমেইডের মায়াজালে জড়িয়েছেন অনেকেই।যুগে যুগে মানুষ খুঁজে বেড়িয়েছে এই প্রাণের উপস্থিতি। অন্তত একবার মৎসকন্যা দেখা পাওয়ার আশায় বছরের পর বছর কাটিয়েছেন। অনেকে আবার এক দর্শনে পাগল হয়েছেন, এমন গল্পও প্রচলিত আছে।
তবে শতাব্দীর পর শতাব্দী কিংবদন্তি, এই মৎসকন্যা নিয়ে, যতই কাহিনি তৈরি হোক না কেন, বাস্তবে এর দর্শন কিন্তু কখনোই পাওয়া যায়নি।পাওয়া না গেলেও, এমনো কিছু গল্প আজও বিদ্দামান যা এই মৎসকন্যা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবায়।মৎসকন্যা দেখেছেন এমন মানুষের মধ্যে সবার আগে চলে আসে বিখ্যাত নাবিক কলম্বাস এর নাম। 1498 সালে আমেরিকা আবিষ্কার করে পৃথিবীর ইতিহাসে আলাদা করে জায়গা করে রাখা এই ব্যাক্তি যখন, মৎস্যকন্যা দেখেছেন বলে উল্লেখ করেন, তখন বিশয়টি অনেকটাই বিস্বাস যোগ্য হয়ে উঠে। তার র্বননা অনুসারে, তিনি যখন ক্যারিবিয়ানদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি সমুদ্র এক অর্ধ মানবী থাকতে দেখেছেন। তার সাথে 80 বছর বয়স্ক এক জেলে দাবি করেন, তিনি নাকি উপকূল থেকে দূরে এক মৎস্যকন্যা দেখেছিলেন। তার বর্ণনা অনুসারে সমুদ্রে তার সামনেই, লাইনে দাড়িয়ে এক মৎস্য কন্যা। তবে খুব বেশিক্ষন তাকানো থাকতে পারেনি, মৎস্য কন্যাটির চোখে চোখ পরার সাথেই, সমুদ্র র্গভে তলিয়ে যায়।
এছাড়াও 1833 সালে ঘটে আরেকটি ঘটনায। ছয়জন জেলের জালে নাকি এক মেয়ে আটকায়। 3 ফুট লম্বা মেয়েটি নাকি জেলেদের নৌকায় উঠার পর তিন ঘন্টা ছিল, সে নাকি জেলেদের সঙ্গে কোন প্রতিরোধে যায়নি। তারা ইশারায় শুধু মেয়েটিকে চলে যেতে বলে। মেয়েটিও কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি দিয়ে সাগরে ঝাপিয়ে পরে এবং কিছুক্ষণ পর আবারও ঢেউয়ের পরে ঢেউ এসে তাদের কৃতজ্ঞতা জানায় এবং একসময় সাগরে হারিয়ে যায়।
যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা নামে পরিচিত, মারমেইড, মৎস্যকন্যা, মৎস্যকুমারী, জলপরী বা সেলকাই। বিশ্ব পুরাণ, কিংবদন্তি, কল্পবিশ্বাস বা ঐন্দ্রজালিক জগতের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে এর অস্তিত্ব। আবহমান কাল ধরে এরা সমুদ্রে কাল্পনিকরূপে ছিল এবং এখনো রয়েছে। এগুলো নিয়ে রয়েছে নানা ঐন্দ্রজালিক রহস্য। সামুদ্রিক নানা অভিযাত্রায় রয়েছে এর নানাবিধ অস্তিত্বের প্রমাণ। কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে এর রহস্য থেকে গেছে রহস্য হিসেবেই।
এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই আছে যার অস্তিত্ব, আমরা বাস্তবের সাথে মিলাতে পারিনা। অনেক কিছুই আছে যা দেখতে পারিনা, শুধু অনুভব করতে পারি। অনেক কিছুই আছে যার অস্তিত্ব না থাকলেও আমরা অস্বীকার করতে পারিনা।আর তেমনি, মৎসকন্যা শব্দটি আজও শুনলে আমাদের , সাগরপাড়ে শুয়ে থাকা কোন রহস্যময় রূপসী কন্যার ছবি কল্পনায় ভেসে ওঠে যার, অর্ধেক শরীর মনুষ্য আর বাকি অর্ধেক মাছ। ছুটে চলে সমুদের ঢেউ এর সাথে সাথে। যার একাকিত্ব খুজে বেরায় কোন সঙ্গীকে। হোক তা বাস্তবে আর হোক সেটা কল্পনায়,বা অনুভবে।
সংগ্রহে : bangladiary.com