ক্লিন ফুয়েল হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের সম্ভাবনা কেমন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
432 বার দেখা হয়েছে
"পরিবেশ" বিভাগে করেছেন (7,560 পয়েন্ট)

1 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (7,560 পয়েন্ট)

খালিফ বিন ওয়ালিদ: জলবায়ুর পরিবর্তন- বর্তমান সময়ের ভয়ঙ্কর বিপদ সমূহের মাঝে অন্যতম। যারা বিজ্ঞান আর পরিবেশ নিয়ে সচেতন, তারা জানেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমরা ভবিষ্যতে কত বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি! জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গত কার্বন কণা আমাদের সুন্দর গ্রহটিকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।

আসন্ন সময়ে তাই প্রয়োজন অধিক হারে "ক্লিন ফুয়েল"(Clean fuel) এর ব্যবহার। ক্লিন ফুয়েল হলো এমন একপ্রকার জ্বালানি- যা থেকে কোনো রকম কার্বন নিঃসরণ হবেনা অথবা হলেও তা সহনীয় মাত্রায় হবে। ক্লিন ফুয়েল হিসেবে হাইড্রোজেন ভালো বিকল্প জ্বালানি হওয়ায় বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি এখন হাইড্রোজেন এর দিকেই।  

হাইড্রোজেন কি আসলেই বিকল্প জ্বালানি "ক্লিন ফুয়েল" হিসেবে ব্যবহার করা যাবে? যদি তা করা যায়, তাহলে কিভাবে? চলুন এই নিয়ে আজকে আলোচনা করবো। 

জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহারে পরিবেশে জলীয় বাষ্প এবং সামান্য কিছু উৎপাদ নির্গত হয়, যা কার্বন কণার পরিমাণ আর ক্ষতিকর প্রভাবের তুলনায় খুবই নগন্য। আমরা পরিবেশে যত মাথাপিছু কার্বন কণা নিঃসরণ কমাতে পারবো, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা তত সহজতর হবে । তাই, হাইড্রোজেন হতে পারে ভবিষ্যৎ এর সম্ভাবনাময় বিকল্প জ্বালানি!

কিন্তু, কিছু বিষয় নিয়ে ভেবে নিতে হয়। বর্তমানে, শিল্পক্ষেত্রে হাইড্রোজেন গ্যাস এর বেশিরভাগ ব্যবহার করা হচ্ছে তেল পরিশোধন এবং রাসায়নিক সার তৈরিতে। এক গবেষণার তথ্য মতে, ১৯৭৫ সালের পর থেকে শিল্প  কারখানায় হাইড্রোজেন এর ব্যবহার পূর্বের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।আর, এই হাইড্রোজেন এর প্রায় পুরোটাই যোগান দেওয়া হয় জীবাশ্ম জ্বালানি/ফসিল ফুয়েল থেকে। হাইড্রোজেন কে যদি প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রস্তুত করা হয়, তাহলে একে "গ্রে হাইড্রোজেন" বলে এবং যদি কয়লা থেকে প্রস্তুত করা হয়, তাহলে  "ব্রাউন" বা "ব্ল্যাক হাইড্রোজেন" বলে। গ্রে এবং ব্রাউন/ব্ল্যাক হাইড্রোজেন তৈরি করতে  প্রতিবছর ৮৩০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে নির্গত হচ্ছে- যা মোট নির্গত গ্রিন হাউজ গ্যাস এর 3 শতাংশ।

অর্থাৎ, গ্রে এবং ব্ল্যাক হাইড্রোজেন তৈরি করতে আমাদের ঘুরেফিরে জীবাশ্ম জ্বালানির উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। তাই, বর্তমান প্রস্তুত প্রণালী অনুযায়ী, তেল/কয়লা/গ্যাস এর বদলে হাইড্রোজেন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে খুব একটা যে পরিবেশ এর উপকার হবে তেমনটা বলা সম্ভবপর নয়।

