‘স্ট্রিং থিওরী’ পদার্থবিদ্যার অন্তর্গত একটি বিরাটমাপের বিষয় যা চেষ্টা করে পদার্থবিদ্যার যে পরম লক্ষ্য- একটি সর্ববিষয়ক তত্ত্ব অর্থাৎ Theory of Everything এর সন্ধান- সেইরূপ একটি তত্ত্ব হয়ে ওঠার জন্য।
সর্ববিষয়ক তত্ত্ব কী?
পদার্থবিদ্যার আদিযুগ থেকেই তার লক্ষ্য/প্রণালী ছিল আপাত ভিন্ন ঘটনাবলীকে একই নিয়ম দ্বারা সংযুক্ত করে এবং প্রকৃতির ক্রমশ বৃহত্তর অংশ বর্ণনার ক্ষমতাযুক্ত তত্ত্ব গঠন করে অর্থাৎ যথাক্রমে একীভূতকরণ (Unification) ও সাধারণীকরণ (Generalization)-এর মাধ্যমে প্রকৃতির বর্ণনায় যথাসম্ভব বেশী সারল্য নিয়ে আসা এবং শেষপর্যন্ত একটিমাত্র তত্ত্বে পৌঁছানো যা সমগ্র প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করবে (Theory of Everything)।
এই পদ্ধতির প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ স্যার আইজ্যাক নিউটনের ‘মহাকর্ষ তত্ত্ব’ আবিষ্কার। তিনি বুঝতে সমর্থ হন যে গাছ থেকে আপেল পড়া আর সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর পরিক্রমণ (বা পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের পরিক্রমণ বা সেইরূপ সকলকিছু) একই বলের প্রভাবে ঘটে- মহাকর্ষ। অর্থাৎ, পূর্বে অনুমিত পার্থিব ঘটনা ও স্বর্গীয় ঘটনার মধ্যে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মেলবন্ধন করেন। তাঁর মহাকর্ষ সূত্র ও গতিসূত্রের দ্বারা তিনি পদার্থবিদ্যার যে শাখা গড়ে তোলেন তাকে ‘নিউটনীয় বলবিদ্যা’ (Newtonian Mechanics) বলে।
এর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একীভূতকরণ হল জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল-এর ‘তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রতত্ত্ব’ (Electromagnetic field Theory) যা পূর্ব অনুমিত আপাত ভিন্ন ঘটনাদ্বয় ‘তড়িৎ’ ও ‘চুম্বক’ বলকে একীভূত করে দেখান যে উভয়ই হল একটিমাত্র বলের দুই প্রকাশঃ তড়িৎচুম্বকীয় বল।
এরপর দেখা যায়, নিউটনীয় বলবিদ্যা ও তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের মধ্যে অমিল। একে-অপরের সাথে বনিবনা নেই দুই তত্ত্বের নিয়মের। এদের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটান আইনস্টাইন তাঁর ‘বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব’ (Special Theory of Relativity)-এর সাহায্যে।
অন্যদিকে নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রযোজ্য হত শুধুমাত্র কম ভরের স্থির বা ধীরগতির বস্তুর ক্ষেত্রে। যেকোন ভরের ও যেকোনো গতির বস্তুর জন্য মহাকর্ষ তত্ত্বের সাধারণীকরণ ও আগে সৃষ্ট ‘বিশেষ আপেক্ষিকতা’-র সাথে মেলবন্ধন ঘটান আইনস্টাইন ‘সাধারণ আপেক্ষিকতা’ তত্ত্বে (General Theory of Relativity)।
আবার অন্য আরেকদিক থেকে নিউটনীয় বলবিদ্যার সীমাবদ্ধতা জানা যায়। দেখা যায় এটি অতিক্ষুদ্র (পারমাণবিক জগতের) বস্তুদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। তার জন্য সম্পূর্ণ নতুন বলবিদ্যা সৃষ্টি করতে হয় যার নাম ‘কোয়ান্টাম বলবিদ্যা’। দেখা যায় এই নতুন বলবিদ্যা থেকে নিউটনীয় বলবিদ্যা পাওয়া যায় বড় বস্তুদের জন্য প্রয়োগ করলে (এবং তা হতেই হবে) অর্থাৎ সাধারণ আপেক্ষিকতার মত কোয়ান্টাম বলবিদ্যাও নিউটনীয় বলবিদ্যার একটি সাধারণীকরণ।
