জেনোর প্যারাডক্স কি? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
326 বার দেখা হয়েছে
"চিন্তা ও দক্ষতা" বিভাগে করেছেন (14,110 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (14,110 পয়েন্ট)
 
সর্বোত্তম উত্তর
গ্রিক পুরাণের বীর অ্যাকিলিস আজ ঢাল-তরবারি ফেলে খেলার ময়দানে যোগ দিয়েছেন। অনেক হলো যুদ্ধ-বিগ্রহ! এবার সবকিছু ছেড়ে শান্তির পথের পথিক হবেন তিনি। নতুন জীবনের শুরুটা স্মরণীয় করতে এক দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সুঠাম দেহের অধিকারী অ্যাকিলিসকে দৌড়ে হারানো সহজ হবে না। এজন্য প্রয়োজন শক্ত প্রতিপক্ষ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে অ্যাকিলিসের বিরুদ্ধে দৌড় প্রতিযোগিতায় লড়তে হাজির হলো প্রাণীজগতের অন্যতম ধীরগতিসম্পন্ন প্রাণী কচ্ছপ।

সবাই কচ্ছপের সাহস দেখে হাসতে থাকলো। অনেকে ফিসফিস করতে থাকলো, "বোকা খরগোশের সাথে পেরেছো বলে অ্যাকিলিসের সাথে পারবে, এটা কচ্ছপটা ভাবলো কী করে?" কচ্ছপ কারো কথা কানেই তুললো না। সে ভারিক্কি ভঙ্গিকোমর বেঁধে নেমে পড়লো ময়দানে। অ্যাকিলিস সহজ প্রতিপক্ষ পেয়ে যেন আরো উৎসাহী হয়ে উঠলেন। তিনি কচ্ছপকে তুচ্ছ মনে করে শুরুর দাগ থেকে আরো কয়েক মিটার পেছনে থেকে দৌড় শুরু করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। বিচারক নিজেও কচ্ছপের প্রতি সামান্য সহানুভূতি প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন।

কাঙ্ক্ষিত সেই দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। এবার পাঠক আপনারাই বলুন, কে জিতবে এই দৌড়? অ্যাকিলিস নাকি কচ্ছপ? স্বাভাবিকভাবে আমরা বলতে পারি, এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী হবে অ্যাকিলিস। কিন্তু কেউ যদি মনে করেন, এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী হবে কচ্ছপ, তাহলে তাকে স্বাগতম জানাচ্ছি এক নতুন জগতে, যার নাম 'জেনোর প্যারাডক্স' জগত। এই জগতে অ্যাকিলিস যতই চেষ্টা করুক, তিনি কখনোই কচ্ছপকে হারাতে পারবেন না।

জেনোর প্যারাডক্স কী?

জেনোর প্যারাডক্সের প্রবর্তক গ্রিক দার্শনিক জেনো অফ ইলিয়া। আনুমানিক ৪৯০ খ্রিস্টপূর্বে জন্মগ্রহণ করা এই দার্শনিক দক্ষিণ ইতালিতে ইলিয়াতিক স্কুল নামক একটি বুদ্ধিচর্চা কেন্দ্রে অধ্যয়ন করতেন। জেনোর সাথে আমরা পরিচিত হই মহান দার্শনিক প্লেটোর বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে। জেনো তার স্কুলে বিভিন্ন শিষ্যদের সাথে নিজের চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনা করতেন। সেখান থেকে তিনি তার প্যারাডক্সের আজব দুনিয়ার সন্ধান লাভ করেন।

জেনোর প্যারাডক্সগুলো প্রাচীন বিজ্ঞান জগতের সুবিখ্যাত গোলকধাঁধা। আপাতদৃষ্টিতে যা আমাদের নিকট স্বাভাবিক লাগে, সে ধরনের পরিস্থিতিকে বিভিন্ন প্যারাডক্সের ফাঁদে ফেলে জেনো একধরনের নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেন। এই প্যারাডক্সের ধাঁধায় আটকে যায় আমাদের স্বাভাবিক চিন্তাধারা। কারণ, যুক্তি-তর্ক দিয়ে জেনোর প্যারাডক্সগুলো প্রমাণ করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এমনকি জেনোর দশটি প্যারাডক্সের মাঝে অনেকগুলো প্রায় কয়েক শতাব্দী ধরে অমীমাংসিত ছিল। এই সমস্যাগুলোকে গণিতের জগতের নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়, যা প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে টিকে আছে। এই প্যারাডক্সগুলোর মাঝে সবচেয়ে মজার সমস্যাটি সম্ভবত বীর অ্যাকিলিস এবং কচ্ছপের সেই দৌড় প্রতিযোগিতাকে ঘিরে। আর যেহেতু জেনোর প্যারাডক্সের জগতে অনেক কিছু সম্ভব, তাই সেখানে অ্যাকিলিসের চূড়ান্ত পরাজয় হয়েছিল এক কচ্ছপের কাছে।

