জীবজগতের উদ্ভিদকূল থেকে প্রাণীকূলের পৃথিবীর আহ্নিক গতির সঙ্গে সা‌যুজ্য রেখে চলা দেহের ভেতরে থাকা এই ঘড়ির সাহা‌য্যে, যার নাম সর্কাডিয়ান ঘড়ি। শরীর, মন ও ব্যবহারিক পরিবর্তন সাধন করে খিদে, ঘুম, আচারআচরণ, হৃদস্পন্দন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে এই দেহ ঘড়ি বা সারকাডিয়ান রিদম।
সাধারনত এই ক্লকের দৌলতে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা অবধি মানুষের রক্তচাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, তার এই সময়ে মানুষ খুব সচেতন থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূলত বেলা ১২টার পর বাড়ে তার ভাববিনিময় ক্ষমতা, এই সময়ে শরীরের তাপমাত্রাও একটু বেশি থাকে। সন্ধে ৬টার পর থেকে শুরু হয় মানুষের মস্তিষ্কে অবস্থিত বিশেষ স্থান পিনিয়াল বডি থেকে আলোক সক্রিয় মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরন। এই হরমোন আপনার ঘুমানো আর জেগে ওঠা নিয়ন্ত্রণ করে। রাত ১২টার পর আসে গভীর ঘুম। সকাল ৬টার পর অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চল থেকে নিঃসৃত হয় কোর্টিসল, আবার সচল হয়ে ‌যায় শরীর। এই সব বিভিন্ন হরমোনের সাহা‌য্যেই।
বিজ্ঞানী জেফ্রি সি হল, মাইকেল রসবাস ও মাইকেল ইয়ং এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁদের রিসার্চে উঠে এসেছে এই সারকাডিয়ান রিদম নামক দেহ ঘড়ির চালিকাশক্তি আর তার পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করার তথ্য।
আশির দশক থেকে ফ্রুট ফ্লাই বা “ড্রসোফিলা ” নামক একধরণের মাছির ওপর গবেষণা শুরু করেন এই তিনজন। আবিষ্কার করেন একধরনের ‘পিরিয়ড’ জিন দেখা গেছে। এই জিন রাতের বেলায় দেহ কোষে একপ্রকার প্রোটিন তৈরি করে। দিনের শুরু থেকেই ভাঙতে শুরু করে সেই প্রোটিন। এই দৃষ্টান্তমুলক আবিষ্কার সারকাডিয়ান রিদমের ‌আনবিক ক্রিয়াকে বুঝতে সাহা‌য্য করেছে। ‌এই তিন বিজ্ঞানী 2017 সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান ।যদি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই দেহ ঘড়ি ঠিকঠাক না চলে তাহলেই মানুষের শরীরবৃত্তিয় ক্রিয়াকলাপ, খাওয়া-ঘুম থেকে আচার আচরণ সব পাল্টে ‌যাবে।