এরপর কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সাথে বিশেষ আপেক্ষিকতার একীকরণ হয়। নাম- আপেক্ষকীয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা (Relativistic Quantum Mechanics)
এরপর তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রতত্ত্বের জন্য আপেক্ষকীয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা তৈরি হয়। এর নাম ‘কোয়ান্টাম তড়িৎগতিবিদ্যা’ (Quantum Electrodynamics)। এটি একটি ‘কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব’ (Quantum Field Theory) অর্থাৎ সনাতন ক্ষেত্রতত্ত্বের সাথে আপেক্ষকীয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মেলবন্ধন।
অন্যদিকে দিনে দিনে প্রচুর মূলগত কণা আবিষ্কার হচ্ছিল। মহাকর্ষ আর তড়িৎচুম্বকীয় বল ছাড়াও আরও দুটি বলও আবিষ্কার হয়ঃ সবল বল (Strong force) ও দুর্বল বল (Weak Force)। বিভিন্ন কণাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল এইসব বিভিন্ন বলের জন্য নানারকম কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব তৈরি হয়। যেমন-
সবল বলের জন্য ‘কোয়ান্টাম ক্রোমোডায়নামিক্স’
দুর্বল বলের জন্য ‘কোয়ান্টাম ফ্লেভারডায়নামিক্স’
ইত্যাদি।
এই সকল কণা ও বলসমূহের জন্য এরপর একটি সাজানো-গোছানো একীভূত মডেল তৈরি হয় যার নাম ‘কণা পদার্থবিদ্যার স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ যার ভিত্তি হল ‘কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব’।
এতে অজস্র কণার পরিবর্তে কেবল ১৮ টি মূলগত কণা থাকে। (যেমন- প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি শুধু কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি)
এছাড়াও ৩ টি বলকে একীভূত করার চেষ্টা চলতে থাকে। প্রথম ধাপটি সম্ভবও হয়ঃ তড়িৎচুম্বকীয় ও দুর্বল বলকে একীভূত করে যে বল সৃষ্টি হয় তার নাম ‘ইলেক্ট্রোউইক বল’ (তত্ত্বটির নাম ‘ইলেক্ট্রোউইক তত্ত্ব’)। ইলেক্ট্রোউইক বলের সাথে সবল বলকে মিলিয়ে দেওয়ার কাজেও অগ্রগতি ঘটে। এই তত্ত্বকে বলা হয় ‘মহান একীভূত তত্ত্ব’ (Grand Unified Theory)।
কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড মডেলে মহাকর্ষ অনুপস্থিত কারণ মহাকর্ষের একটি কোয়ান্টাম তত্ত্ব (Quantum Gravity) এখনও পাওয়া যায়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই এরপরের ধাপঃ সাধারণ আপেক্ষিকতার সাধারণীকরণ ঘটিয়ে একটি ‘কোয়ান্টাম মহাকর্ষ’ তত্ত্ব সৃষ্টি এবং মহান একীভূত তত্ত্বের সাথে সেই মহাকর্ষের তত্ত্বের মেলবন্ধনের মাধ্যমে শেষমেশ বিজ্ঞানীদের স্বপ্নের ‘সর্ববিষয়ক তত্ত্ব’ বা ‘Theory of Everything’-এ পৌঁছানো।
প্রথম আশা জাগানো চেষ্টাঃ
অতিপ্রতিসাম্য (Supersymmetry) ও অতিমহাকর্ষ (Supergravity):
