থ্যালাসেমিয়া হল উত্তোরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটি জিনগত সমস্যা যার ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি ব্যাহত হয় বা ত্রুটিযুক্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়। বাবা-মা'র থেকে এই রোগ বাচ্চার মধ্যে সঞ্চারিত হয়। হিমোগ্লোবিন হল লোহিত রক্তকণিকার এমন একটি উপাদান যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে মুখ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে। এই কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়।
থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে লোহিত রক্তকণিকা ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। সহজেই ভেঙে যায়। রক্তপ্রবাহে সুস্থ লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে গিয়ে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা সৃষ্টি হয়। দেহের প্রতিটি কলা-কোশে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোর ফলে দুর্বলতা ও বিভিন্ন রকম অসুস্থতা দেখা যায়।
থ্যালাসেমিয়া রোগীর মৃদু থেকে তীব্র অ্যানিমিয়া হতে পারে। তীব্র বা গুরুতর অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে দেহের বিভিন্ন তন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। অধিকাংশ থ্যালাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রেই রক্ত সঞ্চালনের (Blood Transfusion) প্রয়োজন হয়।
সারা বিশ্বে প্রতিবছর বহু সংখ্যক শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়। বাবা-মায়ের জিন থেকেই যেহেতু এই রোগ সঞ্চারিত হয়, তাই সামান্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলেই এই রোগকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়।
● থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ :
যে কোনো সাধারণ মানুষের শরীরে ৪৬ টি ক্রোমোজোম থাকে। ২৩ টি ক্রোমোজোম বাবার শরীর থেকে এবং ২৩ টি ক্রোমোজোম মায়ের শরীর থেকে আসে। থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ হওয়ায়, একমাত্র বাবা-মায়ের থেকেই সন্তানের দেহে এই রোগ সঞ্চারিত হতে হয়।
বাবা ও মা উভয়েই থ্যালাসেমিয়া বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া (মেজর) হওয়ার সম্ভবনা প্রবল থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সন্তান সাধারণত স্বাভাবিক বা থ্যালাসেমিয়া মাইনর (বাহক) হয়।
থ্যালাসেমিয়া DNA-এর মিউটেশনজনিত একটি রোগ যার ফলে হিমোগ্লোবিন তৈরি ব্যাহত হয়। এই হিমোগ্লোবিন অনু আলফা ও বিটা নামের দুটি শৃঙ্খল দ্বারা গঠিত। থ্যালাসেমিয়া রোগে এই আলফা ও বিটা শৃঙ্খলদুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বিটা থ্যালাসেমিয়া হয়ে থাকে।