ছবিটিতে বলা হয়েছে না পড়তে, তবে ইতিমধ্যে আপনি হয়ত পড়ার চেষ্টা করছেন বা পড়ে ফেলেছেন। কি ঠিক বলেছি ??
এরকম আমরা হরহামেশা বিভিন্ন সাইনবোর্ড দেখি, এই যেমন ধরুনঃ-
এখানে গাড়ি পার্কিং নিষেধ।
- তবুও দেখবেন ঐ স্থানেই গাড়ি পার্কিং করে রেখে দিয়েছে সমাজের কিছু মানুষ।
এরকম যতই লেখা থাকুক না কেন আমাদের কৌতূহল মন চায় যেন, সেই কাজটাই বেশি করি যেটাতে নিষেধ আছে। আমাদের এরকম মনোবৃত্তির নামই "Reverse Psychology".।
"Reverse psychology is a technique involving the assertion of a believe or behavior that is opposite to the one desired, with the expectation that is approach will encourage the subject of the persuasion to do what actually is desired."
রিভার্স সাইকোলজি হলো মনের সেই সাময়িক অবস্থা বা কৌশল যখন আপনি কাউকে এমন কিছু করতে বলেন, যা আপনি কখনই চান না সে করুক, বা এমন কিছু না করতে বলা, যা আপনি চান সে অবশ্যই করুক, অর্থাৎ আপনি চাচ্ছেন একটি কিন্তু ভান করছেন তার উল্টো টা।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখবেন আপনি যে কাজটি করতে নিষেধ করবেন, বাচ্চারা সেই কাজটিই বেশি করে করতে চাইবে। তার ঐ কাজটির প্রতি বেশি আকর্ষণ কাজ করে। রিভার্স সাইকোলজি শুরুটা মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই।
রিভার্স সাইকোলজি অনেক সময় অনেকে ব্যবহার করে থাকে তাদেরকে আমরা বলে থাকি তারা ডাবল ক্রস করছে।
- কাদের উপর "রিভার্স সাইকোলজি" বেশি কাজ করে?
বাচ্চাদের উপর "রিভার্স সাইকোলজি" বেশি কাজ করে। সুতরাং বাচ্চাদের সাথে বুঝে শুনে আচরন করা উচিত বা শিখানো উচিত। তাছাড়া রিভার্স সাইকোলজি বেশি কাজ করে, খুব অল্পতেই রেগে যাওয়া, egoistic, emotional, stubborn, self-centric, confused for taking decision-এভোগা মানুষদের উপর। এবং দৈনন্দিন জীবনে তারা রিভার্স সাইকোলজির ফাঁদে পড়ে বিপদগ্রস্থ হয় প্রায়ই। অন্যদিকে মেন্টালি স্টেবল মানুষদের এ নিয়ে খুব বেশি ভুগতে হয় না রিয়েল লাইফে। তারা হুট করে ডিসিশন নিয়ে নেয় না।
According to Reactance Theory, মানুষ যখন চিন্তা করে তার কোন অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে তখন সে চেষ্টা করে সেটার প্রতিরোধ করতে। এ কারনেই তখন ব্যক্তিকে যা করতে বলা হয় তখন সে সেটা না করে তার বিপরীত কাজটি করে।
মানুষের স্বভাবতই প্রকৃতি হচ্ছে স্বাধীনভাবে যে কোন কাজ করা যখনই তার এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় তখনই তার Subconscious mind (অবচেতন মনে) এর বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করে আর এটাই স্বাভাবিক।
- রিভার্স সাইকোলজির ব্যবহারঃ
রিভার্স সাইকোলজির ব্যবহার অনেক।ছোটবেলায় অনেক শিক্ষক তার ছাত্র/ছাত্রীকে বলত- "তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।তুমি পারবে না। তোমার দ্বারা কাজটি সম্ভব না।" যদি ধরে নিন আপনি সত্যিই কাজটি পারবেন না, তবে আপনি কিন্তু ঠিকই বেস্ট চেষ্টাটাই করবেন যাতে কাজটি করতে পারেন। বিভিন্ন কোম্পানির মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করা হয়।
"বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ”! এরকম লেখা দেখলেই কিন্তু আমাদের ইচ্ছে করে যে, ঢুকেই দেখি না, কী আছে এর ভিতরে?