স্ট্যান্ডার্ড মডেলের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হিসেবে তৈরি হয় এই ‘সুপারসিমেট্রি’-র ধারণা। সুপারসিমেট্রিকে স্ট্যান্ডার্ড মডেলে যুক্ত করলে আপনা থেকেই মহাকর্ষের জন্য দায়ী একটি কণাও পাওয়া যায়। এভাবে সুপারসিমেট্রিক স্ট্যান্ডার্ড মডেল ও সাধারণ আপেক্ষিকতার যোগসাধন হয় একটি ‘কোয়ান্টাম মহাকর্ষ তত্ত্ব’-পাওয়া যায়। একে বলে ‘সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্ব’।
বাড়তি মাত্রা (Extra dimensions): এই তত্ত্বটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এটি আমাদের পরিচিত ৪ মাত্রার স্থানকালে প্রযোজ্য নয় বরং ১১ মাত্রায় প্রযোজ্য এবং ১১ মাত্রায় সবচেয়ে সুন্দর। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বের প্রতি উৎসাহী হয়ে ওঠেন; মনে করা হয় ১১ টি মাত্রার ৭ টিকে গাণিতিকভাবে গুটিয়ে (Compactification) দিতে পারলে ৪ মাত্রার কোয়ান্টাম মহাকর্ষ তত্ত্ব তৈরি হয়ে যাবে।
Compactification: এটি বিশেষ গাণিতিক পদ্ধতি যাতে একটি/একাধিক মাত্রাকে গুটিয়ে ছোট করে দেওয়া যায়। এটা অনেকটা অনেক দূর থেকে দেখা একটি পাইপের মত যাকে দূর থেকে একমাত্রিক মনে হয় কিন্তু কাছে এলে বোঝা যায় তার বক্র ও ছোট আরেকটি মাত্রা আছে। তেমনই মনে করা হয় সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্বের ১১ টি মাত্রার মধ্যে ৪ টি বড় মাত্রা যা আমরা দেখতে পাই ও ৭ টি মাত্রা গুটিয়ে অতিক্ষুদ্র হয়ে গেছে বলে আমরা দেখতে পাই না।
তবে কিছুদিনের মধ্যে দেখা যায় সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্বে নানারকম সমস্যা আছে (যেমন- পদার্থবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ‘Chirality’ এই তত্ত্ব মান্য করে না)। এর ফলে সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্বের প্রতি বিজ্ঞানীদের আগ্রহ কমে যায়।
স্ট্রিং তত্ত্বঃ
প্রথমে নিউক্লীয় পদার্থবিদ্যার সবল বলের ব্যাখ্যা হিসেবে এই তত্ত্ব এলেও পরে তা বাতিল হয়ে ‘কোয়ান্টাম ক্রোমোডায়নামিক্স’ সবল বলের পদার্থবিদ্যার জন্য বেশী ভালো তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু দেখা যায়, স্ট্রিং তত্ত্ব ফেলনা নয়- এর মধ্যে এমন অনেক বৈশিষ্ট্য আছে (যার জন্য সবল বলের পদার্থবিদ্যা হিসেবে স্বীকৃত হয়নি) যেগুলি বৃহত্তর লক্ষ্যে কাজে লাগানো যায়। অচিরেই দেখা যায় এই তত্ত্ব অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী একটি তত্ত্ব যা ওপরের চিত্রের প্রশ্নচিহ্নের উত্তর হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে।
আমি অতি-সংক্ষেপে এই বিরাট তত্ত্বের উপাদান ও বিষয়গুলি সম্পর্কে লিখতে চেষ্টা করব।
স্ট্রিংঃ
