১৯৬০ এর দিকে মার্কিন সেনাবাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি বা আরপা (ARPA) পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট (ARPANET) নামে পরিচিত ছিল। এটাই হলো ইন্টারনেট এর জন্মের ইতিহাস। এরপর ১৯৮৯ সালের দিকে এই আরপানেটকে ইন্টারনেট নামে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৯০ সালের দিকের এই ইন্টারনেটকে web 1.0 বলা হতো। ইন্টারনেট এর একদম আদিম ভার্সিন। তখন আমরা ইন্টারনেট বলতে বুঝতাম শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে কোন একটি আর্টিকেল পড়ে আবার চলে আসা। শেষ! তখনকার ইন্টারনেট বলতে এটাই ছিলো শুধু। ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন এর মতো। আমরা আর্টিকেল নিউজ এসব পড়তে তো পাড়তাম কিন্ত এসবের সাথে ইন্টার্যাক্ট করতে পারতাম না। এই আর্টিকেল পড়ে আমাদের অনুভূতি কী আমারে মন্তব্য কী এসব আমরা জানাতে পারতাম না। এই সমস্যাও বেশিদিন থাকেনি। এরপরে চলে আসলো web 2.0 এইসকল সমস্যার সমাধান নিয়ে। স্টাটিক ওয়েবসাইট এর যুগ শেষ হয়ে ডাইনামিক ওয়েবসাইট আসলো।এরপর আমরা ইন্টারনেট এর সাথে ইন্টার্যাক্ট করতে শুরু করলাম। সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সব যায়গায় নিজের অনুভূতি, মন্তব্য, বক্তব্য সবকিছু প্রকাশ করার সুযোগ পেলাম। ইন্টারনেট এর রিয়েল লাইফ প্রয়োগ শুরু হলো। পুরো বিশ্বে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়লো ইন্টারনেট। আর এখনো আমরা সেই ইন্টারনেট ই ব্যবহার করছি। আমরা হয়তো প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক ভালো অবস্থানে আছি কিন্ত ঝামেলা আছে। আপাতদৃষ্টিতে এসব ঝামেলা আমরা দেখিনা কিন্ত আমাদের এই web 2.0 কিন্ত বিশাল বিশাল ঝামেলা আছে। এবার জিজ্ঞেস করবেন কিসব ঝামেলা? বলছি
ওয়েব 2.0 একটা সেন্ট্রালাইজড ইন্টারনেট। ইন্টারনেট এর পুরো কতৃত্ব একটা নির্দিষ্ট যায়গা ডিভাইস আর মানুষের কাছে থাকে। ফেসবুকের কথাই ধরুন। আমাদের যত ইনফরমেশন আছে সবকিছু কিন্ত ফেসবুক সার্ভারে সেইভ করা থাকে। তো কেউ যদি ফেইসবুকের সার্ভার হ্যাক করতে পারে ফলাফল কী হবে? আমাদের সব ডেটা হ্যাকারের হাতে।কিংবা ভাবুন ফেসবুকের সার্ভার অফ হয়ে গেলো। কি হবে? পুরো দুনিয়ায় ফেসবুক বন্ধ! এবার দেখুন ফেসবুকের সেন্ট্রাল অফ পাওয়ার এ কে আছে? গুটিকয়েক মানুষ। তারা চাইলেই আমাদের এসব ইনফরমেশন এর সাথে যা ইচ্ছে করতে পারে। আমরা পরোক্ষ ভাবে হলেও সেসব গুটিকয়েক মানুষের উপর নির্ভর কিংবা গুটিকয়েক মানুষের কাছে জিম্মি বললেও ভুল হবে না। ধরুন আপনি একটা ছবি আপ্লোড করলেন ফেসবুকে। আপনার কি মনে হয় আপনি একাই মালিক ছবিটার? ফেসবুক ও কিন্ত একই সাথে ছবিটার মালিক। তারা চাইলেই আপনার ছবি ফেসবুক থেকে মুছে দিতে কিংবা সীমিত করে দিতে পারে এমন কী অন্য কারো কাছে বিক্রি বা অন্য কাজে ব্যবহার যা ইচ্ছে করতে পারে। আপনার কিছুই করার নেই। আর ফেসবুকের নামে বদনাম একই সাথে যথেষ্ট প্রমাণ ও আছে ফেসবুক আমাদের ইনফরমেশন নিয়ে ব্যবসা করে। কিন্ত দেখুন আমাদের কিন্তু কিছুই করার নেই। তো ভেবে দেখুন web 2.0 তে আমরা গুটি কয়েক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে আছি, নিজেদের কন্টেন্ট এর মালিক ও নিজেরা না, নিজেদের ইনফরমেশন সেইভ না কত কত প্রব্লেম।
আমাদের ইনফরমেশন এর সিকিউরিটি, কন্টেন্ট এর সিকিউরিটি, কারো কাছে জিম্মি হয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা এসব সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে web 3.0 বা ডিসেন্ট্রালাইজড ইন্টারনেট।
ওয়েবের এই ৩য় ভার্সনের ব্যাপারটা একটু কঠিন হবে বুঝতে একই সাথে সময়সাপেক্ষ ও বটে। তবে web 3.0 এর একদম মূল ভিত্তির কথা যদি বলতে যাই, ওয়েব 3.0 এর মূল ভিত্তি হলো ব্লকচেইন টেকনোলজি। ব্লক চেইন টেকনোলজি বুঝতে হলে এখন আপনাদের সিনক্রোনাইজ, কনসেনসেস মেকানিজম, প্রুফ অফ ওয়ার্ক, পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক, শেয়ারড লেজার/ ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার, ক্রিপ্টোগ্রাফি, হ্যাসিং সহ আরো বহু কনসেপ্ট বুঝানো লাগবে। আর অবশ্যই বুঝতে পারছেন এই একটা উত্তরে এত কিছু বুঝানো সম্ভব না।
ব্লকচেইন কীভাবে আমাদের এসব সমস্যার সমাধান করে এসব নিয়ে আলোচনা করবো। তবে শেষে যদি বলতে চাই web 3.0 কেন প্রয়োজন বা কেন এসেছে? উত্তর হলো সময়ের প্রয়োজনে এসেছে। যুগ যত এগোচ্ছে সময় যত যাচ্ছে আমাদের ইনফরমেশন এর সিকিউরিটি,ইন্টারনেট ব্যবহার এর স্বাধীনতা, মালিকানা নিশ্চিত করা এসব বিষয় নিয়ে ততই উদ্বেগ বাড়ছে। আর web 2.0 আমাদের এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারছে না এজন্যই web 3.0 এর প্রয়োজনীয়তা পড়েছে। আমাদের ইনফরমেশন এর সিকিউরিটি, কন্টেন্ট এর সিকিউরিটি, কারো কাছে জিম্মি হয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা এসব সমস্যার সমাধান খুব ভালোভাবে দিতে পারবে web 3.0 যদিও ওয়েবের ৩য় এই ভার্সনের এই কনসেপ্ট এখনো খুবই নতুন। তবুও বিশেষজ্ঞ দের ধারণা এটাই হলো ইন্টারনেট এর ভবিষ্যৎ।
-শাওন সিকদার
সি,এস,ই ।সোনারগাও বিশ্ববিদ্যালয়