আমরা জানি, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে। এ ঘোরার সময় পৃথিবী সূর্যের দিকে সামান্য হেলে থাকে। পৃথিবী আবার তার নিজ অক্ষেও ঘোরে, তাই বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ কখনও সূর্যের কাছে চলে যায়, আবার কখনও উত্তর গোলার্ধ। যখন যে অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন সে অংশ খাড়াভাবে বেশিক্ষণ ধরে সূর্যের আলো ও তাপ পায়। আর তখন সেই অংশে বেশি গরম পড়ে। এসময় থাকে গ্রীষ্মকাল।
একটা অংশ সূর্যের কাছে থাকা মানে তার উল্টো দিকের অংশটা থাকবে সূর্য থেকে দূরে। আর দূরে থাকলে সেই অংশটা কম আলো ও তাপ পাবে। তখন সেই অংশে থাকে শীতকাল।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক- বাংলাদেশে যখন গ্রীষ্মকাল, অস্ট্রেলিয়ায় তখন শীতকাল। আবার ওদের যখন গ্রীষ্ম, তখন আমাদের থাকে শীত। কারণ অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ ও বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধের দেশ।
আরেকটি ব্যাপার হলো, গ্রীষ্মকালে সূর্যের আলো পৃথিবীর ওই অংশে খাড়াভাবে পড়ার কারণে সেই আলো চারদিকে খুব বেশি একটা ছড়িয়ে যায় না। ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে পড়া তাপের পরিমাণ বাড়ে। ফলে ভূপৃষ্ঠ আরও দীর্ঘ সময় ধরে উত্তপ্ত হয়। আর গ্রীষ্মকালে দিন হয় বড় আর রাত ছোট। তাই গ্রীষ্মকালে গরমের পরিমাণ বাড়ে।
ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটে শীতকালে। তখন পৃথিবীর ওই অংশে সূর্যের আলো বাঁকা বা তীর্যকভাবে পড়ে, আর এই আলো চারদিকে ছড়িয়েও পড়ে বেশি। ফলে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে পড়া তাপশক্তির পরিমাণ গ্রীষ্মের তুলনায় বেশ কমে যায়। আর শীতকালে দিন হয় ছোট ও রাত বড়। তাই শীতকালে আমাদের ঠাণ্ডা লাগে।
আরেকটি ব্যাপার হলো, মানুষ হলো উষ্ণ রক্তের প্রাণী। কারণ তার শরীরে সবসময় তাপ উৎপন্ন হয়। আমাদের দেহের তাপমাত্রা সবসময়ই একটু বেশি থাকে। কিন্তু শীতকালে আমাদের দেহ অনেকটাই তাপ হারায়, এ হারানোটা অনুভব করি বলেই আমাদের শীত লাগে। একইভাবে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গরম লাগে।