স্ট্রিংতত্ত্ব সম্পূর্ণ নতুন একটি দৃষ্টিভঙ্গী থেকে কণা পদার্থবিদ্যাকে দেখতে শুরু করে। স্ট্রিংতত্ত্বের মূল উপাদান হল শক্তির অতিক্ষুদ্র কম্পনরত সুতোর মত পদার্থ যাকে বলা হয় ‘স্ট্রিং’। কণা পদার্থবিদ্যার কণাগুলিকে মাত্রাহীন বিন্দুকণা (Point particle) মনে করা হয়। কিন্তু স্ট্রিং তত্ত্বে মূলগত কণাগুলিকে একমাত্রিক স্ট্রিং দিয়ে প্রকাশ করা হয় (যারা বিন্দুবত নয়- দৈর্ঘ্য আছে)। মনে করা হয় নানারূপ কণার পরিবর্তে প্রকৃতিতে আছে কেবল এইরূপ দুইরকম স্ট্রিং (মুক্ত অর্থাৎ একটি রেখার মত এবং বদ্ধ অর্থাৎ একটি ফাঁসের মত)। এই স্ট্রিংগুলির নানারূপ কম্পনই ধরা দেয় নানারূপ ও নানা বৈশিষ্ট্যযুক্ত মূলগত কণা হিসেবে। এভাবে স্ট্রিংতত্ত্ব অনেক মূলগত কণাকে শুধুমাত্র স্ট্রিং দিয়ে একীভূত করে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, স্ট্রিং তত্ত্ব আপনা থেকেই মহাকর্ষের জন্যও একটি কণার অস্তিত্ব ঘোষণা করে অর্থাৎ এটি স্বাভাবিকভাবেই মহাকর্ষের একটি কোয়ান্টাম তত্ত্ব অর্থাৎ ‘কোয়ান্টাম মহাকর্ষ তত্ত্ব’।
সুপারস্ট্রিং তত্ত্বঃ
শুরুতে স্ট্রিং তত্ত্বের রূপটি সীমিত ছিল স্ট্যান্ডার্ড মডেলের শুধুমাত্র শক্তিকণা (Boson) দের জন্য। একে ‘বোসনিক স্ট্রিং তত্ত্ব’ (Bosonic String theory) বলা হত (যা প্রযোজ্য স্থানকালের ২৬ মাত্রায়)। পরে এর সাথে ‘অতিপ্রতিসাম্য’ (Supersymmetry) যুক্ত করে ‘সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব’ (‘Superstring theory) গড়ে তোলা হয় যা শক্তিকণা ও পদার্থকণা (Fermions)-উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয় (এবং ২৬ এর পরিবর্তে স্থানকালের ১০ মাত্রায় প্রযোজ্য)। সুপারস্ট্রিং তত্ত্বে সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্বের সমস্যাগুলি নেই (যেমন এটি Chirality মান্য করে)। ফলে বহু পদার্থবিদ ‘কোয়ান্টাম মহাকর্ষ’ তৈরির আশায় স্ট্রিং তত্ত্বে আগ্রহী হয়ে পড়েন।
সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব অনুযায়ী স্থানকাল ১০ মাত্রিক যার ৪ টি বৃহৎ মাত্রা ও ৬ টি গোটানো বা কুঞ্চিত মাত্রা। এরকম স্থানকালের উদাহরণ হলঃ কালাবি-ইয়াউ আকৃতি। সুপারস্ট্রিংগুলি এইরূপ স্থানকালে কাঁপতে থাকে ও তারফলে উৎপন্ন নানারূপ কম্পন নানারূপ কণা হিসেবে প্রকাশিত হয়।
M-তত্ত্বঃ
তবে সুপারস্ট্রিং তত্ত্বে একটা বড় সমস্যা দেখা দেয়। দেখা যায় সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব হতে পারে ৫ রকমেরঃ
Type I
Type IIA
Type IIB
SO(32) Heterotic
E8xE8 Heterotic
যে ‘একটিমাত্র সর্ববিষয়ক তত্ত্ব’-এর জন্য এত খোঁজ, তার কিনা নিজেরই ৫ রকম ধরণ! এ কেমন একীভবন?
ওদিকে সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্বও কিন্তু মৃত হয়নি। কিছু বিজ্ঞানী দেখাতে সমর্থ হন, ১০ মাত্রিক সুপারস্ট্রিং তত্ত্বে যেমন একমাত্রার বস্তুর (স্ট্রিং) উপস্থিতি আছে, ১১ মাত্রিক সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্বে আছে দুইমাত্রার বস্তুর উপস্থিতি। তাঁরা এর নাম দেন ব্রেন বা স্তর (Membrane বা সংক্ষেপে Brane)। তাঁরা দেখান যে এই সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্বের ১১ টি মাত্রার একটিকে বিশেষ ভাবে গোটালে (Compactification) ব্রেনগুলি তাতে ১০ মাত্রার সুপারস্ট্রিং তত্ত্বের Type IIA-র স্ট্রিং এর মত দেখায়।
আবার, বিভিন্ন ধরণের সুপারস্ট্রিং তত্ত্বগুলির নিজেদের মধ্যে কতগুলি অপ্রত্যাশিত দ্বৈততা (Duality)-র সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। এগুলি একটি ধরণের সাথে অন্য একটি ধরণকে যুক্ত করে।