তবে কি আসলেই হাইড্রোজেন ব্যবহার করে কোনো উপকার হবেনা? ব্যাপারটা ঠিক তেমনও না।

আশার কথা হলো, বর্তমানে জাপান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশগুলো অনেক বেশি পরিমাণে অর্থ আর শ্রম বিনিয়োগ করছে "ব্লু হাইড্রোজেন" প্রযুক্তির বাস্তবায়ন করার জন্য, যা বাস্তবায়িত হলে হাইড্রোজেন প্রস্তুত করতে কার্বন নিঃসরণ এর পরিমাণ বহুলাংশে কম হবে। 

হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে-এমন নতুন প্রযুক্তি আর যানবাহন প্রস্তুত করা হচ্ছে।

বর্তমানে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে  চলতে পারে,  এমন গাড়ি বাজারে রয়েছে। যেমন: টয়োটা মিরাই এবং হুন্ডাই আই এক্স 35। কিন্তু এই গাড়ি গুলো পেট্রোল-কার এর তুলনায় দামি এবং এদের ফিলিং স্টেশন সংখ্যায় অনেক কম (পুরো দুনিয়ায় মাত্র ৫৫০টি) হওয়ায় এখনো হাইড্রোজেন চালিত গাড়ি তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। আবার, এই ৫৫০টি ফিলিং স্টেশন এর মাঝে প্রায় অর্ধেকই জাপান এবং জার্মানি তে অবস্থিত। তবে, আরো হাইড্রোজেন ফিলিং স্টেশন তৈরি করা আর হাইড্রোজেন গ্যাস এর উপযোগী প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির উদ্ভাবন আর গবেষণা আশানুরূপ হারে অব্যাহত রয়েছে। 

এভিয়েশন ক্ষেত্রেও হাইড্রোজেন ফুয়েল ব্যবহার এর দিকে আগ্রহী উন্নত দেশ গুলো। বর্তমানে SAF(Sustainable Aviation Fuel) নামক একটি জ্বালানি  আবিষ্কৃত হয়েছে,  যা কার্বন এবং হাইড্রোজেন মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়েছে। এটি বিমানের ইঞ্জিনে সরাসরি কোনো পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহার করা যায়।

জ্বালানি খাতে হাইড্রোজেন ব্যবহার অধিকহারে করতে পারলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকানো সম্ভব হবে। মূলত পুরো পৃথীবীরই চেহারা পালটে যাবে।কেননা, বর্তমানে আমাদের যত "ক্লিন এনার্জি" উৎস আছে, তার প্রায় সবগুলোই হচ্ছে বিদ্যুত ভিত্তিক। উদাহরণস্বরূপ, সাহারা মরুভূমিতে তৈরি বিদ্যুত যদি বাংলাদেশে পরিবহন করা হয়, তাহলে সে পদ্ধতি অনেক খরচ সাপেক্ষ হবে আর সিস্টেম লসও অনেক বেশি হবে। সেই জায়গায় আমরা যদি হাইড্রোজেন ব্যবহার করে বিদ্যুত/ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি করি তাহলে অল্প সময়ে আর কম অপচয় করে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে অথবা, গ্যাস হিসেবে প্রস্তুত করে প্রয়োজন অনুযায়ী তরল হাইড্রোজেন পাঠানো যাবে দূর-দূরান্তে, জ্বালানি হিসেবে এবং শক্তি উৎপাদনের জন্যে।

তাই বলাই যায়, উপযুক্ত আর পরিবেশ বান্ধব উপায়ে হাইড্রোজেন জ্বালানি প্রস্তুতকরণ আর ব্যবহার করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জ্বালানি ক্ষেত্রে এবং পরিবেশের দূষণ রোধে অভাবনীয় বিপ্লব সাধিত হতে পারে!

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
2 টি উত্তর 349 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 566 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 235 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 299 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 204 বার দেখা হয়েছে

10,826 টি প্রশ্ন

18,535 টি উত্তর

4,745 টি মন্তব্য

841,219 জন সদস্য

77 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 76 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. mehrob.durjoy

    140 পয়েন্ট

  2. Curious

    140 পয়েন্ট

  3. Shihabuddin

    130 পয়েন্ট

  4. Muntasir Imteaz

    110 পয়েন্ট

  5. Shoumik

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল #science কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন গাছ মনোবিজ্ঞান খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার দুধ উপায় হাত শব্দ মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য বাচ্চা হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...