অ্যাকিলিস বনাম কচ্ছপ

বিচারক আকাশের দিকে বন্দুক তাক করে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তেই অ্যাকিলিস দৌড় শুরু করলেন। কচ্ছপও গুটি গুটি পায়ে এগোনো শুরু করলো। ধরি, আকিলিস যখন দৌড় শুরু করলেন, তখন কচ্ছপের অবস্থান ছিল 'x'। অ্যাকিলিস দৌড়ে 'x' অবস্থানে পৌঁছে গেলেন। কিন্তু ততক্ষণে কচ্ছপটি সামান্য এগিয়ে নতুন অবস্থান 'y' তে পৌঁছে গেছে। তাই অ্যাকিলিস আবার দৌড়ে 'y' পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন। কিন্তু ততক্ষণে কচ্ছপটা সামান্য এগিয়ে আরেক নতুন অবস্থান 'z'-এ পৌঁছে যাবে।

চটে গেলেন অ্যাকিলিস। কিন্তু কিছু করার নেই। তাই তিনি পুনরায় 'z' পর্যন্ত দৌড়ে গেলেন। কিন্তু কী বিপদ! কচ্ছপটা যে তখন আরেক নতুন অবস্থানে এগিয়ে গেলো। এভাবে অ্যাকিলিস যতবারই চেষ্টা করছেন কচ্ছপের অবস্থানে পৌঁছে কচ্ছপকে ধরার, ততবারই কচ্ছপটি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। যেন পেছন থেকে দৌড় দেয়ার পুরো বুদ্ধিটাই সকল নষ্টের মূল। আর সবাই অবাক হয়ে দেখলো, অ্যাকিলিস কচ্ছপটিকে ধরতেই পারছেন না। তাই অ্যাকিলিস কচ্ছপের পেছনে পড়ে রইলেন।


জেনোর ফাঁকি

জেনো একটি নতুন জগতের কল্পনায় বিভোর ছিলেন। এই অদ্ভুত জেনোর জগতে অবস্থান এবং দূরত্বকে অসীম ভাগে বিভাজিত করা যায়। যেন পুরো দৌড়ের ময়দানকে জেনো তার কল্পনায় কোটি কোটি বার ভাগ করে ফেলেছেন। সেখানে বেচারা অ্যাকিলিস এক প্রাণান্তকর দৌড়ে বার বার পিছিয়ে পড়ছেন মন্থরগতির কচ্ছপ থেকে।

জেনোর এই বিভাজনের কোনো শেষ নেই। এমনকি ময়দানের দূরত্বকে এরূপ অসীম ভাগে বিভাজিত করার ফলে জেনোর প্যারাডক্সে সময়ও ধীর হয়ে পড়েছে। যার ফলে অ্যাকিলিস কখনোই এগিয়ে যেতে পারছেন না। ঠিক এখানেই জেনোর ফাঁকি কাজ করছে। কারণ, আমরা জানি দূরত্বকে এভাবে বিভাজিত করে ধীর করা সম্ভব নয়। তাই জেনোর প্যারাডক্সের শক্তিশালী দুর্গের এই দুর্বলতা পুরো ধাঁধার ভিতকে ভেঙে দিয়েছে।

জেনোর জগতে দূরত্বকে বিভাজিত করে ধীর করা হয়।

তাই যদিও অ্যাকিলিসের কচ্ছপকে অতিক্রম করতে হলে একটি নির্দিষ্ট দুরত্ব প্রয়োজন ছিল, কিন্তু দুরত্বকে অসীম ভাগে বিভক্ত করার ফলে তিনি কখনোই সেই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দৌড়াতে পারবেন না। এই অদ্ভুত ধারণার ফলেই জেনোর প্যারাডক্সে আমাদের মনে হয়েছিলো কচ্ছপটিকে ধরা একদম অসম্ভব! কিন্তু জেনোর যুক্তি ভুল ছিল। কারণ, একটি নির্দিষ্ট দুরত্বকে অসীম ভাগে বিভক্ত করার পরেও এর যোগফল সেই দুরত্বের সমানই হবে, যা প্যারাডক্সে আপাতদৃষ্টিতে অসীম মনে হয়।

সূত্র:Quora

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+5 টি ভোট
1 উত্তর 256 বার দেখা হয়েছে
+17 টি ভোট
4 টি উত্তর 5,613 বার দেখা হয়েছে
09 মে 2020 "তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Admin (71,000 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 187 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 278 বার দেখা হয়েছে
12 মার্চ 2022 "তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Sadman Sakib. (33,350 পয়েন্ট)

10,729 টি প্রশ্ন

18,374 টি উত্তর

4,731 টি মন্তব্য

243,453 জন সদস্য

38 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 37 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. তানভীর রহমান ইমন

    160 পয়েন্ট

  2. Aditto Roy

    110 পয়েন্ট

  3. akramul5556

    110 পয়েন্ট

  4. amir

    110 পয়েন্ট

  5. TyreeCarter

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য প্রাণী বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া গরম শীতকাল কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক শব্দ ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম হরমোন বিড়াল কান্না
...