অভ্যাস ও আসক্তিকে অনেকে গুলিয়ে ফেলেন। দুটো এক নয়। আসক্তির বিষয়টি ভিন্ন। এটি এমন নির্ভরশীলতা তৈরি করে, যা থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও তাঁর অবচেতন মন তাতে বাধা দেয়। মাদকাসক্তির মতোই অন্য যেকোনো আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, মানুষের পুরস্কার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা আচরণ (রিওয়ার্ড মোটিভেটেড বিহেভিয়র) থেকে স্মার্টফোনে আসক্তি হয়ে থাকতে পারে। মানবমস্তিষ্কে ডোপামিন নামক এক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণের কারণে এ ধরনের আচরণ দেখা দেয়। ডোপামিন একধরনের নিউরোট্রান্সমিটার। এটি মানুষের পুরস্কার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অন্য স্তন্যপায়ীদের তুলনায় মানুষে ডোপামিনের মাত্রা বেশি। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়। সেখান থেকেই জন্ম নেয় পুরস্কার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা আচরণ। এই সবকিছুর জন্যই স্মার্টফোন দেখা হয় ঘন ঘন, বাড়ে আসক্তি।
তবে এই ধারণা এখনো সব গবেষণায় সার্বিকভাবে প্রমাণিত হয়নি বলে জানান মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মেখলা সরকার। তিনি বলেন, কিছু কিছু গবেষণায় এটি দেখা গেছে। ইন্টারনেট বা গেম না থাকলেও কোনো মানুষের স্মার্টফোনে আসক্তি দেখা দিচ্ছে কি না, সেটি নিয়ে গবেষণা হলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
দিনে ঠিক কতক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহার করলে, তাকে আসক্তি বলা যাবে, সেটি এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে, গড়ে প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করলে, তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে এটি সর্বজনগ্রাহ্য নয়। গবেষণা জার্নাল প্লস ওয়ানে ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, স্মার্টফোন হাতের নাগালে না থাকলে একজন ব্যবহারকারী কেমন আচরণ করছেন, তা থেকেই বোঝা যাবে স্মার্টফোনে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার বিষয়টি।
মনোরোগবিদ মেখলা সরকার বলছেন, আসক্তির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা দিতে হবে। একজন ব্যক্তি যদি ক্রমাগত স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় বাড়াতে থাকেন এবং স্মার্টফোন ব্যবহার না করলে অস্থিরবোধ করতে থাকেন বা অনিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া দেখান, তখন বলা যাবে যে এটি আসক্তির দিকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ব্যক্তির নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে রেখেও হয়তো তিনি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে থাকবেন এবং তা বোঝার পর চেষ্টা সত্ত্বেও স্মার্টফোন থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না।