“বাস থামানো নিষেধ”! দেখবেন ঠিক সেখানেই বাস এসে দাঁড়াবে, অথচ একটু সামনেই হয়ত বাস স্ট্যান্ড।
”ফুল ছেড়া নিষেধ”! দেখা যায় যে , ওখান থেকেই মানুষ ফুল ছিড়বে ।”
সিগারেটের প্যাকেট এর গায়ে লেখা থাকে, "ধূমপান মৃত্যুর কারণ"। তার পরও মানুষ নিষেধ শুনতে চায় না। নিষেধ ভাঙা আমাদের বেশী প্রিয়।
আমাদের সবার সাইকোলজিই এমনই। আমাদেরকে যেই কাজটা করতে নিষেধ করা হবে, সেটা করা লাগবেই। আমাদের এইরকম অদ্ভুত মনোবৃত্তির নামই রিভার্স সাইকোলজি।
১৯৮২ সালে উইলসন আর ল্যাসিস্টার একটা পরীক্ষা করেন। তারা একদল বাচ্চাকে অনেকগুলো খেলনা দেন , এবং তারা বসে বসে তাদের লক্ষ্য করতে লাগলেন। দেখা গেল, সব গুলো খেলনার মধ্যে কিছু খেলনা বাচ্চাদের বেশী পছন্দ হয়েছে , সেগুলা নিয়েই তারা বেশি খেলা করছে । আবার কিছু খেলনা বাচ্চাদের পছন্দ হয় নি। এখন তার মধ্য থেকে উইলসন আর ল্যাসিস্টার একটি খেলনা খুঁজে বের করলেন, যেটা বাচ্চারা কেউ নেয় নি ।
তারপর বাচ্চাদের দুইটা গ্রুপে ভাগ করলেন। একটা গ্রুপকে আগের মতই যেকোন খেলনা নিয়ে খেলার অনুমতি দিলেন। আরেকটা গ্রুপকে বললেন, “তোমরা সব খেলনা নিয়েই খেলতে পার, তবে এই খেলনাটা বাদে।" একটু পর দেখা গেল ২য় গ্রুপের বাচ্চারা সেই খেলনা নিয়েই উঠে পড়ে লেগেছে। তারা আগের চেয়ে ৩ গুণ বেশী সময় নিয়ে সেই খেলনা দিয়ে খেলছে। যেটা তাদের নিষেধ করা হয়েছে তারা সেটাই করছে।
হিউম্যান ব্রেইন চায় স্বাধীনতা। এর মধ্যে যখন হস্তক্ষেপ আসে তখন আমরা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখাই বিদ্রোহ। উপরের কাজগুলোতে খেয়াল করে দেখেন, সবগুলোতেই কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আছে। এই নিষেধাজ্ঞাই মানুষের স্বাধীনভাবে কাজকর্ম করার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই। যেটা করতে মানা করা হচ্ছে তার প্রতি উল্টো আগ্রহী হয়ে উঠি। এটাকে বলা যায় আমাদের ব্রেইন বিদ্রোহী আচরণ (rebellious behavior) করছে।
এই পুরো ব্যাপারটা নির্ভর করে আমরা কিভাবে রিয়েক্ট করছি তার উপর। একে বলে "রিয়্যাকটেন্স থিওরি", এ থিওরি অনুযায়ী, যেসব মানুষ মনে করে যে তাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে বা তাদের নিজস্ব কন্ট্রোল আর থাকছে না, তখন তারা প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তাদের কন্ট্রোল, স্বাধীনতা ফেরত পাওয়ার জন্য বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এবং সেই কাজটাই করে যেটা তাদের করতে মানা করা হয়েছে। কারণ ঐটার প্রতিই তারা তখন আকৃষ্ট হয়। এভাবেই রিভার্স সাইকোলজি আমাদের ব্যক্তিগত কাজে প্রভাব ফেলে।
- রিভার্স সাইকোলজির সুবিধাঃ
রিভার্স সাইকোলজির সুবিধা এটাই যে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত কাজটি খুব সহজেই করিয়ে নিতে পারবেন কোন ব্যক্তির কাছ থেকে যদিও সে পূর্বে এটি করতে চাইত না।
- রিভার্স সাইকোলজির অসুবিধাঃ
অনেকেই হয়ত ভেবে থাকে রিভার্স সাইকোলজিতে এত সুবিধা বা আমিতো অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করে আসছি রিভার্স সাইকোলজি। গবেষনায় দেখা গিয়েছে, "রিভার্স সাইকোলজি" ব্যবহারে অনেক অসুবিধাও আছে। যদি ব্যক্তি বুঝতে পারে আপনার আসল উদ্দেশ্য কি তাহলে ব্যক্তি আপনাকে আর বিশ্বাস করবে না আপনাকে খারাপ ভাবে দেখবে। আপনি হয়ত মানুষটি থেকে দূরে সরে যেতে পারে।
সুত্রঃ কোরা