এরপর এটাও জানা যায় যে সুপারস্ট্রিং তত্ত্বের বিশেষ ধরণের কিছু স্ট্রিং ৫ মাত্রার ব্রেনের মত আচরণ করে।
সুপারস্ট্রিং তত্ত্বের একধরণের ব্রেন (D-ব্রেন)
এই সংযোগগুলি দেখে বোঝা যায় ৫ টি সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব ও সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্ব আসলে একটিমাত্র বৃহত্তর তত্ত্বের নানারূপ প্রকাশ। এই সম্পূর্ণ একীভূত মহাতত্ত্বকে বলে ‘M-তত্ত্ব’। এটি ১১ মাত্রিক তত্ত্ব (যার ৪ টি বৃহৎ মাত্রা ও ৭ টি গোটানো বা কুঞ্চিত মাত্রা) যাতে আছে স্ট্রিং ছাড়াও ২ ও ৫ মাত্রার ব্রেন।
এটা অনেকটা জিগস পাজলগুলির মত যাতে টুকরোগুলি সাজিয়ে সম্পূর্ণ চিত্রটি গড়ে তুলতে হয়। এম-তত্ত্বের ক্ষেত্রে সুপারস্ট্রিং ও সুপারগ্র্যাভিটি তত্ত্বগুলি হল চারদিকটা। এটুকু বোঝা গেছে যে সেটা একটা সম্পূর্ণ চিত্রের অংশ। কিন্তু মধ্যবর্তী অংশটি এখনও অস্পষ্ট যাতে সম্পূর্ণ চিত্রটি ফুটে ওঠে। এই এম-তত্ত্বই হল স্ট্রিং তত্ত্বের সর্ববৃহৎ সাধারণীকৃত রূপ এবং স্ট্রিং তাত্ত্বিকদের মতে ‘Theory of Everything’ হয়ে ওঠার মত সব উপাদানই এতে আছে।
এম-তত্ত্বের খোঁজঃ
এম-তত্ত্বের অন্তর্বর্তী গঠন খোঁজার জন্য একটি পদ্ধতি হল BFSS ম্যাট্রিক্স মডেল। এই মডেলটিকে এম-তত্ত্ব তৈরির জন্য একটি প্রোটোটাইপ মনে করা হয়।
AdS/CFT Correspondence:
স্ট্রিংতত্ত্বের দুরূহ গণিতের কারণে স্ট্রিংতত্ত্বের অনেক বিষয় বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু AdS/CFT correspondence ব্যবহার করে একটি স্ট্রিং তত্ত্বকে একটি কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্বে পরিণত করা যায় যেগুলি অনেকটা বেশী ভালো করে বোঝা গেছে। ফলে স্ট্রিংতত্ত্বের আলোচনা অনেকটা সুবিধেজনক হয়। এই পদ্ধতি পদার্থবিদ্যার নানাক্ষেত্রের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
স্ট্রিংতত্ত্ব বা বৃহত্তর এম-তত্ত্ব বহুরকম ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় পদার্থবিদ্যার এখনও সমাধান না হওয়া প্রশ্নগুলি সমাধানের চেষ্টায়। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল- বিশ্বতত্ত্ব (Cosmology)
ব্রেন বিশ্বতত্ত্ব (Brane Cosmology):
এতে স্ট্রিংতত্ত্বের সাহায্যে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও গঠন বর্ণনা করার চেষ্টা হয়। এর মধ্যেকার কিছু বিশেষ ধারণা হলঃ
বহু-মহাবিশ্বঃ স্ট্রিং থিওরী ল্যান্ডস্কেপ (String theory landscape) তত্ত্ব বলে আমাদের মহাবিশ্বই একমাত্র নয়, আরও অকল্পনীয় বিরাট সংখ্যক মহাবিশ্ব থাকা উচিত। এর কোনটা সম্পূর্ণ অন্যরকম, কোনটা প্রায় একই, কোনটায় প্রাণ নেই, কোনটায় আছে, কোনটায় আমরা পর্যন্ত আছি সামান্য কিছু তফাৎসহ (যেমন হয়ত সেখানে আমি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার বা পৃথিবীর একটি বলয় আছে!) এমনকি সম্পূর্ণ একই একটি মহাবিশ্ব থাকাও আশ্চর্য নয়! একে বলে বহু-মহাবিশ্ব (Multiverse)।